• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

কেমন হয় খ্রিস্টানদের রোজা? 

এ্যাডলিন শ্রেয়া গমেজ

প্রকাশিত: ১৮:৩০, ২৭ মার্চ ২০২৫

ফন্ট সাইজ
কেমন হয় খ্রিস্টানদের রোজা? 

পবিত্র রমজান মাসের প্রায় শেষ সময়। মুসলিমদের সিয়াম সাধনার মাস। এবার রমজান মাস চলাকালীন খ্রিস্টানদের তপস্যাকালও চলছে। অর্থাৎ, খ্রিস্টানদের রোজা। মুসলিমদের মতো খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরাও উপবাস বা রোজা রেখে থাকেন। অনেকে হয়তো এই বিষয়ে অবগত নয়। আবার অনেকে জেনে থাকলেও খ্রিস্টানরা কতদিন উপবাস রাখে, কেন রাখে, উপবাস রাখার নিয়মই বা কি, মুসলিমদের রোজার সাথে খ্রিস্টানদের উপবাসের পার্থক্য কি এরকম হাজারো প্রশ্ন তাদের মনে ঘুরপাক খায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক খ্রিস্টানদের উপবাস নিয়ে কিছু তথ্য। 

খ্রিস্টানদের উপবাসের সময়কে তপস্যাকাল বা প্রায়শ্চিত্তকাল বলা হয়ে থাকে। ইংরেজিতে বলা হয়, Lent. এই তপস্যাকালের স্থায়িত্ব ৪০ দিন। অর্থাৎ খ্রিস্টানরা ৪০ দিন উপবাস বা রোজা রেখে থাকেন। তপস্যাকাল ৪০ দিন হওয়ার পেছনে যে কারণ তা বাইবেলের নতুন নিয়মে উল্লেখ আছে। যিশু খ্রিস্ট তার জীবনের ৩০ বছর কোনো বানী প্রচার করেননি। মৃত্যুর আগের ৩ বছর তিনি বানী প্রচার করেছেন। বাইবেলের সাধু মথি লিখিত মঙ্গলসমাচার অনুযায়ী, যিশু খ্রিস্টকে মরুভূমিতে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। যিশু খ্রিস্ট মরুভূমিতে ৪০ দিন ও ৪০ রাত উপবাস রেখে প্রার্থনা করে কাটান। এরপর তিনি ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লে শয়তান তাকে প্রলোভনে ফেলার চেষ্টা করে। এইজন্য মূলত ৪০ দিন উপবাস রাখা হয়ে থাকে।

তপস্যাকাল শুরু হয়, ভস্ম বুধবারের মাধ্যমে। এদিন খ্রিস্টানরা কপালে ছাই মাখে। ভস্ম বুধবারে বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, মানুষ ধূলা দিয়ে তৈরি আবার সেই ধূলাতেই সে ফিরে যাবে। চলতি বছর মার্চের ৫ তারিখে কপালে ছাই মেখে শুরু হয়েছে খ্রিস্টানদের তপস্যাকাল।

তপস্যাকাল বা উপবাসকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়কে খ্রিস্টমণ্ডলীর বসন্তকালও বলা হয়ে থাকে। এখন হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে উপবাসের সাথে বসন্তকালের কী সম্পর্ক? বসন্তকাল বলার কারণ হলো, এই সময় খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা তাদের পাপের কথা স্মরণ করেন, পাপের জন্য অনুশোচনা করেন, পাপ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি প্রার্থনা করা, আত্মত্যাগ করা, মানুষকে সহায়তা করা, ভালোবাসা ও ক্ষমা করার মাধ্যমে ঈশ্বরের আরও কাছে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় বলেই একে বসন্তকাল বলা হয়ে থাকে। তপস্যাকালে না খেয়ে থাকার চেয়েও আত্মশুদ্ধির বিষয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়।  

বাংলাদেশের খ্রিস্টানরা রাত ১২টার আগে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে উপবাস রাখেন। পরদিন দুপুর ১২টায় উপবাস ভাঙা হয়ে থাকে। আবার অনেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো, পবিত্র বাইবেল অনুযায়ী, ক্রুশে যিশু খ্রিস্টের মৃত্যু দুপুর ৩টার দিকে হয়েছিলো। এই বিষয়কে স্মরণ করে অনেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত উপবাস রেখে থাকেন। 

উপবাসে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রেও মানতে হয় বিশেষ কিছু নিয়ম। যেমন, উপবাস রাখতে হলে দিনের মধ্যে একবেলা পরিপূর্ণভাবে খাওয়া যাবে। বাকি সময় হালকা খাবার খেতে হবে। তবে উপবাস রাখাকালীন কিছু খাওয়া যাবে না। আবার নিরামিষ আহারেরও নির্দেশনা রয়েছে। উপবাসকালে শুক্রবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন গির্জা যাওয়ার পাশাপাশি নিরামিষ আহার বাধ্যতামূলক।          

উপবাস রাখার ক্ষেত্রে যিশু খ্রিস্ট নিজে বেশ কিছু নিয়ম বলে দিয়ে গেছেন। পবিত্র বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে, যিশু খ্রিস্ট বলেছেন, যারা উপবাস রাখবে তারা যেন ভণ্ডদের মতো বিষণ্ণ ভাব না দেখায়। ভণ্ডরা লোক দেখানোর জন্যই মুখ শুকনো করে রাখে। যে কেউ উপবাস রাখবে তারা যেন চোখে-মুখে পানি দেয়, মাথায় তেল মাখে। সে যে উপবাস করছে তা যেন কেউ বুঝতে না পারে। অর্থাৎ, কোনোভাবেই লোকদেখানো উপবাস করা যাবে না। উপবাস রাখলে তা যেন শুধুমাত্র ঈশ্বর জানতে পারেন, যিনি আড়ালে থাকেন।    

মুসলিমরা যেমন ৩০ দিন রোজা রাখার পর ঈদ পালন করেন তেমনি খ্রিস্টানরা পালন করেন ইস্টার সানডে। যিশু খ্রিস্ট মানুষের পাপের ভার নিজের কাঁধে নিয়ে ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেন। এর তিন দিন পর তিনি মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থান করেন। মূলত এই ঘটনাকে স্মরণ করেই পালিত হয় ইস্টার।

বিভি/এসজি

মন্তব্য করুন: