দেড় টাকার জন্য ক্লাস সিক্সে ভর্তি হতে পারেননি একুশে পদক পাওয়া জিয়াউল হক
জিয়াউল হক, যিনি চাপাইনবাবগঞ্জের হাজার মানুষের কাছে পরম নির্ভরতার ঠিকানা। নিজের হাতে দই বানিয়ে এরপর গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে সেই দই বিক্রির টাকায় চলে তার সংসার। শুধু নিজের সংসারই নয়, জিয়াউল হকের দই বিক্রি করা টাকায় চলে অনেক মানুষের জীবন। কিন্তু এক সময় মাত্র দেড় টাকার অভাবে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হতে পারেননি এই সমাজসেবক। এ বছর সমাজসেবায় একুশে পদক পেয়েছেন নিভৃতে কাজ করে যাওয়া মানুষটা।
যখন সমাজসেবায় একুশে পদক পাওয়ার সংবাদ পান জিয়াউল হক, তখনও তিনি ফেরি করে দই বিক্রি করছিলেন। নিজের হাতে বানানো দই। এরপর গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে সেই দই বিক্রির টাকায় চলে সংসার। শুধুই কি নিজের সংসার- একজন গরীব মানুষ চাপাইনবাবগঞ্জের হাজার মানুষের কাছে হয়ে উঠেছিলেন পরম নির্ভরতার ঠিকানা। স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা, অসহায় নারীদের কাছে আসন পেয়েছেন বাবার। ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের কাছে একজন আদর্শ শিক্ষক। বই পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের কাছে আলোর মশাল।
- আরও পড়ুন:
- জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল ‘বগুড়ার দই’
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহসহ একুশে পদক পাচ্ছেন ২১ জন
- ‘শিল্পকলা পদক’ পাচ্ছেন ২০ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠান
অথচ একদিন সংসার চালানোর মত টাকাও উদ্বৃত্ত থাকে না তার। ৯০ বছর বয়সেও মাথায় দইয়ের ডালা নিয়ে ঘুরে বেড়ান গ্রামের পর গ্রাম। দু মুঠো খাবার জোগাতে বিশ্রাম নেই জীবনের। বলিউড কিংবা তামিল ছবিতে এমন কাহিনীর উপর ভিত্তি করে অসংখ্য মুভি থাকলেও বাংলাদেশে রয়েছেন জলজ্যান্ত উদাহারণ।
মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পাশ জিয়াউল। দেড় টাকার জন্যে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হতে পারেননি। এরপর বাবার সঙ্গে নেমে যান দই তৈরিতে। শুরু করেন গ্রামে ঘুরে দই বিক্রি। কিন্তু মনের মধ্যে সুপ্ত ছিল একটা অমিমাংসিত অভিমান, নিজের উপর ক্ষোভ। টাকার জন্যে পড়াশোনা করতে না পারার আক্ষেপ।
সেই আক্ষেপ পরিণত করেন উদাহরণে। দই বিক্রির টাকা দেদার ঢালতে থাকেন ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের বই কিনতে। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গরীব শিক্ষার্থীদেরও বই কিনে দেন জিয়াউল। বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়ান বাবার মতো ঢাল হয়ে। বাড়ি করে দেওয়ার পাশাপাশি ছোট কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। বিশুদ্ধ পানির জন্যে স্থাপন করেছেন অসংখ্য গভীর নলকূপ। ঈদ, পূজা-পার্বণে অসহায় পরিবারের জন্যে রাতের আধাঁরে নিয়ে যান নতুন পোশাক।
নিভৃত পাড়াগাঁয়ে ১৯৬৯ সালে নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’। এ পাঠাগারে এখন বইয়ের সংখ্যা ১৪ হাজার।
জিয়াউল হকের এই অর্জনে স্থানীয়রা যারপরনাই খুশি এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা বলছেন- এমন হাজার হাজার জিয়াউলের সম্মিলন ঘটুক বাংলাদেশে। সেইসঙ্গে সঠিক মানুষকে পদক দেওয়ায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: