• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

মাসে একদিন ঢাকায় প্রাইভেট পরিবহন নিষিদ্ধের পরামর্শ আইপিডি’র

প্রকাশিত: ১৮:৫৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
মাসে একদিন ঢাকায় প্রাইভেট পরিবহন নিষিদ্ধের পরামর্শ আইপিডি’র

ঢাকার পরিবহন ও যাতায়াত  ব্যবস্থায় উদ্বেগজনক হারে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনি নগর এলাকায় পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থায় গণ পরিবহন ব্যবহারকারী ও পথচারীদের যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। টেকসই পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করবার প্র‍য়াস সারা বিশ্বজুড়ে বেগবান হলেও বাংলাদেশে এই প্রয়াস সীমিত। প্রতি মাসের প্রথম রবিবার অন্তত সকল ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ রাখতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই পরামর্শ দেওয়া হয়। সংগঠনের পক্ষে এই বিবৃতি পাঠান আইপিডির নির্বাহী পরিচালক  অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। 

বিবৃতিতে বলা হয়, নাগরিকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে বরং সাইকেল, হাঁটা বা গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে প্রতি বছর ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। ২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়, যেখানে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) মুখ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে এসেছে।  কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বিশ্বের অন্যতম যানজটপ্রবণ ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারিভাবে এই দিবসটি পালনের তেমন কোন উদ্যোগ এই বছর নেয়া হয়নি। বাংলাদেশে এই দিবসটি পালনের প্রায় দেড় যুগ পার হতে চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ও ফলপ্রসূ পরিকল্পনা ও নীতির বাস্তবায়ন এখনো দেখা যাচ্ছে না। 

বিবৃতিতে ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে লন্ডন, নিউইয়র্ক, প্যারিস,কোপেনহেগেন, সিংগাপুরসহ বিশ্বের অনেক উন্নত নগরসমূহ শহরের বাসযোগ্যতা বাড়াতে কার ফ্রি স্ট্রীট,  কার ফ্রি স্কুল জোন, যানজট ফি, কার রেজিষ্ট্রেশন নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক নীতিমালা, উচ্চমূল্যের পার্কিং ফি আরোপের পাশাপাশি গণপরিবহনে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ ও মানোন্নয়ন করেছে। এসব শহর ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা সুনির্দিষ্টকিরণ ও কমিয়ে আনবার ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সুফল পেয়েছে।  এর বিপরীতে আমাদের ঢাকা শহর কি পরিমাণ ব্যক্তিগত গাড়ি ধারণ করতে পারবে, সেই বিষয়ে বিআরটিএ, ডিটিসিএ, ট্রাফিক বিভাগ, রাজউক ও সিটি করপোরেশনের তেমন কোন বিশ্লেষণ ও সমীক্ষা নেই। ঢাকা শহরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন দিয়ে চলছে বিআরটিএ। নগর পরিকল্পনা ও পরিবহন পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় নেই, কর্তৃপক্ষসমূহের মধ্যে ও নেই কার্যক্রমের সমন্বয়।  ফলে নগরে গাড়ির চাপ বাড়ছে, মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে যানজট।  এমনকি উড়ালসড়কেও ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, চলমান অর্থনৈতিক সংকটে সরকার বিভিন্ন খাতে কৃচ্ছ্রসাধনের ঘোষণা দিলেও সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের জন্য বিলাসবহুল ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয় ও ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। অনুরূপভাবে কার লোনসহ বেসরকারি পর্যায়েও ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়ে বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। ঢাকা শহরে লক্কর ঝক্কর বাস আর গণপরিবহনের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের যাপিত জীবনের দু:খকষ্টকে ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়া নীতিনির্ধারকগিণ উপলব্ধিই করতে পারেন না। 

ঢাকা শহরে মানসম্মত গণপরিবহন নেই দাবি করে আইপিডির বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মেট্রোরেল এর একটি লাইন আংশিক চালু হলেও ঢাকার যোগাযোগ চাহিদার খুবই অল্প পরিমাণ লোককে ধারণ করতে পারছে এই লাইন। ঢাকার বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প শম্ভুক গতিতে চলছে। উন্নত বাস সার্ভিস ও পদচারীবান্ধব শহর গড়তে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ খুবই স্বল্প। বিপরীতে ব্যক্তিগত গাড়িকে উৎসাহিত করে এমন ফ্লাইওভার ও অন্যান্য মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগে রাষ্ট্রের আগ্রহ অত্যন্ত বেশী। ঢাকা-চট্টগ্রাম ব্যতীত অন্যান্য শহরগুলোতে সিটি বাস সার্ভিসের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, তেমন কোন পরিকল্পনাও নেই নগরবাসীর জন্য মানসম্মত গণপরিবহন তৈরিতে। 

রাজধানীজুড়ে একের পর এক উড়ালসড়ক হয়েছে। কিন্তু যানজট কমাতে পারেনি কোনোটিই। সদ্য আংশিক চালু হওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও যানজট কমাতে পারেনি; বরং কিছু জায়গায় বেড়েছে। জনগণের টাকায় এক্সপ্রেসওয়ে হলেও বড় অংশই তা ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে না। ধনী-গরিবের মধ্যে যে বৈষম্য, তা এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে আরও দৃশ্যমান করেছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান। 

তিনি বলেন, জনগণের দাবির কারণে এক্সপ্রেসওয়েতে বিআরটিসির কয়েকটি বাস চালু করা হয়েছে - বিষয়টি ইতিবাচক। তবে এক্সপ্রেসওয়েতে বাস সার্ভিস কিভাবে বাড়ানো যায় তা এখন থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। বর্তমানে গণপরিবহনে যাতায়াতে বেশি সময় লাগে আর ব্যক্তিগত পরিবহনে কম সময় লাগে। এটা ঠিক করতে না পারলে ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়তে থাকবে। এতে রাজধানীতে যানজটও বাড়তে থাকবে। 

ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসকে সামনে রেখে বেশ কিছু দাবিও তুলে ধরে আইপিডি। সেগুলো হলো- প্রতি মাসের প্রথম রবিবার সকল ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করবার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। এর মাধ্যমে মন্ত্রী-আমলাসহ নীতিনির্ধারকদের গণপরিবহন ব্যবহার ও পায়ে হেঁটে চলবার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষেরা যে ধরনের অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন, তা উপলব্ধি করবার সুযোগ দেয়া প্রয়োজন। এর ফলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরের যানজট কমানোর সম্ভাবনা অনুধাবন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি গণপরিবহন ও পায়ে হেঁটে চলাচলের সুযোগ সুবিধায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন নীতিনির্ধারকেরা। 

নগর এলাকায় কার ফ্রি স্ট্রীট, কার ফ্রি স্কুল জোন, পার্কিং নীতিমালা, মানসম্মত বাস সার্ভিস, স্কুল বাস সহ বিশেষায়িত বাস সার্ভিস, মানসম্মত ফুটপাত তৈরি প্রভৃতি পরিকল্পনা কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি কমানোর মাধ্যমে টেকসই পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব দাবি করে, ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসকে সামনে রেখে ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য না দিয়ে গণমুখী পরিবহন ব্যবস্থা সাজানোর উন্নয়ন দর্শন গ্রহণ করবার জন্য রাষ্ট্র ও সরকারকে আহবান জানায় আইপিডি। 

বিভি/কেএস

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2