সাধারণ মানুষের মাঠ ও পার্ক রাজনীতিবিদদের দখলে!
‘রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার জনগণের মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানগুলো বিভিন্ন ক্লাবের নামে দখল করে নেওয়া হচ্ছে। আর এই দখলের ক্ষেত্রে কখনও কখনও রাজনৈতিক দলের কর্মীর পরিচয় ব্যবহার করা হয়। ফলে, শিশু-কিশোরদের খেলার অধিকার সংকুচিত হচ্ছে। মাঠ দখলকারী এসব ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন বাতিল এবং রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের দল থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি বিদ্যমান আইন সংশোধন করা হলে এ দখলদারিত্বের অবসান সম্ভব।’
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বারসিক, সেন্টার ফর ল’ অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর যৌথ উদ্যোগে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘মাঠ ও পার্ক রক্ষায় রাজনৈতিক দলের কাছে প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে অনেক স্থানে শিশু, কিশোর ও সাধারণ মানুষের জন্য সংরক্ষিত খেলার মাঠ ও পার্কগুলো রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী সদস্য অথবা সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতার পরিচয়ে দখল বা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সেখানে ক্লাবঘর, স্থায়ী কাঠামো কিংবা মেলার মতো কার্যক্রম বসিয়ে সাধারণ মানুষের প্রবেশ ও খেলাধুলার সুযোগ সীমিত করা হচ্ছে। এর ফলে প্রকৃত খেলাধুলা ও উন্মুক্ত স্থান ব্যবহারের অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। মাঠ ও পার্ক রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন এবং নির্বাচনী ইশতেহারে মাঠ ও পার্ক সংরক্ষণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, মাঠ ও পার্ক রক্ষায় পরিবেশবাদী ও সাধারণ নাগরিকরা একাধিকবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। মহামান্য আদালত এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন। কিন্তু, সরকারের নির্বাহী বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো আদালতের নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেনি। বরং, আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মাঠ ও পার্ক ইজারা দেওয়া হয়েছে এবং রক্ষায় কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
বক্তারা উল্লেখ করেন, দেশের নগর ও মহানগরীর মাঠ ও পার্ক রক্ষায় মাঠ, পার্ক ও জলাধার রক্ষা আইন, ২০০০ বিদ্যমান থাকলেও এই আইন মাঠ ও পার্ক সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। আইনের দুর্বলতার সুযোগে দখলদার ক্লাবগুলো মাঠ ও পার্ক দখল করে নিচ্ছে। তাই বিদ্যমান আইন সংশোধন করে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে এ বিষয়ে অঙ্গীকার যুক্ত করার আহ্বান জানান বক্তারা।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, কমিউনিটি মাঠ কোনোভাবেই স্টেডিয়াম, বাণিজ্যিক বা ইনডোর স্থাপনায় রূপান্তর করা যাবে না। মাঠ ও পার্কের জন্য পৃথক বাজেট নিশ্চিত করতে হবে এবং কোনো ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়া যাবে না। সকল মাঠ ও পার্ক থেকে অবৈধ স্থাপনা, টার্ফ ও ক্লাব দখল উচ্ছেদ করে নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ওয়াসার পাম্পের ভাড়া মাঠ রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় করতে হবে। পাশাপাশি কমিউনিটি ভবনে লাইব্রেরি ও বসার জায়গা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন বক্তারা।
দীর্ঘমেয়াদে মাঠ, পার্ক ও জলাধার সংরক্ষণে আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন ও সংশোধন, সারাদেশের মাঠ ও পার্কের তালিকা প্রকাশ, পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিতকরণ এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন বক্তারা।
সভায় বক্তব্য রাখেন বারসিক’এর নগর গবেষক ও সমন্বয়ক মোজাহাঙ্গির আলম; সেন্টার ফর ল’ অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের সেক্রেটারি এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম; গ্লোবাল লিগ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের চেয়ারম্যান এডভোকেট আওলাদ হোসেন; বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার; পরিবেশ বাঁচাও আমরা (পবা) সাধারণ সম্পাদক মেজবাহউদ্দিন সুমন; ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমান; চিলড্রেন ওয়াচ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ ইসরাত আজমেরী; কসমসের নির্বাহী পরিচালক মেহেনাজ মালা; নগর পরিকল্পনাবিদ কায়কোবাদ হোসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
বিভি/পিএইচ




মন্তব্য করুন: