• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চন্দ্রগ্রহণের সময় মহানবী (সা.) যে আমলের নির্দেশনা দিয়েছেন

প্রকাশিত: ২১:৩২, ৫ মে ২০২৩

আপডেট: ২১:৫২, ৫ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ
চন্দ্রগ্রহণের সময় মহানবী (সা.) যে আমলের নির্দেশনা দিয়েছেন

চলতি বছরের প্রথম চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ১২ মিনিটে চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়েছে। এটি গভীর রাত ১টা ৩৩ মিনিটে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বৈশাখ মাসের এই চন্দ্রগ্রহণকে বৈশাখ পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমাও বলা হয়। তবে এই চন্দ্রগ্রহণ বাংলাদেশ থেকে দেখা যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। 

আরবিতে চন্দ্রগ্রহণকে ‘খুসুফ’ বলা হয়। গ্রহণ লাগলে সূর্য যেমন অন্ধকার ছায়ার আবর্তে পতিত হয়ে অন্ধকার হয়ে যায়, তেমনি চন্দ্রও বছরে দুইবার স্বীয় কক্ষপথে পরিভ্রমণরত অবস্থায় অন্ধকারের ছায়ায় আচ্ছাদিত হয়ে থাকে। ইহার আংশিক রূপ কখনো দৃশ্যমান হয়। আবার কখনো সার্বিক রূপ পরিদৃষ্ট হয়। চন্দ্রের এ কালো রঙ বা অন্ধকারের হাতছানিকেই চন্দ্রগ্রহণরূপে আখ্যায়িত করা হয়।

কুরআনে আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَإِذَا بَرِقَ الْبَصَرُ - وَخَسَفَ الْقَمَرُ - وَجُمِعَ الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ

‘যখন দৃষ্টি চমকে যাবে। চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে। এবং সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে।’ (সুরা কিয়ামাহ : আয়াত ৭-৯)

উল্লেখিত আয়াতে ‘চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে পড়া’র বাস্তব রূপই হচ্ছে চন্দ্রগ্রহণ।

আরও পড়ুন: 

চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে নবিজী সা.-এর নির্দেশনা

জাহেলি যুগে চন্দ্রগ্রহণ কিংবা সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা ছিল। তারা মনে করত দুনিয়ায় বড় বড় ব্যক্তিত্বের অধিকারী লোকদের কোনো অঘটন ঘটলে এসব হয়। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছেলে ইবরাহিম-এর মৃত্যুর দিনে সুর্যগ্রহণ হয়। তখন সাহাবায়ে কেরাম তা বলাবললি করছিল। তা শুনে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্ট বর্ণনা দেন। হাদিসে এসেছে-

> হজরত মুগিরা ইবনে শুবা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آياتِ اللهِ، لاَ يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذلِكَ فَادْعُوا اللهَ وَكَبِّرُوا وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا

‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন-
১. তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে।
২. তাঁর মহত্ব ঘোষণা করবে আর
৩. নামাজ আদায় করবে এবং
৪. সাদকা প্রদান করবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

> হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ مِنْ آيَاتِ اللهِ، وَإِنَّهُمَا لَا يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ، وَلَا لِحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمَا فَكَبِّرُوا، وَادْعُوا اللهَ وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا،
‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর কুদর (ক্ষমতার) বিশেষ নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ হয় না। অতঃপর যখন তোমরা চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ দেখতে পাও, তখন-
১. তাকবির (اَللهُ اَكْبَر) বল;
২. আল্লাহর কাছে দোয়া কর;
৩. নামাজ আদায় কর এবং
৪. দান-সদকা কর।’ (মুসলিম)

হাদিসের নির্দেশনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, চন্দ্র ও সূর্য মহান আল্লাহ তাআলার নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। আর তাতে গ্রহণ লাগা আল্লাহ তাআলার হুকুমেই হয়। তাদের নিজস্ব কোনো শক্তি বা ক্ষমতা নেই। আল্লাহ তাআলার হুকুমের অধীনেই তাদের চলাচল এবং কার্যক্রম।

তাতে গ্রহণ লাগলে মুমিন মুসলমানের করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং চন্দ্রগ্রহণের এ সময়ে বেশি বেশি দোয়া করা, তাসবিহ পড়া, তাওবাহ-ইসতেগফার করা, নামাজ পড়া এবং দান-সাদকার আবশ্যক কর্তব্য।

এ সময় অযথা অনর্থক গল্প-গুজব, হাসি-তামাশায় সময় অতিবাহিত না করে অন্তরে মহান আল্লাহর প্রতি ভয় রাখা জরুরি। কেননা এসবই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য সতর্কতা। অনেক হাদিসে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণকে বিশেষ বিপদের সময় বা ক্রান্তিকাল বলে গণ্য করা হয়েছে।

চন্দ্রগ্রহণের নামাজ

হাদিসে সূর্যগ্রহণের নামাজের মতো চন্দ্রগ্রহণের নামাজও প্রমাণিত এবং সুন্নাত। তবে এ নামাজ জামাআতে ও একাকি পড়া নিয়ে মতভেদ রয়েছে। হানাফি অনুসারীরা এ নামাজ একাকি নিজ নিজ ঘরে পড়ার ওপর তাগিদ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে ফিকহের বিখ্যাত গ্রন্থ বাদায়েউস সানাঈ-তে এসেছে-

ﺃَﻣَّﺎ ﻓِﻲ ﺧُﺴُﻮﻑِ ﺍﻟْﻘَﻤَﺮِ ﻓَﻴُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻓِﻲ ﻣَﻨَﺎﺯِﻟِﻬِﻢْ؛ ﻟِﺄَﻥَّ ﺍﻟﺴُّﻨَّﺔَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﻥْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﺍ ﻭُﺣْﺪَﺍﻧًﺎ

‘চন্দ্রগ্রহণের সময় ঘরে নামাজ আদায় করা হবে। কেননা সুন্নাহ হচ্ছে, তখন একাকি নামাজ পড়া।’ (বাদায়েউস সানাঈ : ১/২৮২)

সূত্র: আওয়ার ইসলাম

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: