সিআইবির সেই ওয়াকিদের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ

আদালত অবমাননাসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) থেকে সরিয়ে দেওয়া মুন্সী মুহাম্মদ ওয়াকিদের বিরুদ্ধে এবার সিআইবির কিছু কর্মকর্তার বার্ষিক মূল্যায়ন রিপোর্ট (পিএমএস) ডাউন করে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই তিনি প্রতিশোধমূলকভাবে করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা বলছেন, মুন্সী মুহাম্মদ ওয়াকিদের এই কাজটি ছিল বিশেষভাবে পরিকল্পিত প্রতিশোধমূলক একটি পদক্ষেপ। যেসব কর্মকর্তা অতীতে তার স্বেচ্ছাচারিতা, বেআইনি আদেশ ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের বিরোধিতা করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নেতিবাচক মন্তব্য, মূল্যায়নে অবমূল্যায়ন এবং পদোন্নতির পথ রুদ্ধ করে দেওয়ার মতো চক্রান্তমূলক পিএমএস তৈরি করেছেন।
তারা বলছেন, মুন্সী মুহাম্মদ ওয়াকিদ এতটাই বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিল যে তিনি এমনকি সিআইবি-সংক্রান্ত বিষয়ে মহামান্য আদালতের আদেশকেও তোয়াক্কা করতেন না। বিভিন্ন মামলায় আদালতের আদেশ তার পছন্দ না হলে তিনি তা ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করতেন এবং বাদীপক্ষকে সেবা না দিয়ে নানা উপায়ে হয়রানি করতেন। এমনকি সংশ্লিষ্ট রায় কার্যকর করতে এসে ভুক্তভোগীরা তার কাছে গেলে, তিনি তাদের প্রতি রূঢ়, তাচ্ছিল্যপূর্ণ ও অপমানজনক ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানাতেন।
সর্বশেষ, ২০২৫ সালের ৯ মার্চ হাইকোর্ট ডিভিশন তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। তিনি হাইকোর্টের প্রদত্ত নির্দেশ ইচ্ছাকৃতভাবে অমান্য করেন, যা আদালতের ভাষায় “দায়িত্বহীনতা ও বিচারব্যবস্থার প্রতি গভীর অবজ্ঞা”র বহিঃপ্রকাশ।
মুন্সী মুহাম্মদ ওয়াকিদ আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত হওয়ার পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট (ঐজউ) তাকে ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ সিআইবি বিভাগ থেকে সরিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে বদলি করে, যা প্রকারান্তরে তাকে সিআইবি’র দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত বিবেচনা করারই প্রকাশ।
তবে, বদলি আদেশ কার্যকর হওয়ার আগেই তিনি বার্ষিক কর্মমূল্যায়ন রিপোর্ট (চগঝ) নিয়ে একতরফা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যক্রম শুরু করেন। যেখানে অফিসিয়ালি ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা থাকা সত্ত্বেও, তিনি তড়িঘড়ি করে ১৩ এপ্রিলের মধ্যেই সিআইবি থেকে রিলিজ নেওয়ার পূর্বেই একাধিক কর্মকর্তার বার্ষিক কর্মমূল্যায়ন রিপোর্ট চূড়ান্ত করে যান।
জানা গেছে, মুন্সী মুহাম্মদ ওয়াকিদের নেতৃত্বাধীন সময়ে সিআইবি বিভাগ কার্যত তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। আইটি, জেনারেল ও পরিসংখ্যান এই তিন শাখার সমন্বয়ে গঠিত একটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হয়েও তিনি পুরো ডিপার্টমেন্ট পরিচালনা করতেন তাঁর আস্থাভাজন ৩-৪ জন কর্মকর্তার মাধ্যমে। বাকিদের কার্যত নিষ্ক্রিয় করে রাখা হতো।
যারা তার সিদ্ধান্ত বা নীতির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করতেন, তারা হতেন তার রোষানলের শিকার। ভরা মজলিশে অপমান, “চাকরি খেয়ে ফেলবো” জাতীয় প্রকাশ্য হুমকি, বার্ষিক কর্মমূল্যায়নে নেতিবাচক মন্তব্য দেওয়া এসব ছিল তার দৈনন্দিন আচরণের অংশ।
ফলে বহু মেধাবী ও সম্ভাবনাময় কর্মকর্তা হতাশ হয়ে বিভাগ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। যারা যেতে পারেননি, তারাও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং দায়িত্ব পালনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এর ফলে সিআইবি-তে একটি স্থায়ীভাবে আতঙ্কগ্রস্ত, নিরুৎসাহিত ও বিষণ্ণ কর্মপরিবেশ গড়ে ওঠে, যা দীর্ঘদিন ধরে বিভাগের কর্মদক্ষতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বাণিজ্য প্রতিদিনকে বলেন, এটা মূলত এইচআরডি দেখাশোনা করে। তারা চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে এটার ব্যাখ্যা চাইতে পারে।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: