• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘যে যেমন তার জীবনসঙ্গী হবে তেমন’ এটি কুরআনের কোথাও নেই

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ২৭ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ২২:১৫, ২৭ আগস্ট ২০২২

ফন্ট সাইজ
‘যে যেমন তার জীবনসঙ্গী হবে তেমন’ এটি কুরআনের কোথাও নেই

আমাদের সমাজে একটা কথা প্রচলিত- একজন মানুষ যেমন তার জীবনসঙ্গীও হবে তেমন। কিন্তু আদতে ইসলামী শরিয়তে এ কথার কোনো ভিত্তি নেই। পবিত্র কুরআনে সূরা নূর এর ২৬ নং আয়াতের ব্যাখায় অনেকে এরকম বলেও থাকেন। অথচ এই কথা সূরা নূরের ২৬ নং আয়াতে বলা হয়নি।

আরও পড়ুন:  যেসব নারীকে বিয়ে করা ইসলামে নিষিদ্ধ

চলুন দেখে নেওয়া যাক- সূরা নূরের ২৬ নং আয়াতে কী আছে? 

الْخَبِيثَاتُ لِلْخَبِيثِينَ وَالْخَبِيثُونَ لِلْخَبِيثَاتِ ۖ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِينَ وَالطَّيِّبُونَ لِلطَّيِّبَاتِ ۚ أُولَٰئِكَ مُبَرَّءُونَ مِمَّا يَقُولُونَ ۖ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ

বাংলা অর্থ: আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য। লোকেরা যা বলে তার সাথে তারা সম্পর্কহীন; তাদের জন্য আছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা নূর আয়াত ২৬)

মুফতি তাকি উসমানী এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, মূলনীতি বলে দেওয়া হল যে, পবিত্র ও চরিত্রবতী নারী পবিত্র ও চরিত্রবান পুরুষেরই উপযুক্ত। এর ভেতর দিয়ে এই ইশারাও করে দেওয়া হল যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ পবিত্রতা ও আখলাক-চরিত্রের সর্বোচ্চ মার্গে অবস্থিত। কেননা বিশ্বজগতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা বেশি পূত চরিত্রের অধিকারী আর কে হতে পারে? কাজেই এটা কখনও সম্ভবই নয় যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর স্ত্রী হিসেবে এমন কাউকে মনোনীত করবেন যার চরিত্র পবিত্র ও নিষ্কলুষ নয় (নাউযুবিল্লাহ)। কেউ যদি এতটুকু বিষয় চিন্তা করত তবে তার কাছে মুনাফিকদের দেওয়া অপবাদের স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে যেত।

এ আয়াতে এটা পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য, অর্থাৎ দুশ্চরিত্রা নারী কেবল দুশ্চরিত্র পুরুষের সাথে মানাই, কোনো ঈমানদারের সাথে না। ঠিক তেমনি দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য অর্থাৎ দুশ্চরিত্র পুরুষ কেবল দুশ্চরিত্রা নারীর সাথে মানাই কোনো ঈমানদার নারীর সাথে না। 

আরও পড়ুন:  জেনে নিন স্ত্রী সহবাসের দোয়া ও বেশ কিছু নিয়ম

আবার লক্ষ্য করে দেখবেন একই সূরার ৩ নং আয়াতে, الزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَا إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ ۚ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ

বাংলা অর্থ: যে, ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা অংশীবাদিনীকেই বিবাহ করবে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা অংশীবাদীই বিবাহ করবে। আর মুমিনদের জন্য এটা হারাম করা হয়েছে। (সূরা নূর আয়াত ৩)

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানীতে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বিবাহের জন্য ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণীকে পছন্দ করা মুমিনদের জন্য হারাম। জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গিনী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের উচিত চারিত্রিক পবিত্রতাকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখা। এটা ভিন্ন কথা যে, কেউ কোন ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করে ফেললে তার সে বিবাহকে বাতিল করা হবে না এবং বিবাহজনিত সমস্ত বিধান ও দায়-দায়িত্ব সেক্ষেত্রে কার্যকর হবে। কিন্তু সে কেন ভুল নির্বাচন করল, সেজন্য অবশ্যই গুনাহগার হবে।

এখন কথা হলো- আমরা আমাদের মতো কুরআন বুঝলে চলবে না। বরং আল্লাহ কি বলতে চেয়েছেন তা বুঝতে হবে। এখানে আমরা বলে ফেলি যার চরিত্র যেমন তার সঙ্গী হবে তেমন। কিন্তু সূরা নূরের ২৬ নং আয়াত দ্বারা কি উদ্দেশ্য তা পরিষ্কার হয়ে গেলো অন্য আয়াত দ্বারা।

সূরা নূরের ২৬ নং আয়াতটা নাজিল হয় হযরত আয়েশা (রাঃ) এর চরিত্রের সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য। মুনাফিকরা যখন আয়েশা (রাঃ) কে মিথ্যা অপবাদ দিল তখন আল্লাহ তা’আলা উক্ত অভিযোগ থেকে মুক্ত করার জন্য এ আয়াতটি নাযিল করেন। আর সবাইকে জানিয়ে দিলেন যে, অপবিত্র ও নোংরা কথাবার্তা সেই সকল নর-নারী বলে থাকে, যারা অপবিত্র ও নোংরা। আর পবিত্র ও উত্তম কথাবার্তা বলা পবিত্র ও উত্তম নর-নারীর গুণাবলী এবং তা তাদের অভ্যাস।

আরও পড়ুন:  যুগে যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানে নারী সাহাবিদের অবদান 

এক্ষেত্রে ইসলামের ইতিহাসের দুটি ঘটনা আরও বেশি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। যেমন প্রথমটি হলো হযরত আছিয়া (আ.) যিনি মিশরের শাসক ফেরাউনের স্ত্রী। ফেরাউন জাহান্নামী এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। অন্যদিক হযরত আছিয়া (আ.) একজন জান্নাতী রমণী।

এছাড়া হযরত নূহু (আ.) ও হযরত লুত (আ.) ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত নবী। কিন্তু এ দুজন নবী হওয়া সত্ত্বেও তাদের স্ত্রীরা ঈমান আনেনি এবং জাহান্নামী হয়েছেন।

এদুটি ঘটনার উদহারণে বোঝা যায়, যে ব্যক্তি যেমন, তার জীবনসঙ্গী তেমন হবে না। তাই যদি হতো তাহলে আছিয়া (আ.) ফেরাউনের স্ত্রী হতেন না।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: