বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের পুনর্জাগরণ
প্রাচীনযুগের মতো এখনকার সাধক কবি, গায়ক ও নৃত্যশিল্পীরা চর্যাপদের ধারক ও বাহক হয়ে উঠছেন
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা’র রচিত প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ। হাজার বছরেরও আগে যে পদগুলো রচনা করেছিলেন বৌদ্ধসাধকরা। যেখানে বৌদ্ধধর্মের গূঢ় সাধনপ্রণালী পাশাপাশি দর্শনতত্ত্ব নানা প্রকার রূপকের মাধ্যমে, আভাসে, ইঙ্গিতে ব্যক্ত হয়েছে। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। এরপর থেকে শুরু সাহিত্যের এ অংশের চর্চা।
চর্যাপদ বাংলাভাষার প্রাচীনতম ঐতিহ্যিক ভাবসম্পদ। প্রাচীন ও মধ্যযুগে এদেশের সাধক কবি, গায়ক ও নৃত্যশিল্পীরা চর্যাপদের ধারক ও বাহক ছিলেন। আবিস্কারের কিছুকাল পর থেকে চর্যাপদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হলেও সাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
প্রায় দুই দশক আগে চার্যার পদগুলো আধুনিক বাংলায় রূপান্তর করেন লোক সংস্কৃতি গবেষক ড. সাইমন জাকারিয়া। অমূল্য সাহিত্য সম্পদ মানুষে মাঝে ছড়িয়ে দিতে ২০১৪ সালের ১২ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ভাবনগর সাধুসঙ্গ নামে একটি সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় ১১ বছর ধরে প্রতি বুধবার সাধুসঙ্গের আসর বসে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাধুরা এসে একত্রিত হন। এ পর্যন্ত ৪৮৫তম আসর উদ্যানের মুক্ত প্রকৃতির মাঝে।
ভাবনগর সাধুসঙ্গে দেশের বাউল শিল্পীগণ একত্রিত হয়ে চর্যাপদের গানের চর্চার মাধ্যমের ভাবের আদান-প্রধান করেন থাকেন। বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক ড. সাইমন জাকারিয়াসহ কয়েকজন তরুণের তত্ত্বাবধানে বাংলার প্রাচীনতম এ সংস্কৃতি পৌঁছে গিয়েছে বিদেশের মাটিতেও।
চর্যাপদকে আশ্রয় করেই প্রাচীন বাংলার নাট্য, নৃত্য ও গীত পরিবেশন রীতির ইতিহাস নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাচীন বাংলা ভাষায় রচিত এ পদগুলোর যেমন উচুমানের সাহিত্যিক মূল্য রয়েছে, তেমনি তৎকালীন বাঙালি সমাজের চিত্রও এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
মন্তব্য করুন: