• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

৫ হাজার ৯৪ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার প্রদান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও গ্রামীণফোনের

প্রকাশিত: ১৫:৪৩, ৯ মে ২০২৫

আপডেট: ১৫:৪৫, ৯ মে ২০২৫

ফন্ট সাইজ
৫ হাজার ৯৪ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার প্রদান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও গ্রামীণফোনের

ছবি: পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও অন্যান্য অতিথিরা

২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা মহানগরের ৭৫টি স্কুলের প্রায় ২০,০০০ শিক্ষার্থী বইপড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে। এসব স্কুলের ৫ হাজার ৯৪ জন শিক্ষার্থী মূল্যায়নপর্বে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে বিজয়ী হয়েছে। বিজয়ী শিক্ষার্থীদের ১১৫৭ জন ছাত্র  ও ৩৯৩৭ জন ছাত্রী। 

তাদেরকে পুরস্কার প্রদানের জন্য আজ (৯ মে) ও আগামীকাল (১০ মে) রাজধানীস্থ বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে গ্রামীণফোন লিমিটেডের সহযোগিতায় একটি বর্ণাঢ্য পুরস্কার বিতরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়।  দু‘দিনব্যাপী এই পুরস্কার বিতরণ উৎসবে আজ ঢাকা মহানগরের ৩১ স্কুলের ২ হাজার ৫৬৩ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্যটাগরিতে সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে এবং আগামীকাল ৩৪টি স্কুলের ২ হাজার ৫৩১ জন  শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্যাটারিতে পুরস্কার গ্রহণ করবে। 

উৎসবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব বদিউল আলম মজুমদার, প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন),জনাব দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, জনাব সিদ্দিক জোবায়ের, সিনিয়র সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনাব তানভীর মোহাম্মদ, চীফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার,গ্রামীণফোন, প্রফেসর মুহাম্মদ আলী নকী, ট্রাস্টি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র,জনাব জুয়েল আইচ, প্রখ্যাত যাদুশিল্পী, বাঁশী বাদক ও চিত্রশিল্পী,  জনাব খায়রুল আলম সবুজ, অভিনেতা ও লেখক এবং জনাব শামীম আল মামুন, পরিচালক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। 

উৎসবের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে দু‘দিনব্যাপী এই পুরস্কার বিতরণ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর সম্মানীত অতিথিগণ বিজয়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। 

সুজনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক জনাব বদিউল আলম মজুমদার শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আজকে যাঁরা এখানে এসেছেন, তাঁরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক জনাব দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বহু কমিশন গঠন করলেও শিক্ষা সংস্কারে কোনো কমিশন করেনি। সরকার শিক্ষা বৈষম্য দূর করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। তাই  সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা কাঠামো তৈরি করবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, পাঠ্য বই মানে চাকরি, বৈষয়িক উন্নতি। এখানে আলো খুঁজে পাওয়া যায় না। কাজেই পাঠ্য বইয়ের বাইরে পৃথিবীর সেরা লেখকরা যা লিখেছেন, সেটা জানতে হবে। সেখানে আনন্দ খুঁজে বের করতে হবে বলে ছাত্রছাত্রীদের বলেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের  সিনিয়র সচিব জনাব সিদ্দিক জোবায়ের পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এ অনুষ্ঠান আমাদের মনের মধ্যে আশার সঞ্চার করে। শিক্ষার্থীদের বই পড়ার এ প্রতিযোগিতা আমাদের আরও উজ্জীবিত করে বলে জানান।

উৎসবের স্পন্সর প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার জনাব তানভীর মোহাম্মদ বলেন, তরুণদের জ্ঞানের বিকাশ এবং মানসিক উৎকর্ষতার জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই। তাই আলোকিত মানুষ গড়ার অংশ হিসেবে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র যে বইপড়া কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এমন একটি উদ্যোগের অংশ হতে পেরে আমরাও গর্বিত। তরুণরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাদের মধ্যে যেন মানবিক ও মানসিক উৎকর্ষতার বিকাশ ঘটে, এজন্য গত দুই দশক ধরে এই মহতী উদ্যোগের পাশে আছে গ্রামীণফোন। বই পড়া কর্মসূচিতে আজকের বিজয়ী শিক্ষার্থীদের জানাই অভিবাদন।

আজকের পাঠককে আগামীকালের নেতা বলে উল্লেখ করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী নকী। তিনি বলেন, ভালো বই শুধু গল্প বলে না, পাঠকের কথাও শোনে। যাঁরা বই পড়েন, তাঁরা গভীরে অনুভব করতে পারেন। একটি বই মানুষকে ব্যতিক্রম সব অভিজ্ঞতা ও মোহ উপহার দেয়। যাঁরা পকেটে বই নিয়ে ঘোরেন, তাঁরা যেন একটি সাজানো বাগান নিয়ে ঘুরে বেড়ান।


যাদু শিল্পী জনাব জুয়েল আইচ আর্নেস্ট হেমিংওয়ের একটি বিখ্যাত উক্তি উল্লেখ করে বলেন, ‘বইয়ের চাইতে বিশ্বস্ত বন্ধু আর কেউ নেই, কিছু নেই’। তাই ছাত্রছাত্রীদের বেশি বেশি করে বই পড়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি তার বক্তব্যে শেষ করেন।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক জনাব আফসানা বেগম বলেন, এই প্রজন্ম যেই বই পড়তে আনন্দ পায়, সেই বই তাদের হাতে কেউ তুলে দেয় না। বই পাঠককে সর্বোপরি মানুষকে অনেকগুলো বইয়ের কাছে নিয়ে যায়। পড়ার সময় পাঠকের অনেক ইন্দ্রিয় সজাগ থাকে। শিক্ষার্থীরা যতো বেশি ভালো বই পড়বে, ততো বেশি নিজেদের মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে। জীবনবোধ ও মনুষ্যত্ব তৈরিতে বই অনেক বেশি ভূমিকা রাখে। কাজেই বই পড়া জরুরি।

অতিথির বক্তব্য পর্বে শুরুতেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক জনাব শামীম আল মামুন তাঁর স্বাগত বক্তব্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সম্মানীত অতিথিদের অভিনন্দন জানান এবং দু’দিনব্যাপী  উৎসবের এই বিশাল আয়োজন ও পুরস্কারের বই স্পন্সরের জন্য গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।

এই পুরস্কার বিতরণ উৎসবে প্রতিটি স্কুলের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত পুরস্কার, শুভেচ্ছা পুরস্কার, অভিনন্দন পুরস্কার ও সেরাপাঠক পুরস্কার শিরোনামের চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। আজকে দিনব্যাপী ঢাকা মহাগরের ৩১টি স্কুলের ২ হাজার ৫৬৩ জন ছাত্রছাত্রীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীতে স্বাগত পুরস্কার পেয়েছে ১৫৪৫ জন, শুভেচ্ছা পুরস্কার পেয়েছে ৮২৬ জন, অভিনন্দন পুরস্কার পেয়েছে ১৪৭ জন এবং সেরাপাঠক পুরস্কার পেয়েছে ৪৫ জন শিক্ষার্থীকে সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয় এবং আগামীকাল ২ হাজার ৫৩১ জনকে পুরস্কার প্রদান করা হবে। কর্মসূচির নিয়মানুসারে সেরাপাঠক বিজয়ীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে প্রতি ১০ জনে একটি বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। 

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন। দু‘দিনব্যাপী উৎসবের এ বিশাল আয়োজন ও পুরস্কারের বই স্পন্সর করছে গ্রামীণফোন লিমিটেড।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র গত সাতচল্লিশ বছর ধরে সারাদেশে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য নানাবিধ উৎকর্ষ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। দেশভিত্তিক উৎকর্ষ (বইপড়া) কার্যক্রম এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি। বর্তমানে সারাদেশে এই কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১৪০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় আড়াই লক্ষ ছাত্রছাত্রী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বইপড়াকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুরস্কারের ব্যবস্থা।
 

বিভি/এআই

মন্তব্য করুন: