• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

ইতিহাসের সাক্ষী ঘোড়ার গাড়ির করুণ দশা

মনির হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১৫:৫০, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ইতিহাসের সাক্ষী ঘোড়ার গাড়ির করুণ দশা

ইতিহাসের সাক্ষী ঘোড়ার গাড়ি। ছবি- ডিডব্লিউ

পুরান ঢাকা নামের সাথে শহরের হুবহু মিল থাকলেও এর ইতিহাস, ঐতিহ্য আভিজাত্য বর্তমানকেও হার মানায়। তেমনভাবে ‘ঘোড়ার গাড়ি’ পুরান ঢাকার হাজারো ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী যা বর্তমান সময়েও ঢাকার বুকে দৃশ্য মান। 

‘ঘোড়ার গাড়ি’ শব্দ যুগলটি শুনলেই আমাদের মন অজান্তেই যেন চলে যায় পুরান ঢাকার  সদরঘাট, গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, লক্ষীবাজার, মালিটোলা, ওয়ারির মতো বিশেষ বিশেষ কিছু জায়গায়। 

অর্থাৎ বর্তমানে ঘোড়ার গাড়ির চলাচলের গন্ডি কিছুটা নির্দিষ্ট হয়ে এসেছে কিন্তু একসময় ঘোড়ার গড়ির গন্ডি ছিল সুদূর প্রসারিত। 

বলা চলে (উনিশ শতকের) মাঝামাঝি সময়ে ঘোড়ার গাড়িই ছিল ঢাকা শহরের একমাত্র বাহন।ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, ১৮৫৬ সালের অক্টোবর মাসে এক আর্মেনিয়ান ঢাকা শহরে প্রথম ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন বা আমদানি করেন। তার পরবর্তী ১০ বছরে ঘোড়ার গাড়ি বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ টি।এবং ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসে বিরাট পরিবর্তন। সে সময়ে ব্যবসাটি লাভজনক হওয়া আর্মেনিয়ান সহ ঢাকার অনেক স্থানীয়রাও জড়িয়ে পড়ে এই ব্যবসায়।

ইতিহাসের সাক্ষী ঘোড়ার গাড়ির করুণ দশা। ছবি- ডিডব্লিউ

আস্তে আস্তে ঘোড়ার গাড়ির জনপ্রিয়তা আরো বাড়তে থাকে। সেসময়ে ঢাকার বর্ণাঢ্য ধনী পরিবার সহ নওয়াব পরিপারেও পদচারণা ছিল ঘোড়ার গাড়ির। 

১৮৯০ সালের দিকে নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহসহ ঢাকায় নিযুক্ত ইংরেজ গভর্নরদের চলাচলের প্রধান বাহন হিসেবে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করতে দেখা যায়। ১৮৯৫ সালে নওয়াবদের সম্পত্তির যে তালিকা তৈরি করা হয়, তাতে ১৪টি হাতি, ৬০টি ঘোড়া ও হরেক রকমের ৩৫টি ঘোড়ার গাড়ির উল্লেখ পাওয়া যায়।

অর্থাৎ ঘোড়া কিংবা ঘোড়ার গাড়ির কদর ছিল ব্যাপক এবং তা নওয়াবদের সম্পতির অংশ হিসেবে পরিগনিত হতো। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ির সেকাল আর একাল কি এক? উত্তর 'মোটেও না'। বর্তমানে ঘোড়া গাড়ি দেখে যে কেউর মনে হবে 'ঘোড়া গাড়ি' তার ক্রান্তিলগ্নে পৌঁছেছে। সবাইকে সাক্ষী রেখে সে যেন এখন বিলুপ্তির পথে। 

ঘোড়া গাড়ির এরূপ বেহাল দশা কেন? প্রশ্নের উত্তর খুচতে সরজমিনে ঘুরে এছাড়া কয়েকজন কোচওয়ান ও মালিকদের সাথে কথা বলে যা বুঝতে পারলাম- বর্তমানে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট রুটে ৩০-৩৫টি ঘোড়ার গাড়ি আমাদের চখে পড়ে এবং ঘোড়াগুলোর আস্তাবল বঙ্গবাজারের পাশেই হানিফ উড়ালসড়কের নিচে। সেখানে গিয়ে দেখি অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে ঘোড়া গুলি। ঘাস, ক্ষুদ, গম খেতে দেয়া হয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অর্থাৎ ঘোড়া গুলি তৃপ্তি সহকারে তাদের খাবার পাচ্ছে না। যার ফলে আমরা প্রায়শই দেখি জীর্ণ শীর্ণ দেহ নিয়েই কোচওয়ানদের লাঠির আঘাতে নিরবে শত কষ্ট সহ্য করে সামনে এগিয়ে চলে। যার ফলে ঘোড়ার গাড়িগুলো এখন বিলুপ্তির পথে।

এভাবেই অযত্নে অবহেলায় রাখা হয় ঘোড়াগুলো। ছবি- ডিডব্লিউ

এছাড়াও আধুনিকায়ন ও নিত্যনতুন দ্রুত গতির যানবাহনের দৌড়ে ঘোড়া গাড়ি যেন প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়ছে। 

এ প্রসঙ্গে রাজন নামের একজন কোচয়ান বলে- এক সময় আমরা এই গাড়ি দিয়ে প্রতিদিন হাজার পনেরোশ টাকা ইনকাম করতাম কিন্তু বর্তমানে হয় সাত/আটশও হয় না। কারণ অনেকেই এখন সময় বাচাতে মটরসাইকেল,বাস,লেগুনা করে চলে যায়।

ঘোড়া গাড়ির মালিক সজল বলে - কয়েক মাস আগেও ঘোড়ার গাড়ির ভালো যাত্রী ছিল কিন্তু পদ্মা সেতু চালো হওয়ার পর লঞ্চের যাত্রী কমে যাওয়ায় ঘোড়ার গাড়িতেও তার ব্যাপক প্রভাব পরেছে।

এ প্রসঙ্গে ঘোড়ার গাড়িতে বসে থাকা এক যাত্রীর কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন- বর্তমানে সখের বসে মানুষ ঘোড়ার গাড়িতে উঠে। কারণ সদরঘাট থেকে বাসে করে গুলিস্তান যেতে লাগে ১০ টাকা সেখানে ঘোড়ার গাড়ি নিচ্ছে ৩০ টাকা। আবার বিশেষ দিবস গুলোতে এই ভাড়া দ্বিগুণ ও হয়ে যায়।

বেশি ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে ঘোড়ার গাড়ির এক মালিক এর কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন- বর্তমানে সব জিনিসের দাম বেশি। ঘোড়ার জন্য ঘাস, ক্ষুদ, কুড়া, গমের ভুসি কিনতে হয়। যার দাম অনেক বেড়ে গেছে। তাছাড়া ঢাকা শহরে ঘাসের যোগান দেয়া যেমন কষ্টের তেমনি অনেক খরচ।

তিনি আরও বলেন -বর্তমানে গাড়ি গুলো টিকে আছে বিভিন্ন বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানের ভাড়ায় গিয়ে।রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ির যাত্রী খুবই কম।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: