সাতক্ষীরা দেবহাটার রুপসী ম্যানগ্রোভের রুপে মনোমুগ্ধ বিনোদন প্রেমী

ছবি: রুপসী ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট
দর্শণার্থীদের বিনোদন নিশ্চিতে নানা প্রস্তুতিতে অপরুপ সাজে সাজানো হয়েছে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার অন্যতম নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর পর্যটন কেন্দ্র রুপসী ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নদী ইছামতির কোল ঘেঁষে এ পর্যটন কেন্দ্রটি বর্তমানে ঈদে ছুটিতে বাড়িতে আসা দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে।
দেবহাটা উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিনি সুন্দরবন নামে পরিচিত পর্যটন কেন্দ্রটি দর্শণার্থীদের কাছে ইতোমধ্যে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এই স্পটটিতে বর্তমানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ছুটি ও বিভিন্ন উৎসব ঘিরে প্রায় প্রতিদিন ৩/৪ হাজার দর্শণার্থীদের পদাচারনা ঘটে এই বিনোদন কেন্দ্রে।
এখানকার মিনি সুন্দরবনের মধ্যে কেওড়া, গোল, বাইন, কাঁকড়া, নিম, সুন্দরী, হরকচাসহ নানা প্রজাতির গাছ-গাছালীর মধ্যে হরেক রকমের হাঁস, মুরগী, খরগোশ, বানর ও পাখি এনে দিয়েছে এক মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ। ইছামতি নদী ভ্রমণের জন্য সেখানে আছে নৌকা। স্থলে বেড়ানোর জন্য আছে ঘোড়া। বাচ্চাদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য রয়েছে ট্রেন। এছাড়া চোখে দেখার জন্য রয়েছে বিভিন্ন কার্টুন ও ফেস্টুন, তার সাথে রয়েছে বাগান ভর্তি ফুল।
এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকার কারণে মিনি সুন্দরবন দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন বিনোদনপ্রেমী হাজার হাজার মানুষ। কেউ কেউ আসছেন পরিবার পরিজন নিয়ে, আবার কেউ কেউ আসছেনবন্ধু, বান্ধবী ও প্রিয় মানুষকে নিয়ে সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। তবে, এখানে পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে গেস্টহাউস। এছাড়া পর্যটকদের জন্য পুরুষ ও দহিলাদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা সানাজের স্থান। ঈদের পর থেকেই এই বিনোদন কেন্দ্রে শতশত মানুষের ভিড় জমছে। এখানে বিভিন্ন জাতের কবুতর, লাভ বার্ড, কোকাটেল, পাজেরিকা, টিয়া পাখি, তোতাপাখি ও ইমু পাখিসহ বহু পাখির আবাসস্থল এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের শীবনগর এলাকায় তিন নদীর মোহনায় ১৫০ বিঘা জমিতে অবস্থিত এই বনের বুক চিরে প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে রয়েছে অনামিকা লেক, পিকনিক স্পট, শিশুপার্ক, কনফারেন্স রুম, পাকা ট্রেইল, সেলফি পয়েন্ট, প্যাডেল চালিত বোর্ড। এছাড়া রয়েছে ইছামতির পাড়ে বসে সূর্যাস্ত উপভোগেরও অসাধারণ একটি জায়গা। নানামুখী বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা এই মিনি সুন্দরবনে এই এলাকার অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
জেলার সদর হতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ইছামতি নদীর তীরে শিবনগর মৌজায় অবস্থিত এ বনটি। এটি উপজেলার “রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র” নামে পরিচিত। ইছামতি নদীর তীরে ২০১২ সালে তৎকালীন উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারি খাস জমিতে সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা হয় এই রুপসী ম্যানগ্রোভটিকে। ১৮৬৭ সালে এখানকার টাউনশ্রীপুর গ্রামটিই পৌরসভা ছিল। এখানে তৎকালীন সময়ে প্রায় ১৮জন জমিদার ও বিখ্যাত ব্যক্তি বসবাস করতেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর টাউনশ্রীপুর পৌরসভা বিলুপ্ত হয়। জমিদারীত্বের অবসানের পর বিখ্যাত ব্যক্তিরা কলকাতা বা অন্যান্য বড় শহরগুলিতে চলে যান। ফলে টাউনশ্রীপুরের সেই শ্রী আর ধরে রাখা যায়নি। তবে সেই সব বিখ্যাত ব্যক্তিদের বাসস্থান ও অন্যান্য স্থাপনাগুলো এখনো এই এলাকার প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শণ হিসেবে থেকে গেছে। এসব কারণে শুধু ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট নয় টাউনশ্রীপুর গ্রামটি ঘিরেও রয়েছে পর্যটনের ব্যাপক সুযোগ।
ঘুরতে আসা দর্শণার্থী মোফাজ্জেল হোসেন বাবুসহ কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, মিনি সুন্দরবনটি ইছামতি নদীর পাড়ে হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। এপাশে বাংলাদেশ অপরপাশে ভারত আর মাঝখানে নদী। জায়গাটি অত্যান্ত নিরিবিলি হওয়ায় সব বয়সী মানুষের কাছে এটি অত্যান্ত প্রিয়। এছাড়া বিভিন্ন দিবস বা ছুটির দিনে বেশি দুরে না গিয়ে দেবহাটায় এসে সুন্দরবন ভ্রমণেরও স্বাদ পান তারা। নারী ও শিশুদের জন্য স্থানটি খুবই নিরাপদ বলেও দাবি তাদের।
পর্যটন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার সোহেল জানান, বিনোদন কেন্দ্রে এসে যাতে কেউ কোনো প্রকার হয়রানি না হয় সে ব্যাপারে তাদের স্টাফরা সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন। দর্শণার্থীদের বিনোদনের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান জেলার মধ্যে এই রুপসী ম্যানগ্রোভটি সকল শ্রেনীর মানুষের কাছে আকর্ষনীয় ও অন্যরকম অনুভূতির জায়গা উল্লেখ করে তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় এই বিনোদন কেন্দ্রটি অপরুপ সাজে সাজানো হচ্ছে এবং এখানে আরও অনেক কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় প্রশাসনের বিভিন্ন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এখানে এসে যেমন বিমোহিত হন ঠিক তেমনি সাধারণ মানুষও এখানে এসে প্রশান্তি পান। সবদিক বিবেচনা করেই ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এই বিনোদন কেন্দ্রটির আকর্ষণ অন্যরকম বলে জানান এই সরকারি কর্মকর্তা।
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: