• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সাত তরুণের আকাশ ছোঁয়ার গল্প, বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে রিভেরীর সাফল্য

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
সাত তরুণের আকাশ ছোঁয়ার গল্প, বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে রিভেরীর সাফল্য

২০০৯ সাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের তিনজন বন্ধু, আর কয়েকমাস পর ওরা পাশ করবে। ওরা সবাই মেধাবীদের মধ্যেও মেধাবী। পাশের বন্ধুরা যখন দেশের বাইরে পাড়ি দেয়ার জন্য GRE, TOEFL দিচ্ছে, বিভিন্ন নামকরা বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করছে, এই তিন বন্ধুর স্বপ্ন দেশে কি করা যায়, দেশের জন্য কি করা যায়।

স্বপ্ন বড় কিন্তু বাস্তব অনেক কঠিন; এই তিন বন্ধুই বাংলাদেশের স্বনামধন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করে। এর পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজ এ নিজেদের তৈরী করা একটা কারিগরি কোর্স চালু করে।

সময়ের সাথে বাজার বিষয়ে পরিচিতি আর সাহস দুই-ই বাড়তে থাকে। এর সাথে যুক্ত হয় এমন স্বপ্নবিলাসী আরো কিছু তরুণের। ২০১১ সালে ৭ জন মিলে তৈরী করেন রিভেরী পাওয়ার এন্ড অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ। মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে এই প্রতিষ্ঠান ৩৫০ জনেরও বেশি প্রকৌশলী নিয়ে বড় একটি টিম ও শক্ত একটি ইন্জিনিয়ারিং প্লাটফর্ম তৈরী করে যারা যে কোন ধরনের জটিল প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। 

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে “রিভেরী” এখন অনন্য ব্র্যান্ড, যা রিভেরী টিম ও এর লিডারদের ভিশন, মেধা, সততা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। ওনারা আর কী এমন অসাধারণ কিছু করলেন যে মাত্র ১০ বছরে একটি প্রতিষ্ঠান এমন অনন্য অবস্থানে পৌছালো, সে গল্পই আজকে আমরা তুলে ধরবো।

রিভেরীর উদ্যোক্তারা বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকুরী করার সুবাদে একটি বিষয় লক্ষ্য করেন যে বাংলাদেশে প্রচুর বিদেশী প্রকৌশলীরা কাজ করেন। মেধায়, উদ্যমে দেশীয় প্রকৌশলীরা কোনো অংশেই কম না, কিন্তু এমন কোনো দেশীয় প্রতিষ্ঠান নেই যারা গ্রাহক পর্যায়ে সেই আস্থা অর্জন করেছে। এই আইডিয়া দিয়েই শুরু।

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসলে দেশের বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতা ৩,৩০০ মেগা ওয়াট, যা এখন প্রায় ২৫,০০০ মেগা ওয়াটেরও বেশি। এই সময় যে শুধু পাওয়ার জেনারেশনে উন্নয়ন হয়েছে তাই নয়, বরং ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন এ ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ নির্ভর প্রচুর কলকারখানা গড়ে উঠেছে।

বিদ্যুৎ খাতের এ উন্নয়নে রিভেরীর প্রযুক্তিগত অবদান অনস্বীকার্য। পাওয়ার সিস্টেমের পাশে কন্ট্রোল সিস্টেম, ডিস্ট্রিবিউটেড অটোমেশন সিস্টেম, স্ক্যাডা কমপ্লেক্স গ্রিড সিনক্রোনাইজেশন ইত্যাদি  অনেক জটিল প্রকৌশলী সমাধান সম্পূর্ণ দেশীয় প্রকৌশলী দ্বারা এখন পর্যন্ত শুধু রিভেরী দিয়ে থাকে। আর এই জটিল প্রকৌশলী সমাধানগুলো বিদ্যুতের উৎপাদন থেকে শুরু করে গ্রাহক পর্যায়ে প্রায় প্রতিটি খাতে লাগে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য রিভেরীর প্রযুক্তিগত যে উৎকর্ষ সাধন করেছে, তা বাংলাদেশের গর্ব।

শুধু প্রযুক্তিগত সমাধানই নয়, রিভেরী আন্তর্জাতিক মানের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও সুইচগিয়ার তৈরী করছে। রিভেরীর তৈরী ট্রান্সফরমার স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক ল্যাব থেকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। তাইতো এই ট্রান্সফরমার ও সুইচগিয়ার গুলো বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে দেশে বিদেশে সরবরাহ করতে সক্ষম এবং হচ্ছে। 

এ বিষয়ে রিভেরীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আল জিলানী বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল স্বাধীন, সার্বভৌম ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী বাংলাদেশ। আমরা ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও সকল মুক্তিযোদ্ধার জীবন বাজি রেখে রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা তো পেয়েছি কিন্তু ভাগ্য উন্নয়নের যুদ্ধ কিন্তু থেমে যায়নি। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির পাশাপাশি উনি অথনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে স্বাবলম্বী করতে দেশীয় উৎপাদনে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করেছেন। আমাদের সম্পদ আমাদের মানুষ আর মাটি। বাংলাদেশের জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি তৈরী, আমদানী নির্ভরতা কমানো ও রপ্তানি বাড়ানো বৈদেশিক মুদ্রা আয় ব্যয়ের যে অসামঞ্জস্যতা রোধ করতে পারে এই খাত থেকে সম্ভব। সারাবিশ্বেই বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদির গ্রাহক বেড়ে চলছে, আর এই চাহিদা সবসময় থাকবে। আরএমজি সেক্টরের পাশাপাশি এই খাতও আমাদের অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখতে পারে। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন দেশে আমাদের পণ্যগুলো রপ্তানি করতে আমরা বদ্ধপরিকর। শুধু তাই নয়, এই খাতের অন্যান্য ছোট বড় ম্যানুফ্যাকচারারদের নিয়ে পণ্যের গুনগত মান বজায় রেখে একে অপরের দিকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে সকলকে সাথে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ভাগ্য উন্নয়নের যুদ্ধে সফল হতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।”

রিভেরীর চেয়ারম্যান মোঃ জাহিদ হোসেন এর সাথে যোগ করে বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা দেশের অগ্রযাত্রায় সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া, আর সেই লক্ষেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।” 

কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আরিফুল হক বলেন, “এই দেশ আমাদের, এই দেশের তরুণ প্রকৌশলীদের নিয়েই আমাদের এগিয়ে যাওয়া। দেশের বাইরে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি আমরাই তৈরী করতে পারবো। আমরা প্রমান করতে চাই, আমরা শুধু শ্রমিক নির্ভর দেশ না; মেধা মননে আমরা কারো চেয়ে পিছিয়ে থাকবো না।”

এই ৩ পরিচালক ছাড়াও অন্যরা হলেন মুস্তাজাব হোসেন, আব্দুর রহমান, এ বি সিদ্দিক, এস এম ফয়সাল। নিজেদের দক্ষতা ও মেধা কাজে লাগিয়ে রিভেরী দেশীয় পর্যায় অনেকগুলো টার্নকী প্রজেক্ট সফলভাবে সম্পন্ন করেছে যা আজ থেকে কয়েক বছর আগেও বিদেশীরা ছাড়া কেউ করতে পারতো না।

গোপালগঞ্জ ইন্টেরিম ৪০০/১৩২ কেভি ৬৫০ এমভিএ সাবস্টেশন, দেশ এনাৰ্জি ২০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট সহ সরকারি, বেসরকারি বহু মাইলফলক প্রকল্প রিভেরীর মুকুট উজ্জ্বল করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ শতভাগ বিদ্যুতায়নের রিভেরী হল প্রথম সারির সৈনিক। দেশের পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে রিভেরী এখন বিভিন্ন দেশের প্রকল্পের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। রিভেরী শব্দের অর্থ স্বপ্নবিলাসী, আর তারা স্বপ্নপূরণে প্রত্যয়ী।

পরিচালক আব্দুর রহমান বলেন,দেশের সার্বিক বিদ্যুৎ উন্নয়নে বিস্তর ভূমিকা পালনকারী রিভেরীর আকাশ ছোঁয়া অগ্রগতি বর্তমান অনেক দেশীয় দালাল ও বিদেশী কোম্পানির জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই রিভেরীর চলমান ও ভবিষ্যৎ কর্ম-পরিকল্পনার মধ্যে ষড়যন্ত্রের বিষয়টিও মাথায় রেখে কাজ করতে হচ্ছে। দেশের অদম্য অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে এমন ষড়যন্ত্র আগেও হয়েছে, আরও হতে পারে; এর মধ্যেই এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত রাখতে হবে।

সমাজ বিজ্ঞানি ড.আসিফ আবেদ বলেন, যে তরুণরা চাইলেই দেশের বাইরে গিয়ে নিজেদের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে পারতেন, তারা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদের প্রতিষ্ঠানে যা ঘুরেফিরে দেশের উন্নয়নেই অবদান রাখছে। আমরা তো এমন তরুণদেরই চাই যারা স্বপ্ন দেখবে বঙ্গবন্ধুর অকুতোভয় বীরদের মতো, যারা গড়ে তুলবে বঙ্গবন্ধুর সুখী সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ! ‘উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ’কে আরো সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে!  দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, এসকল সম্ভাবনাময় তরুণদের উদ্ভাবনী ও সৃজনশীলতাকো কাজে লাগিয়ে, দেশী-বিদেশি পরিমণ্ডলে সকল বাধা উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যাবে ।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: