রাম্বুটান চাষে সফল ডা: আকেইপ্রু চৌধুরী, পাহাড়ে নতুন সম্ভাবনা

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আকেইপ্রু চৌধুরী একজন সফল কৃষক। তার বাগানে শোভা পাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ ৬ দেশের রাম্বুটান। পাহাড়ের ঢালু জমিতে রোপণের মাত্র ৪ বছরের মধ্যে মিলছে ফলন। ডাক্তার আকেইপ্রু চৌধুরীর সফলতা দেখে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করছে রাম্বুটান চাষে। পাহাড়ে মাটি ও আবহাওয়া রাম্বুটান চাষে বিশেষভাবে উপযুক্ত বলছে কৃষি বিজ্ঞানীরা।
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনস্বাস্থ্য ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ডা. আকেইপ্রু চৌধুরী। তার বাড়ীর পাশে আড়াই একর পাহাড়ের ঢালু জমিতে থোকায় থোকায় ঝুলছে ইন্দোনেশিয়ান বিনজাই, থাইল্যান্ডের রংবিয়ান, ফিলিপাইনের কুইজন ও ভারতের কেরালাসহ ৬ দেশের লাল ও হলুদ রঙের রাম্বুটান।
তিনি থাইল্যান্ড সফরে গিয়ে রাম্বুটান খেয়েছিলেন। ২০২১ সালে শখের বসে বিভিন্ন দেশ থেকে রাম্বুটানের চারা সংগ্রহ করে বাড়ির পাশের আড়াই একর ঢালু জমিতে প্রাথমিকভাবে ২২০টি চারা রোপণ করেন। ২০২৪ সালে প্রথম কিছু গাছে ফলন আসলেও চলতি মৌসুমে প্রতিটি গাছে বাম্পার ফলন হয়েছে। কেবল নিয়মিত সেচ দেওয়ার মাধ্যমে পাহাড়ে ঢালু জমিতে এটি চাষ উপযোগী। ডাক্তার আকেইপ্রু চৌধুরীর সফলতা দেখে অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন রাম্বুটান চাষে।
স্থানীয় উদ্যোক্তা সাবাই মারমা বলেন, এই ফল আগে শুধু টিভিতে দেখতাম। এখন নিজের এলাকায় দেখতে পাচ্ছি, খুবই ভালো লাগছে। এই ফল চাষে আমাদের মনোবল বেড়ে গিয়েছে,আমরা উপজেলাবাসী দ্রুতই আরো বৃহৎ আকারে চাষ করবে।
মহালছড়ি প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, রাম্বুটানের এই সাফল্য শুধু একটি ব্যক্তি বা চিকিৎসকের নয়, পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম তথাপি মহালছড়ি উপজেলাবাসীর। এই ফল পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষির সম্ভাবনাকেই নতুন করে চিনিয়ে দিচ্ছে।
রাম্বুটান ফল ডিম্বাকার থেকে গোলাকার। কাঁচা ফলের রঙ সবুজ, পাকলে রঙ লাল হয়ে যায়। খোসা লম্বা ও কাঁটাযুক্ত। তবে কাঁটাগুলো ততো শক্ত নয়। খোসা ছাড়ালে ভেতরে লিচুর মতো সাদা শাস পাওয়া যায়। শাসের স্বাদ টক-মিষ্টি ও রসালো।
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনস্বাস্থ্য ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ডা: আকেইপ্রু চৌধুরী বলেন, মূলত শখের বসে বিভিন্ন দেশ থেকে চারা সংগ্রহ করে আড়াই একর পাহাড়ের ঢালে রাম্বুটান চাষ। শুরুতে পরিবারিক ও প্রতিবেশীদের মাঝে সরবরাহ করা হলেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ভাবে সম্ভাবনা দেখছেন। তিনি বলেন রাম্বুটান অনেকটা ঔষধি ও পুষ্টিগুণ রয়েছে। বেকার যুবকেরা চাইলে এটি চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
মহালছড়ি উপ-সহকারী কষি কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ রসুল বলেন, ডাক্তার আকেইপ্রু চৌধুরীর সফলতা দেখে অনেকে রাম্বুটান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলে পাহাড়ে রাম্বুটান চাষে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বিদেশ থেকে রাম্বুটান আমদানি না করে বরং রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে।
পাহাড়ে মাটি ও আবহাওয়া বিদেশী ফল রাম্বুটান চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। পার্বত্য এলাকার মাটি অম্লীয় হওয়ায় পাহাড়ের ঢালু জমি ও পর্যাপ্ত সূর্যের আলো রয়েছে এমন স্থানে রাম্বুটান চাষের পরামর্শ দিয়েছেন এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
রাম্বুটান এখন শুধু একটি ফল নয়, হয়ে উঠছে পাহাড়ে কৃষি বিপ্লবের নতুন নাম।
রাম্বুটান পাইকারি মূল্য ১০০০-১১০০ টাকা হলেও খোলা বাজারে বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ১৩০০-১৪০০ টাকা। সুপারশপে এর দাম আরো বেশি।
বিভি/এসজি
মন্তব্য করুন: