• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

একজন উদ্ভাবনী উদ্যোক্তার কথা

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ১২ মার্চ ২০২২

আপডেট: ১৯:১৩, ১২ মার্চ ২০২২

ফন্ট সাইজ
একজন উদ্ভাবনী উদ্যোক্তার কথা

একজন মানুষ তার চোখের আকারে নয় বরং তার স্বদৃষ্ট স্বপ্নের আকারে বড় হয়। আবেগ, অনুপ্রেরণা সেই সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য ধারাবাহিকতা, একজন রিক্ত হস্ত মানুষকেও পৌঁছে দিতে পারে সফলতার চুড়ান্ত সীমানায়। যে সীমানায় বসে উপভোগ করা যায় পেছনে ফেলে আসা দুঃসহনীয় স্মৃতি। রোমন্থন করা যায় ক্লান্তিহীন জীবন সংগ্রামের সেই মুহর্তগুলো।

আজকে আমরা একজন যুব উদ্যোক্তার গল্প শোনাবো। নাম নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী। কুমিল্লার গোমতী নদীর তীর ঘেঁষা এক মধ্যবিত্ত পরিবারে যার জন্ম। প্রকৌশলী পিতা এবং শিক্ষিকা মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান নিজেকে মানুষের কল্যাণে সমর্পণ করার ইচ্ছা করলেন। কুমিল্লার মোচাগড়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করে শুধু বাস ভাড়া নিয়ে চলে আসেন যান্ত্রিক শহর ঢাকায়। জীবন চালিয়ে নিতে চাকরি নেন কনফেকশনারী দোকানের সেলসম্যানের। সেই মানুষটি আজ হয়েছেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক।

যেভাবে শুরু

সেলসম্যানের চাকরির পাশাপাশি ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার কোর্সে ভর্তি হন ঢাকা পলিটেকনিকে। ডিপ্লোমা শেষ করে একই বিষয়ে স্নাতকের সময় ছোট ছোট ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে নিজেকে জড়ান। নতুন এই ক্যারিয়ারে উত্থানপতনের ধাক্কা সামলে বড় পরিসরে কাজ শুরু করেন প্রযুক্তি তার বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে। এভাবেই এগুতে থাকেন।

প্রতিষ্ঠান

স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হওয়া। অবদান রাখবেন দেশের বিভিন্ন সেক্টরে। তৈরি করবেন কর্মসংস্থান। সেই ভাবনা থেকে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রথম তৈরি করলেন পর্যটন কেন্দ্রিক অনলাইন সার্ভিস 'ট্রাভেল হলিডে বিডি' যা অল্প সময়ের মধ্যে কর্পোরেট জগতে আস্থা কুড়িয়েছে। এরপর তথ্যওপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের যুগে, সাইবার সিকিউরিটি নলেজ এবং আইসিটি ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন প্রাতিষ্ঠানিক আঙ্গিকে। দেশ দেশের বাহিরের একাধিক প্রতিষ্ঠানকে অনলাইন সেবা প্রদান করতে গড়ে তোলেন আই.সি.টি বাজার নামে একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। দেশের আইসিটি ডেভলেপমেন্টকে কেন্দ্র করে আইসিটি বাজারের অর্জিত সুনাম এবং বৈদেশিক রেমিটেন্স, আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে আগত নতুনদের জন্য উদাহরন তৈরী করেছে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে আরো বৃহৎ পরিসরে এবং সহজ পরিসেবায়, প্রতিটি মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রতিষ্ঠা করেন ট্রিপ ৭১ নামক একটি ট্রাভেলবেইজ টিট প্লাটফর্ম। এর মাধ্যমে স্বল্প আয়ের একজন সাধারণ মানুষ কোন প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সি ছাড়া নিজের স্মার্ট ফোন দিয়েই হয়ে উঠতে পারেন নিজের ট্রাভেল প্ল্যানার। এ্যাপ এবং ওয়েব-এর ইনসাইড ফান্ডামেন্টাল ডেভলপমেন্ট এর কাজ চলার কারণে পরিসেবা সাময়িক স্থগিত রয়েছে। তৈরি করেন বার্তা বাজার নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই প্রতিষ্ঠানের প্রকাশক সম্পাদক নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী। তিনি জানান, দেশের অন্যতম রেজিষ্ট্রেশনপ্রাপ্ত অনলাইন পোর্টাল 'বার্তাবাজার'  এটি তৈরিতে তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য নিপীড়িত জনগণের সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়া। একই সঙ্গে মানবিক কাজও করবে তার এই প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববাজারে চামড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে তৈরি চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে৷ বিদেশিরা কোন প্রকার সংকোচ ছাড়াই কিনে নিচ্ছে চামড়াজাত পন্য। দেশে ফিরেইলেদার প্রোএকটি চামড়াজাত দ্রব্য উৎপাদন, বিক্রয় বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান দাড় করালেন। যা একাধারে ভূমিকা রাখছে -কমার্স এবং এফ-কমার্সে জড়িত সকল চামড়াজাত দ্রব্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের মাদার ভেন্ডর হিসেবে। দেশের প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান যারা -কমার্সের মাধ্যমে চামড়াজাত দ্রব্য তার মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের বাজার তৈরী করেছেন এবং স্বল্পমূল্যে পৌঁছে দিচ্ছেন গ্রাহকের হাতের মুঠোয় তাদের সকলের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে একাধারে ত্রিমাতৃক ভূমিকায় নিজেকে এবং নিজের প্রতিষ্ঠানকে অবতীর্ন করেছে।

এসব প্রতিষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ নয়। আইটি সাপোর্ট দিচ্ছেন প্রায় একডজন ইকমার্স ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে। নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীর গড়া পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে কয়েকশযুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ থেকে ১০ শতাংশ অর্থ যায় চ্যারিটিতে।

যুব উদ্যোক্তা নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, 'আমরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ এবং দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের অধিকারী। পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা এশিয়ার যে কোন দেশের তুলনায় অনেক বেশি। সঠিক ব্যবস্থানাপনা হলে পাশের দেশের মত আমরাও বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার পর্যটন খাত থেকে অর্জন করতে সক্ষম হবো। এই শিল্পে অনন্য ভূমিকা রাখতেই ট্রিপ ৭১ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, একটি দেশের নাগরিকের আত্মনির্ভরতার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবকিছুর রশদ বাংলাদেশে রয়েছে। আমাদের দেশে এখনো চাইলে যে কোনো জমিতে যে কোনো ফসলের বীজ রোপন করা যায়। যা হয়তো অনেক দেশেই সম্ভব নয়। কারণ, উৎপাদন এবং তার সঠিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারনের জন্য সেদেশে সামান্য একজন কৃষককে নিজ জমিতে ফসল ফলানোর জন্য এবং বিক্রয়ের জন্য সরকারী দফতরের অনুমতির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ সেখানে একজন নিয়মিত চাষীকে প্রনোদনা দিচ্ছে। একজন খামারীকে পর্যাপ্ত সুবিধা দিচ্ছে।

নিজের বিষয়ে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, মাত্র একদশকের পরিশ্রম করেছি, এখন নিজেকে একজন সেটেলারকে স্ট্যান্ডিং পজিশনে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। তাহলে আমি কিভাবে বলবো এই দেশে এবং এই শহরে সম্ভাবনা নেই। প্রতিটি ঘরেই কেউ না কেউ একজন ত্রাণকর্তার ভূমিকায় কিছুনা কিছু উদ্যোগ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।

তার প্রত্যাশা এমন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক যে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে একজন সুনাগরীক বসবাস করবে। আরও বেশী দ্বায়িত্বশীল হয়ে উঠুক আমাদের সমাজ, আমাদের দেশের মানুষ এমন প্রত্যাশায় আগামীর দিকে চোখ রাখতে চাই।

মন্তব্য করুন: