অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির প্রয়াণের এক যুগ আজ
বাংলাদেশের বিনোদন জগতের এক অবিস্মরণীয় নাম হুমায়ুন ফরীদি। প্রয়াত এই কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি একাধারে মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকহৃদয় ছুঁয়ে গেছেন। চিরস্থায়ী আসন তৈরি করে গিয়েছেন দর্শকের মন ও মননে। অভিনয় জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বলা হয় এই অভিনেতাকে। ২০১২ সালের আজকের এই দিনে হুমায়ুন ফরীদি সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৬০। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) কিংবদন্তি এই অভিনেতার প্রয়াণের এক যুগ পূর্ণ হলো।
অসাধারণ অভিনয়ের কারণে হুমায়ুন ফরীদি দর্শক ভক্তের মনের মণিকোঠায় আজো অমলিন। শুরুতে মঞ্চ ও পরে টিভি নাটকে অভিনয় করে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এই অভিনেতা। হুমায়ুন ফরীদির অসামান্য অভিনয়ের কারণে তার অভিনীত চরিত্রগুলো বাস্তব হয়ে দর্শকের সামনে ধরা দিত। তার অভিনয় আজও দাগ কেটে আছে তার ভক্তদের মনে।
আশির দশকে নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’ নামের একটি স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক হয় হুমায়ুন ফরীদির। পরবর্তীকালে বাংলা সিনেমার জগতে নিজেই এক জীবন্ত উদাহরণ হয়ে ওঠেন এই অভিনেতা। একে একে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্র।
‘মাতৃত্ব’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান হুমায়ুন ফরীদি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা 'একুশে পদক'-এ ভূষিত করেন।
হুমায়ুন ফরীদি ১৯৫২ সালের ২৯ মে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম এ টি এম নূরুল ইসলাম ও মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ১৯৬৫ সালে পিতার চাকরির সুবাদে মাদারীপুরের ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু হুমায়ুন ফরীদির। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ফরীদি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে জড়িয়ে পড়েন নাট্যাঙ্গনের সঙ্গে।
১৯৭৬ সালে নাট্যজন সেলিম আল দীনের উদ্যোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় নাট্যোৎসব। আর হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন এর অন্যতম প্রধান সংগঠক। এই উৎসবে ফরীদির নিজের রচনায় এবং নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয় ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক। নাটকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
ঢাকাই চলচ্চিত্রে অসংখ্য সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জননন্দিত অভিনেতা।হুমায়ুন ফরীদির অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘ভণ্ড’, ‘ঘাতক’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘টাকার অহংকার’, ‘অধিকার চাই’, ‘সন্ত্রাস’, ‘দহন’, ‘লড়াকু’, ‘দিনমজুর’, ‘বীর পুরুষ’, ‘বিশ্ব প্রেমিক’, ‘আজকের হিটলার’, ‘দুর্জয়’, ‘শাসন’, পালাবি কোথায়' অন্যতম।
এছাড়া অভিনেতার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো—
‘সংশপ্তক’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নিখোঁজ সংবাদ’, ‘হঠাৎ একদিন’, ‘পাথর সময়’, ‘সমূদ্রে গাংচিল’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘নীল নকশাল সন্ধানে’, ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’, ‘ভাঙ্গনের শব্দ শুনি’। ‘সংশপ্তক’ নাটকের কানকাটা রমজান বাংলাদেশের টিভি নাটকের ইতিহাসে একটি কালজয়ী চরিত্র হয়ে থাকবে চিরকাল।
কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির প্রয়াণের আজ এক যুগ পূর্ণ হলেও তিনি তার কর্মের মধ্য দিয়ে অমর হয়ে থাকবেন কারণ 'কীর্তিমানের মৃত্যু নেই'।
বিভি/জোহা/টিটি
মন্তব্য করুন: