• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চিড়িয়াখানায় হরিণ বিক্রির সুযোগে ট্রফি পাচার বাড়ার শংকা

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৭:০৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
চিড়িয়াখানায় হরিণ বিক্রির সুযোগে ট্রফি পাচার বাড়ার শংকা

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী হরিণ শিকার বা নিজের দখলে রাখা অথবা হরিণের দেহের কোনো অংশ রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধে ইতিমধ্যে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন দেশের সুপরচিত অনেক ব্যক্তি। দেশের বনাঞ্চলে প্রতিনিয়ত হরিণ বা হরিণের দেহের অংশ পাচারকারীদের আটক করতে দেখা যায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী পাচার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী হত্যার পেছনে যেসব কারণ রয়েছে, তার মধ্যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচার অন্যতম একটি। মাংসের পাশাপাশি হরিণের চামড়া এবং শিংয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রাণীটি হুমকির মুখে পড়ছে বলেও মনে করেন প্রাণী গবেষকরা। তাই বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় হরিণ সংরক্ষণকে বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে আসছেন তাঁরা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টানা বিধি-নিষেধের কবলে পড়ে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিলো দেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলো। এতে প্রায় বছরজুড়ে দর্শণার্থী শূণ্য ছিলো রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। অনেকদিন দর্শণার্থীর আনাগোনা না থাকায় প্রাণীগুলো কিছুটা হলেও বন্য পরিবেশে ফিরে পায়। এতে হরিণসহ বিভিন্ন প্রাণীর জন্ম বিস্তার ঘটে। 

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের কাছে ১৫০টি হরিণ পালনের সক্ষমতা থাকলেও এখন এই সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। তাই বিক্রির মাধ্যমে হরিণ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি ঘোষণা দিয়ে ৭৫ হাজার টাকা দরে হরিণ বিক্রি শুরু করেছে চিড়িয়াখানা। কর্তৃপক্ষ বলছে, বন বিভাগের তৈরি করা হরিণ পালন বিধিমালা মেনেই বিক্রি হচ্ছে এসব হরিণ। বন বিভাগ যাকে লাইসেন্স দিচ্ছে শুধু তার কাছেই বিক্রি হচ্ছে হরিণ। যদিও বিধিমালা মেনে হরিণ বিক্রি হলেও এই অনুমোদনের সুযোগে হরিণ ও তার দেহাংশ পাচারকেন্দ্রিক অপরাধ বাড়ার শংকা করছেন প্রাণিবিদরা। তাঁরা বলছেন, হরিণ পালন তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছালে সেই অনুমোদনের অপব্যবহার করে কেউ কেউ বনের হরিণ বা হরিণের চামড়া, শিং ও হাড়সহ বিভিন্ন ট্রফি পাচার করার সুযোগ পাবে।

এ বিষয়ে চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স-এর বন্যপ্রাণী গবেষক ড. নাছির উদ্দিন বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, খামারী পর্যায়ে হরিণ পালন ছড়িয়ে দেওয়া হলে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বনের হরিণ শিকারের প্রবণতা বাড়তে পারে। কারণ কোনটি বনের এবং কোনটি খামারির হরিণ তা মনিটর করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। এছাড়া, বিধি-মালায় ট্রফির বিষয়ে তেমন উল্লেখও নেই। বিক্রয় অনুমোদনের সুযোগে হরিণের ট্রফি পাচারের ঝুঁকিই কেবল বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে উঠবে। 

তিনি বলেন, বন বিভাগ এখন দায়িত্ব নিয়ে বলছে, তারা মনিটর করবে। কিন্তু নিয়মিত রুটিন কাজ করার মতো জনবলও নেই বন বিভাগের। বন দখল প্রতিরোধ, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ তারা করতে পারে না জনবল স্বল্পতার কারণে। সেই বন বিভাগ কীভাবে বাড়ি বাড়ি বা খামারে খামারে গিয়ে হরিণ পর্যবেক্ষণ করবে, তা বুঝা যাচ্ছে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন,  হরিণ পালন বিধিমালায় বলা আছে, যে কেউ হরিণ পালন করতে পারবেন। কিন্তু হরিণ বিক্রি বা খাওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ।  এর শরীরের অংশ বা ট্রফিও বিক্রি বা সংরক্ষণ করা অবৈধ। এছড়া, বন্যপ্রাণী আইনে হরিণ বিষয়ে অনেক নির্দেশনা দেওয়া আছে। অথচ তারা হরিণকে গৃহপালিত হিসেবে ট্রিট করছে। এটিকে কোনোভাবেই গৃহপালিত ভাবার সুযোগ নেই।

এসব বিষয়ে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ভাবছে কি না জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. আব্দুল লতিফ বলেন, আমরা বলে দিচ্ছি হরিণটি অসুস্থ হয়ে মারা গেলে অসুস্থতার সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। কোনোভাবে জবাই করে খাওয়া যাবে না। এটা দণ্ডনীয় অপরাধ। চামড়া, হাড় ও শিংসহ ট্রফিগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলতে আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি।

বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন বলেন, এই অনুমোদনকে ঘিরে বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ বাড়ার তেমন  শঙ্কা দেখছি না। আমরা শুরুতেই ক্রেতার উদ্দেশ্য বুঝতে চেষ্টা করছি। হরিণ সংগ্রহের উৎস সম্পর্কে জেনে নিচ্ছি এবং নিবন্ধন করছি। এরপর কারো কাছে হরিণ জন্ম নিলে পুনরায় নিবন্ধন করে নিতেও বলে দিচ্ছি। মারা গেলেও প্রমাণসহ আমাদের জানাতে বলছি। 

তিনি বলেন, হরিণ পালনকারীরা যদি নিয়মগুলো মেনে চলেন, তাহলে পাচার বা পাচারকেন্দ্রিক অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পায়। উপরন্তু আইন মেনে কাজ করলে আমরা তাঁকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। পক্ষান্তরে, আইন লঙ্ঘন করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। 

বিভি/কেএস/এসডি

মন্তব্য করুন: