• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

এন্টার্কটিকা সাগরের কালা পানি

মহুয়া রউফ, এন্টার্কটিকা থেকে

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ৪ মার্চ ২০২৩

ফন্ট সাইজ
এন্টার্কটিকা সাগরের কালা পানি

এন্টার্কটিকার CUVERVILLE ISLAND

আমার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি আমার কেবিনের বিছানায় শুয়ে। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন জাহাজের ডাক্তার আর তিনজন ক্রু। " তুমি অচেতন হয়ে পড়ে ছিলে জাহাজের রেস্টুরেন্টের সামনে। আমরা তোমাকে তোমার কেবিনে এনে  শুইয়ে দিয়েছি" , ডাক্তার বললেন। চোখ বন্ধ করে ভাবছিলাম কেনো আমি রেস্টুরেন্টের দিকে গেলাম? মনে পড়েছে। বেশ কয়েকবার বমি করার পর ভাবছিলাম একটা সি-সিকনেস পিল খাই। কিন্তু খালিপেটে তো আর খাওয়া যাবে না। তাই কুকিজ আনতে গিয়েছিলাম। আর কিছু মনে নেই আমার। 


ডাক্তার আবার বলতে শুরু করলেন। আমরা এখন যে ড্রেক প্যাসেজ পার হচ্ছি এটিকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে রুক্ষ সমুদ্র। আর্জেন্টিনা থেকে অ্যান্টার্কটিকা যাবার পথের এই ড্রেক প্যাসেজটির একটি উপাধি আছে। সেটি হলো কুখ্যাত ড্রেক প্যাসেজ। আরও ত্রিশ ঘণ্টা লাগবে আমাদের এটি পার হতে। তুমি যে দুটি ওরিয়েন্টেশন নিতে পারোনি তা তোমার জন্য আমরা পরে ব্যবস্থা করবো আর একজন ক্রু সর্বক্ষণ তোমার রুমের আশেপাশে থাকবে। আর একটা জরুরী বিষয়। বমি হলেও খেতে হবে। খেলে তোমার স্টমাক ব্যস্ত থাকবে আর স্টমাক ব্যস্ত থাকলে ব্রেইন সচল থাকবে। 
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়ে ভারতবর্ষের পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষা হতো বিলেতে। দু কারণে ভারতীয়রা অংশগ্রহণ করতে পারতো না । এক , এটি ব্যয়বহুল । আর একটি বড়ো কারণ হলো সাগর পাড়ি দিতে ধর্মীয় কুসংস্কার ছিলো সেসময়। সমুদ্রের পানিকে বলা হতো কালা পানি। এই কালা পানি বিধ্বংসী বা অমঙ্গলের প্রতীক ছিল। আজকের দিনে এর কোনোও ভিত্তি নেই। কিন্তু আমি এন্টার্কটিকার জাহাজে উঠে বুঝেছি এ সত্যিই কালা পানি।  এ পানি বিধ্বংসী। আমার মতো দূর্বল অভিযাত্রীর সাথে রবীন্দ্রনাথের একটা মিল আছে। রবীন্দ্রনাথের সমুদ্র ভীতি ছিলো। আমারো তাই আছে।
ডাক্তার প্রতিদিন নিয়ম করে আমায় দুবার দেখতে আসে। আমি তাকে নিয়ম করে দুবার মিথ্যে বলি। আমি বলি আমি তাঁর দেয়া গ্রীন আপেল খেয়েছি। আমার মতো এক দূর্বল প্রাণীকেও তিনি হাত উচিয়ে বলেন, " ইউ আর আ স্ট্রং লেডি, অ্যান্টার্কটিকা ইজ ওয়েটিং ফর ইউ।"

যেখানেই যাই লাল সবুজ আমার সঙ্গে থাকে
এন্টার্কটিকায় নামার জন্য চারটি দল করা হয়েছে। রিসেপশনে গিয়ে দেখি আমার নাম প্রথম গ্রুপের সবার উপরে। অর্থাৎ আমি এই অভিযানের প্রথম অভিযাত্রী যে প্রথম জাহাজ থেকে নামবে। এটি এমন কোনো বাহাদুরির কিছু নয়। সবাইতো নামবে। কেউ আগে কেউ পরে। তবু আমার ভীষণ আনন্দ হলো।

মন্তব্য করুন: