• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাত ও রফতানির মূখ্য মাধ্যম কৃষিভিত্তিক পর্যটন

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ৭ জুলাই ২০২৫

ফন্ট সাইজ
কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাত ও রফতানির মূখ্য মাধ্যম কৃষিভিত্তিক পর্যটন

দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি কৃষি হলেও এখন পর্যটন শিল্পেও উকি দিচ্ছে কৃষি ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প। আম বাগান, লিচু বাগান, পেয়ারা বাগান ও হাওড়সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষি প্রকল্পগুলো শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের বিকাশে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে।

খাদ্য ও অর্থকারী ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি প্রধানতম অবলম্বন হলেও কৃষিতে আধুনিকায়নের সাথে সাথে পর্যটন শিল্পের বিকাশেও দর্শনার্থী ও পর্যটকদের আকর্ষণ করছে কৃষির বিভিন্ন প্রকল্প। খামারবাড়ীর কৃত্রিম লেকের মৎস্য, প্রাণীসম্পদ ও শস্য উৎপাদনের আধুনিক প্রক্রিয়া আগ্রহ তৈরি করছে পর্যটক ও কৃষিপ্রেমীদের মাঝে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপ-পরিচালক মো: মাজহারুল ইসলাম বলেন, যেকোন ধরণের পর্যটন উন্নয়নের উদ্যোগকে প্রথমে বেসরকারি উদ্যোক্তারাই প্রথমে শুরু করেন পরে সরকার তাদের বিভিন্ন ধরণের সহায়তা দেয়। সুতরাং কৃষি পর্যটনের ক্ষেত্রেও চাহিদা অনুযায়ী বেসরকারি বিনিয়োগ আসবে বলে আশা করা যায়। কৃষি পর্যটন, গ্রাম পর্যটন বা কমিউনিটি কেন্দ্রীক পর্যটন এগুলো খুবই কাছাকাছি ধরণের পর্যটন। কৃষি পর্যটনের ক্ষেত্রে ফলজ, বনজ, মৎস ও প্রাণীসম্পদ সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের সাথে যোগাযোগ করে সময় উপযোগে উন্নয়নের চেষ্টা করে চলেছি।

সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পকে নগরী থেকে বের করে যদি বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক এলাকাগুলোয় সম্প্রসারণ করা যায়, তাহলে কৃষি শিল্প পর্যটন শিল্পের হাত ধরে এগিয়ে যেতে সহায়তা পাবে। পর্যটনের উন্নয়নে কৃষিকে সম্পৃক্ত করার জন্য এখন দরকার শুধু সময় উপযোগী উদ্যোগের। কারণ একদিকে যেমন কৃষিতে পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের বিষয়টি জড়িত; তেমনই দেশের কৃষিজ পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণে পর্যটন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

শুধু পর্যটন কেন্দ্র বা কৃষি ক্ষেত্র সম্প্রসারণ নয়, পরিকল্পিত প্রকল্প কৃষিতে জনসাধারণের বিনিয়োগ ও আগ্রহ বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবেও রূপ নিতে পারে। কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও দেশের কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আবদ্ধ জলাশয় কেন্দ্রীক ও কৃষিভিত্তিক পর্যটন।

ভাত খায় ঠিকই কিন্তু কীভাবে ধান হয় তা হয়তো কখনো দেখেনি এমন অনেকেই রয়েছেন শহরে। কৃষক কীভাবে লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে ফসল ফলায়, পুকুরে মাছ ধরছে, কৃষাণিরা কীভাবে ঢেঁকিতে ধান ভানে তা হয়তো শুধু টিভিতে দেখলেও বাস্তবে উপলব্ধি করেনি অনেকেই। সকালবেলা ফুল কুড়ানো, মাটির চুলার রান্না এগুলো শহুরে মানুষের কাছে স্বপ্নের মতোই মনে হলেও বাস্তবে এসব দেখা সুযোগ করে দিতে পারে কৃষি পর্যটন।  কৃষিতে পর্যটন হতে পারে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে এক ব্যতিক্রম ধারণা, যা বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত শক্ত হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শুধু প্রকৃতি প্রদত্ত উপকরণকে রূপান্তরের মাধ্যমে ভ্রমণপিপাসু বিশ্ববাসীর সামনে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করে পর্যটনশিল্পকে আরও লাভজনক শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠা সম্ভব।

কৃষি পর্যটনের মাধ্যমে পর্যটকরা গ্রামীণ কৃষির ঐতিহ্য, দর্শন, সংরক্ষণ ও উক্ত অঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জীবনধারা উপলব্ধি করতে পারবে খুব সহজে। এই জাতীয় পর্যটন গ্রামীণ সংস্কৃতির স্থায়ীত্বকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারে। ভ্রমণকারীরা আবিষ্কার করবে জীবনের নতুন গল্প। ইতোমধ্যে বান্দরবনের লামা, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু ইকোভিত্তিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগান, দিনাজপুরের লিচু বাগান, স্বরূপকাঠির পেয়ারা বাগান, যশোরের গাদাখালীর ফুলের বাগান, নরসিংদীর লটকন বাগান, টাঙ্গাইলের অনারস বাগান- এমন আরও অসংখ্য কৃষি পর্যটন। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের জন্য এই জায়গাগুলো ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দত্তরাইল গ্রামে পাহাড়-টিলা ঘিরে গড়ে উঠেছে কৃষি পর্যটন। সারি সারি উঁচু-নিচু পাহাড়-টিলা। সেখানকার ফল বাগানগুলোতে আছে আনারস, কমলা, মাল্টা আর লেবুগাছ। আছে কাজুবাদাম এবং কফিগাছও, যা নতুন ফসল হিসেবে বাংলাদেশের কৃষিতে সম্ভাবনার উকি দিচ্ছে। টিকিট কেটে মানুষ সেখানকার ফলবাগানে ঢুকছে, ঘুরছে এবং দেখছে। টিলায় বসে অনেকেই কিনে খাচ্ছে টাটকা আনারস ও লেবুর জুস। কেউ কেউ কিনে ব্যাগ ভরে নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতেও। এসব টিলা আগে অনাবাদি থাকলেও এখন রসালো ফলের ঘ্রাণ ও সবুজে আবৃত।এ দৃশ্যপট বদলে যায় গত কয়েক বছরে। পতিত পাহাড়-টিলা ভরে গেছে আনারসের চারায়। এখন আনারস বিক্রি করেই কোনো কোনো চাষি বছরে কোটি টাকা আয় করছে। এসব ফলবাগানের উদ্যোক্তাদের প্রায় সবাই প্রবাসী। এ উদ্যোগের কারণে দেশে বাড়ছে কৃষি ও পর্যটন খাতের কর্মীদের কর্মসংস্থান।

ঢাকার অদূরেই কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া গ্রামে রয়েছে গ্রিনারি এগ্রোর খামার। ঢুকতেই চোখে পড়বে বিশাল কয়েকটি পুকুর। এসব পুকুরে চাষ হচ্ছে মাছ। মাছের খাবারে কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার হয় না। পাশেই রয়েছে সবজি ক্ষেত। মৌসুমভেদে শাক ও সবজি ফলানো হয় এখানে। এসব সবজি স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আগত পর্যটকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণে ভূমিকা রাখছে। আরও উৎপাদন হয় মৌসুমি ধান ও গম। রয়েছে দেশীয় ফলের সমাহারও।

কৃষিভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন অঞ্চলকে মূলধারার পর্যটন খাতের স্বীকৃতি দেয়া গেলে এসব স্থান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফসল, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিদের পরামর্শ নিয়ে করা উচিত। নীতিমালা প্রণয়নের সুবিধার্থে এবং পর্যটন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নীতি-কাঠামোতেও কৃষি পর্যটনের ধারণাটি স্বীকৃত। কৃষিতে পর্যটন যোগ করা হলে কৃষক এবং গ্রামীণ এলাকার জন্য বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব, যা গ্রামীণ অর্থনীতি ও জীবিকা নির্বাহে অবদান রাখতে পারে।

এছাড়াও দেশীয় সবজি ও ফলের উপযুক্ত প্রক্রিয়ারকরণ ও রফতানির ক্ষেত্রেও কৃষিভিত্তিক পর্যটনের উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের কৃষকরা যখন উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য পান না অথবা হিমাগারের উচ্চ ব্যয়ের জন্য নিজের উৎপাদিত পণ্য গলার কাটা হয়ে দাঁড়ায় তখন কৃষিভিত্তিক পর্যটন কৃষকদের দুঃখ ঘোছাতেও অনেকটা অবদান রাখতে পারে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, পর্যটন খাতে প্রথমে পরিকল্পনা ও নীতিমালার খসড়া প্রনয়ণ প্রধানতম কাজ। কৃষি ভিত্তিক পর্যটনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশীয় কৃষির বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বেশ কয়েকটি মেলায় ইতোমধ্যে আমাদের দেশীয় পণ্য প্রশংসা কুড়িয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়ও আমাদের দেশীয় কৃষিপণ্যের খাদ্য উৎসবের আয়োজন করা হয়। সেগুলোতেও আমাদের উৎপাদিত পণ্যে বিদেশীদের মধ্যে ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সেখান আমরা বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোকেও আনার চেষ্টা করি।

সর্বশেষ আমরা যে আয়োজনটি করেছে সেখানে দর্শনার্থীদের বিপুল আগ্রহ ছিল এবং ভালো বেচাকেনা হয়েছে। আমাদের খাদ্যপণ্যের ব্রান্ডিংয়ের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত আমাদের খাবারের পরিচয় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্যই আমরা এটি করি। সামনে আমাদের এমন আরো একটি মেলা প্রাক্তন বাণিজ্যমেলা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন খাবার প্রতিষ্ঠান এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানগুলোও থাকবে। বর্তমানে দেশীয় বিভিন্ন পণ্য ও পর্যটন আমন্ত্রণ নিয়ে আমরা ৩৬টি জেলা থেকে কাজ করা হচ্ছে।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: