• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

মসজিদে নববীর একটি জানালা বন্ধ হয়নি কখনো!

প্রকাশিত: ১০:৪০, ২৭ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ
মসজিদে নববীর একটি জানালা বন্ধ হয়নি কখনো!

মদিনার প্রাণকেন্দ্র 'মসজিদে নববী। এখানে সবুজ গম্বুজের নিচে শায়িত দো-জাহানের মহান নেতা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স.)। নবীজির জীবদ্দশা এবং খোলাফায়ে রাশেদিনের সময়কাল পর্যন্ত মসজিদে নববীই ছিল তৎকালীন মুসলমানদের মূলকেন্দ্র। এখান থেকেই পরিচালিত হয়েছে মুসলিম বিশ্ব। ইতিহাস-ঐতিহ্য, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা সবদিক থেকেই মুসলমানদের কাছে মসজিদে নববীর গুরুত্ব অপরিসীম।

এ সবের পাশাপাশি মসজিদে নববীর মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করেছে রিয়াজুল জান্নাহ বা জান্নাতের অংশ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আমার ঘর (বর্তমান দাফনের স্থান) ও মিম্বরের মাঝের জায়গা জান্নাতের বাগানগুলোর একটি আর আমার মিম্বর আমার হাউজের ওপর অবস্থিত। (বুখারি:১১৯৬, ১১২০; মুসলিম: ২৪৬৩)।

মদিনায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র রওজা শরিফের সামনে দাঁড়িয়ে রাসুলকে (সা.) সবাই সালাম নিবেদন করেন। এ জন্য মসজিদের পশ্চিম দিক থেকে প্রবেশ করে পূর্ব দিক দিয়ে বের হতে হয়। মদিনার ইতিহাস গবেষক ড. ফুয়াদ জাইফুল্লাহ মাগামাসি বলেন, রাসুল (সা.)-এর স্ত্রীদের ঘর বা কামরাগুলো রওজা শরিফের পশ্চিমে অবস্থিত। এর মধ্যে কিবলার দিকে অর্থাৎ মসজিদে নববীর দক্ষিণ দিকে আছে উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.)-এর ঘর।
 
এরপর উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর ঘর। উভয় ঘরের মাঝখানে ছিল একটি সংকীর্ণ পথ। তা দিয়ে সহজে চলাফেরা করা যেত না। বর্তমানে রওজার জিয়ারতকারীরা হাফসা (রা.)-এর ঘরের এক অংশে দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করতেন।
 
রওজার ঠিক দক্ষিণ পাশের দেয়ালে একটি জানালা খোলা রয়েছে। জানা যায়, জানালাটি দীর্ঘ ১৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে খোলা রাখা হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে ভালোবাসার ইতিহাস। ১৭ হিজরিতে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) মসজিদ-ই-নববী সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন। যেন মুসল্লিদের মসজিদ ও রওজা শরিফে আসা-যাওয়ার পথে কোনো সমস্যা না হয়। কিন্তু সম্প্রসারণের সময় রওজার দক্ষিণ পাশে উম্মুল মুমিনিন হাফসা বিনতে ওমর (রা.)-এর ঘর ভাঙার প্রয়োজন দেখা দেয়।
 
ওমর (রা.) ভাবছিলেন, তিনি কীভাবে বিষয়টি হাফসা (রা.)-এর কাছে তুলে ধরবেন? কারণ তার মেয়ে তো প্রিয় নবীকে হারিয়ে এখন কেবল রওজার পাশে থেকে অতীতের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে আছেন। একদিন ওমর (রা.) হাফসা (রা.)-এর কাছে সেই ঘর ছেড়ে দেয়ার কথা বলেন এবং মদিনায় সবচেয়ে প্রশস্ত বাড়ির আশ্বাস দেন। এ কথা শুনে হাফসা (রা.) প্রচণ্ড কান্না শুরু করেন এবং ঘর ছাড়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
 
বাস্তবেই কেউ এমন স্মৃতিবিজড়িত স্থান ছাড়তে চাইবে না। দুদিন পর ওমর (রা.) আবার বিষয়টি তুলে ধরলে হাফসা (রা.) এবারও কেঁদে ফেলেন এবং শক্তভাবে নাকচ করে দেন। তাই অন্যরাও তার কাছে বিষয়টি তুলে ধরার সাহস করেননি।
 
এর কিছুদিন পর ওমর (রা.) তার পুত্র আবদুল্লাহ বিন ওমরকে (রা.) নিয়ে হাফসা (রা.)-এর কাছে যান। তখন আবদুল্লাহ (রা.) তার বোনকে এ ঘর ছাড়ার বিনিময়ে নিজ বাড়ি দেয়ার প্রস্তাব দেন। তার বাড়িটি হাফসার ঘরের পাশেই ছিল। সেখান থেকে রওজা শরিফ সরাসরি দেখা যেত। তখন হাফসা (রা.) একটি শর্তে সেই বাড়িতে যেতে রাজি হন। তা হলো সেই বাড়ি থেকে একটি জানালা খুলে দিতে হবে, যা দিয়ে প্রিয় নবী (সা.)-এর রওজা দেখা যাবে এবং তা কখনো বন্ধ করা যাবে না। ওমর (রা.) তাকে প্রতিশ্রুতি দেন এবং তার আকাঙ্ক্ষা মতে একটি জানালা খুলে দেন। এরপর যুগে যুগে মসজিদে নববী অনেক বার সম্প্রসারিত হলেও সেই জানালা খোলা অবস্থায় অক্ষত রাখা হয়েছে। এভাবে প্রায় দেড় হাজার বছর অতিবাহিত হয়।
 
ইসলামী ইতিহাসের গ্রন্থগুলোতে জানালাটি খাওখা নামে পরিচিত। ইমাম সুয়ুতি (রহ.)-এর মতে, এর নাম খাওখাতু ওমর ইবনুল খাত্তাব এবং ইবনে কাসির (রহ.)-এর মতে, এর নাম খাওখাতু আলে ওমর। তা ছাড়া কিছু বর্ণনা মতে, হাফসা (রা.)-কে উসমান বিন আফফান (রা.) অন্য বর্ণনা মতে ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) জানালা খোলা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে ইমাম সুয়ুতি তাঁর তারিখুল খুলাফা গ্রন্থে ওমর (রা.)-এর বিষয়টি বেশি নির্ভরযোগ্য বলে উল্লেখ করেন।
 
সূত্র : উকাজ ও আল-রিয়াদ ডটকম

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন: