৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজের সব টিকিট বিক্রি
সক্রিয় রয়েছে জালিয়াতি চক্র
১৫ ডিসেম্বর থেকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের নির্ধারিত দৈনিক দুই হাজার যাত্রীর অনুপাতে কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলোর প্রায় সব টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। পাশাপাশি জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত ৫০ শতাংশ টিকিটও বিক্রি শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে এই সময়ের মধ্যে অগ্রিম বিক্রি হওয়া টিকিটের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার।
গত ১ ডিসেম্বর থেকে এই রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার পর ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছেন।
ট্রাভেল পাসের জন্য নির্ধারিত সরকারি ওয়েবসাইটের (www.travelpass.gov.bd) তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ দিনের মধ্যে আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুই হাজার পাসের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮ শত ৭১টি পাস ইস্যু করা হয়। এদিন ছয়টি জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যাত্রা করেন ১ হাজার ৮ শত ৫৬ জন পর্যটক।
সি ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর গণমাধ্যমকে বলেন, শুরুর প্রথম দুই সপ্তাহে পর্যটকদের চাপ কম থাকলেও বিজয় দিবসসহ সরকারি ছুটি থাকায় তৃতীয় সপ্তাহে পর্যটকদের চাপ বেড়েছে। মাসের শেষ দিন পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। যেহেতু ২৫ ডিসেম্বরও সরকারি ছুটি রয়েছে, সেসময়ও পর্যটকদের চাপ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, গত ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপ উন্মুক্ত করা হলেও রাত্রিযাপনের অনুমতি না থাকায় সে মাসে পর্যটকদের আগ্রহ ছিলো না, ফলে জাহাজ চলাচল করেনি। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকায় এখন পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে এবং প্রতিদিন অনুমতিপ্রাপ্ত ছয়টি জাহাজ আনুপাতিক হারে যাত্রী পরিবহন করছে।
প্রশাসনিক তৎপরতার পরেও অনিয়ম, সক্রিয় রয়েছে টিকিট জালিয়াতি চক্র-
জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারি ১২টি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে। সেন্টমার্টিন যাত্রায় প্রশাসনের নজরদারি অব্যাহত থাকলেও গত ১৪ দিনে কিছু অনিয়ম ও টিকিট জালিয়াতির ঘটনা সামনে এসেছে।
যাত্রার প্রথম দিনেই, ১ ডিসেম্বর সরকার প্রদত্ত ট্রাভেল পাস ছাড়া টিকিট বিক্রির দায়ে কেয়ারি সিন্দাবাদ নামে একটি জাহাজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গত ৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউ ঘাটে ৫ জন যাত্রীর কাছে নকল কিউআর কোড সংবলিত টিকিট শনাক্ত করে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এক টিকিটে দুইজন যাত্রী সেন্ট মার্টিন যাত্রাকালে এই সুক্ষ্ম কারচুপি ধরা পড়ে। এজেন্সি থেকে টিকিট সংগ্রহ করা পর্যটকেরা বিপাকে পড়েন, যদিও প্রশাসনের মধ্যস্থতায় পরবর্তীতে তাদের ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হয়।
এরপর গত ১১ ডিসেম্বর মিজান ট্রাভেলস নামে একটি এজেন্সি থেকে টিকিট কিনে মানিকগঞ্জ থেকে আসা ৪৪ জন পর্যটক প্রতারণার শিকার হন। বিষয়টি অভিযোগ আকারে জানানো হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই এজেন্সিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে আসছি। বেশ কয়েকটি জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ গত ১২ ডিসেম্বর জাহাজের যাত্রাবিলম্ব হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে এক ব্যক্তি কক্সবাজার সদরের ইউএনও ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে গ্রেফতারের হুমকি দেন। পরে তিনি ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা তাসনিম গণমাধ্যমকে বলেন, ভোর থেকেই আমরা প্রতিদিন যাত্রা তদারকিতে ঘাটে অবস্থান নিই। কোনো অনিয়ম চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দিনে দুই হাজারের বেশি পর্যটক পরিবহনের নিয়ম নেই। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে, যেগুলো তদারকিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, সেন্টমার্টিন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। গত ২২ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় ১২ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়।
বিভি/এআই




মন্তব্য করুন: