আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন ২০২৫ উপলক্ষ্যে গৃহীত বহুমূখী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বির্তক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপ-পরিষদ ও সংগঠন উপ-পরিষদের এর যৌথ উদ্যোগে তরুণদের নিয়ে এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।
উক্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সারাবান তহুরা; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা আফরোজ।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ‘শুধু সমাজসংস্কারক নয় বরং রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ’ বিষয়ে পক্ষ দলে ছিলেন আইডিয়াল কলেজ ধানমন্ডি এর শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রচার ও গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক উপপরিষদ সদস্য মারওয়া জান্নাত মাইশা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও গবেষণা সহকারী এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি রাইটার্স হাব এর চিফ মাহামুদ খালিদ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাষ্টার্স এর শিক্ষার্থী ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অর্নব রায় পার্থ। বিপক্ষ দলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রিসার্চ সোসাইটি সদস্য এবং নারীপক্ষের সদস্য মুবিনা আক্তার মুন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সংগঠন উপপরিষদ সদস্য উম্মে ফাতেমাতুজ যোহরা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ও কবি জসীম উদ্দিন হল ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফজলে রাব্বী সরকার।
বিতর্ক শেষে বিচারক হিসেবে উপস্থিত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রকাশনা ও গবেষণা সম্পাদক সারাবান তহুরা বলেন, আজকের বিতর্ক সভায় বির্তাকিক দের যুক্তি খণ্ডন, আলোচনা আমাদের সমৃদ্ধ করবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা আফরোজ বলেন, বিতর্ক উচ্চারণে শুদ্ধ উচ্চারণের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি তথ্য উপস্থাপনে পুনরাবৃত্তি থেকে বিরত থাকার উপর বিতার্কিকদের গুরুত্ব দিতে হবে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, সংগঠনের বহুমুখী কাজের মধ্য দিয়ে তরুণদের যুক্ত হওয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে যা ইতিবাচক। নারীকে অগ্রগতিকে পিছিয়ে দিতে আজ নানা অপকর্ম হচ্ছে এসবের থেকে উত্তরণে রোকেয়ার কাছে আমাদের বারবার ফিরে যেতে হয়। রোকেয়ার কাজের পরিধি ছিলো বৃহত্তর। তিনি নারীর ভোটাধিকার, শিক্ষা, স্বাবলম্বী, রাজনীতি, সাধারণ প্রান্তিক নারীদের নিয়ে কাজ করেছেন সুতরাং নারী অধিকার আদায়ে জেন্ডারগত ধারণার মূল কথা এবং সমতার কথা তিনি আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে বলে গেছেন। তিনি সমাজ সংস্কার নন, নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ ও নন বরং একজন সমাজ চিন্তক।
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন যুক্তিবাদী সমাজ গঠনে বিতর্ক প্রতিযোগিতার এই বাকযুদ্ধ বড় ভূমিকা রাখে। এর মধ্য দিয়েই যুক্তিবাদী সমাজ গঠনের সাথে সাথে অন্যের মতামত শোনা ও তার মতামতকে শ্রদ্ধা করার দিকটিও ফুটে ওঠে। রোকেয়ার জীবন ছিল অল্প সময়ের কিন্তু তার মধ্যে যে সকল কাজ তিনি নারীর অগ্রযাত্রার লক্ষ্যে করে গেছেন সেসকল বিষয়ে জানা বোঝার চেষ্টায় যথাযথ সময়ের প্রয়োজন, যা তরুণদের যুক্তিবাদী সমাজ গঠনে সহায়তা করবে বলে মনে করি।
মডারেটরের বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কাজ এত বিস্তৃত যে তাকে এক গণ্ডিতে বেঁধে রাখা যায় না। বর্তমানে নারী বিদ্বেষীর সাথে সাথে নারীর প্রতি অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, সেখানে রোকেয়াকে ও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না; এই প্রেক্ষিতে রোকেয়াকে নিয়ে পুনরায় আলোচনা হওয়া জরুরি। রোকেয়া পাঁচটি কাজ আমাদের জন্য করে গেছেন- প্রথা ভাঙা; সামাজিক কাঠামোয় নারী পুরুষের মধ্যে থাকা অসমতা; চিন্তাশক্তির বিকাশ, নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও স্বাবলম্বী হওয়া এবং নারীকে সংগঠিত করা- এগুলি নারীকে শিক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে অর্জনের কথা বলেছেন। উনি যা বলেছেন তা কাজের মাধ্যমেও দেখিয়েছেন। তিনি আরও বলতেন, সাম্প্রদায়িকতা ও তথাকথিত ধর্মাচরণ নারীর অগ্রগতিতে বাধা দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে-যা এখনো ঘটছে। সুতরাং, যারা নারীকে বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে পথ দেখিয়েছেন তাদের চর্চা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় পক্ষ দল বিজয়ী হয়। পক্ষ দলের মধ্যে প্রথম শ্রেষ্ঠ বক্তা হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও গবেষণা সহকারী এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি রাইটার্স হাব এর চিফ মাহামুদ খালিদ; ২য় শ্রেষ্ঠ বক্তা হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাষ্টার্স এর শিক্ষার্থী ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অর্নব রায় পার্থ এবং তৃতীয় শ্রেষ্ঠ বক্তা হন বিপক্ষ দলের দলনেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ও কবি জসীম উদ্দিন হল ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফজলে রাব্বী সরকার। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রথম হন আইডিয়াল কলেজ ধানমন্ডি এর শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রচার ও গণ-মাধ্যম ও আন্তর্জাতিক উপপরিষদ সদস্য মারওয়া জান্নাত মাইশা; দ্বিতীয় হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রিসার্চ সোসাইটি সদস্য এবং নারীপক্ষের সদস্য মুবিনা আক্তার মুন; তৃতীয় হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সংগঠন উপপরিষদ সদস্য উম্মে ফাতেমাতুজ যোহরা।
বিতর্ক প্রতিযোগিতা শেষে এসময় আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন ২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ইপোষ্টার প্রতিযোগিতায় ৯ জন বিজয়ীদের নাম প্রকাশ করা হয়। বিজয়ীরা হলো: হুমায়রা তাবাসসুম; মাহি বিনতে মাসুদ, কৃষ্ণপদ সরকার, সাবরিনা, সৈয়দ রাশিদ আসিফ, মহুয়া চক্রবর্তী, আমানুর রহমান, মো: আনোয়ার রহমান, মারওয়া জান্নাত মায়শা।
উক্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী, সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপ পরিষদ সম্পাদক রীনা আহমেদ।
বিভি/পিএইচ




মন্তব্য করুন: