• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০১ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

প্রান্তিক পর্যায়ে গো-খাদ্য নিশ্চিতকরণে পিকেএসএফ-এর আরএমটিপি

মজনু সরকার

প্রকাশিত: ১৫:২৭, ২৩ নভেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৭:২৪, ২৩ নভেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
প্রান্তিক পর্যায়ে গো-খাদ্য নিশ্চিতকরণে পিকেএসএফ-এর আরএমটিপি

ইউনিয়ন ভিত্তিক স্থাপিত বাণিজ্যকভাবে রেডি সাইলেজ ফিড উৎপাদন ও বাজারজাতকারী উদ্যোক্তা।

ডিএলএস-২০২২ এর তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশজ উৎপাদিত দুধ ও মাংস চাহিদা অনুযায়ী ১৯৩ দশমিক ৩৮ মিলি এবং ১৩৬ দশমিক ১৮ গ্রাম সরবরাহ করছে। কেননা ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (FAO)-এর সুপারিশ অনুযায়ী একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিন ন্যূনতম ২৫০মিলি দুধ ও ১২০ গ্রাম মাংস খাওয়া প্রয়োজন।

এ তথ্যানুযায়ী দেশে এখনও দুধ উৎপাদনে প্রায় ২২ দশমিক ৬৪ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে চাহিদা অনুযায়ী মাংস উৎপাদনে তথ্যগত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কথা বললেও ভক্ষণের দিক দিয়ে অনেক পিছনে রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ফুড অর্গাইজেশনের মতে, মানবদেহের সুস্থতার জন্য প্রতি বছর মাথাপিছু কমপক্ষে ৪৮ কেজি মাংস খাওয়ার প্রয়োজন, যেখানে বর্তমানে দেশের মানুষ গড়ে ৪-৪.৫ কেজি মাংস খাচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে বছরে প্রায় ১০-১২হাজার টন গোমাংস এবং ১২ হাজার মেট্রিক টন মহিষের মাংস আমদানি হচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমানে প্রতি কেজি গো-মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৮০-৭০০টাকায়, খাসির মাংস ৯০০-৯৫০ টাকায় এবং মহিষের মাংস ৫৫০-৬৫০ টাকায়। এ তথ্যগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে মাংস উৎপাদনেও আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

প্রাণির উৎপাদনশীলতা ও পুণরুৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ঘাটতি অনেকাংশে পুরণ করা সম্ভব। প্রাণির উৎপাদনশীলতা ও পুণরুৎপাদনশীলতা দুইটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে থাকে একটি হলো প্রাণির জেনেটিক পটেনসিয়ালিটি এবং অন্যটি হলো পরিবেশগত সাপোর্ট। প্রাণীর জেনেটিক পটেনসিয়ালিটি তখনি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রকাশিত হবে যখন তাকে যে পরিবেশে সে লালিত পালিত হয়েছিল সেই পরিবেশ যথাযথভাবে দেওয়া। অন্যথায় সে তার জেনেটিক পটেনসিয়ালিটি অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারে না।

ইউনিয়ন ভিত্তিক ঘাস, প্যাকেটজাত খড়, প্যাকেটজাত ঘাস ও রেডি সাইলেজের ডিলার পয়েন্ট।বড় পরিসরে পরিবেশগত সাপোর্ট বলতে প্রজনন, খাদ্য, বাসস্থান, রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনাসহ অন্য প্রতিপালন ব্যবস্থাপনাকে বুঝায়। পরিবেশগত সাপোর্টের মধ্যে প্রাণির খাদ্য ব্যবস্থাপনা অন্যতম প্রধান, যা প্রাণির উৎপাদনশীলতা ও পুনুরুৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসাবে কাজ করে থাকে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, খামারিদের প্রাণি প্রতিপালন ব্যয়ের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ব্যয় খাদ্য ব্যবস্থাপনায় হয়ে থাকে। খাদ্য ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের মধ্যে আবার প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ব্যয় হয়ে থাকে দানাদার খাদ্য ক্রয়ে, যা দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রাণির উৎপাদনশীলতা ও পুনুরুৎপাদনশীলতা ঠিক রাখার জন্য প্রাণির বয়স, ওজন এবং তার উৎপাদন অবস্থার উপর ভিত্তি করে তাকে অন্য খাদ্যের (কাচাঘাস ও খড়) সঙ্গে অবশ্যই পুষ্টিকর সুষমও দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।

আমাদের দেশের বেশির ভাগ খামারি গাভী ও বিফ ক্যাটলকে তার বয়স, ওজন এবং উৎপাদন অবস্থার উপর ভিত্তি করে খাদ্য প্রদান করে না, তারা সাধারনত ধারণার উপর ভিত্তি করে প্রাণিকে প্রধানত খড় ও কাঁচাঘাস দিয়ে থাকে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত গমের ভুসি, ধানের কুড়া, খইল, ডাল ভাঙ্গা, ভুট্টা ভাঙ্গ, চালের খুদ, লবন, ডাল জাতীয় বিভিন্ন উদ্ভিদ (মাটি কলাই, খেসারি, মুগ, মুসর ইত্যাদি) ইত্যাদি দানাদার খাদ্য হিসেবে দিয়ে থাকে। ফলে এই ধরনের খাদ্য প্রদান সুষম হয় কি-না সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়, কেননা এই ধরনের খাদ্য প্রদানে সাধারনত সুষম পুষ্টির বিষয় বিশেষ করে মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্টে (ভিটামিন ও মিনারেল) এর ঘাটতি থেকে যায়।আবার যারা রেডি ফিড/স্থানীয় প্রাপ্ত দানাদার খাদ্য প্রদান করে থাকে সেক্ষেত্রে অনেক সময় অনেক খামারি ওভার ফিডিং অথবা আন্ডার ফিডিং করে থাকে। এছাড়া এখন পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ মহিষকে কোন প্রকার দানাদার খাদ্য প্রদান করা হয় না। ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে রেডি ফিডের ব্যবহার এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি। ফলে অধিকাংশ প্রাণি থেকে আমার আমাদের কাংখিত মাত্রায় উৎপাদন পাচ্ছি না। প্রাণি থেকে কাংখিত মাত্রায় উৎপাদন পেতে অবশ্যই তাকে অন্য উন্নত ব্যবস্থাপনার সঙ্গে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাঁসের পাশাপাশি তার প্রয়োজনানুযায়ী পুষ্টিকর সুষম দানাদার খাদ্য প্রদান করতে হবে।

ইউনিয়ন ভিত্তিক খামারে খামারে হোম ডেলিভারি দেয়ার বড় ঘাস ব্যবসায়ী।এ ব্যাপারে খামারীদেরও প্রাণির ফিডস এন্ড ফিডিং বিষয়ে শিক্ষিত করতে হবে। এছাড়া ফিড কোম্পানিগুলোকেও ফিডের ইনগ্রেডিয়েন্টের জন্য আমদানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে দামের বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের সর্বত্র গুণগতমানের রেডি ফিড সহজলভ্য করতে হবে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোকে এমবেডেড সার্ভিস হিসেবে খামারীদের সচেতনতা সৃষ্টিমুলক কার্যক্রম অব্যহত রাখতে হবে। কেননা দেশে এখনও প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ গরু (২৪৭ লাখ), ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ মহিষ (১৫.০৮ লাখ), ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ছাগল (২৬৭.৭৪ লাখ) ও ভেড়া (৩৭.৫৩ লক্ষ) সুষম রেডি দানাদার খাদ্য কাভারেজের বাহিরে রয়েছে।

দেশের প্রাণিঘণ ১২জেলার (ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নওগা, বগুড়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, ঠাকুরগাঁও) ৩৬টি উপজেলার ২লক্ষ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার খামারীর গবাদিপ্রাণির উৎপাদশীলতা (দুধ ও মাংস) ও পুনুরুৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত প্রাণিজ পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করনের লক্ষ্যে বর্তমানে ইফাদ (IFAD), ড্যানিডা (DANIDA) এবং পিকেএসএফ-এর যৌথ অর্থায়নে পরিচালিত রুরাল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ ট্রান্সফরমেশন প্রোজেক্ট (আরএমটিপি) বা গ্রামীণ গ্রামীণ মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ রূপান্তর প্রকল্পের আওতায় ৮টি সহযোগী সংস্থা (এফডিএ, জিজেইউএস, ইপসা, গাক, এনডিপি, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, ইএসডিও ও দাবি মৌলিক উন্নয়ন)-এর মাধ্যমে নিরাপদ মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার উন্নয়ন বিষয়ক ৮টি ভ্যালু চেইন উপ-প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। 

সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক ডিলার পয়েন্ট/ডিলারশীপ স্থাপনের মাধ্যমে খামারী পর্যায়ে রেডি ফিডের প্রাপ্যতা বাড়ানোর জন্য পিকেএসএফ -এর সহযোগী সংস্থা এনডিপি-এর সাথে নারিশ ফিড কোম্পানির চুক্তি স্বাক্ষর।এই প্রকল্পের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে স্থানীয় পর্যায় ফিডস এন্ড ফডার সাপ্লাই চেইন শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে ক্লাস্টার/ইউনিয়ন ভিত্তিক উন্নতজাতের  ঘাস, প্যাকেট খড়, রেডি সাইলেজ এবং রেডি ফিডের ডিলার পয়েন্ট/ডিলারশীপ স্থাপন, উদ্যোক্তা/ব্যবসায়ী তৈরির বিজেনস মডেল-এর মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে গুনগতমানের কাঁচাঘাস, রেডি প্যাকেট খড়, রেডি প্যাকেট কাঁচা ঘাস, রেডি সাইলেজ, রেডি দানাদার ফিডের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করা। কেননা দেশে দ্রুত নগরায়নের কারণে ঘাস চাষের জন্য ব্যবহৃত আবাদী ও অনাবাদী জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। একইসঙ্গে দানাদার খাদ্যের জন্য মানুষের খাদ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে।

বগুড়া জেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক ডিলার পয়েন্ট/ডিলারশীপ স্থাপনের মাধ্যমে খামারী পর্যায়ে রেডি ফিডের প্রাপ্যতা বাড়ানোর জন্য পিকেএসএফ -এর সহযোগী সংস্থা গাক -এর সাথে নারিশ ফিড কোম্পানির চুক্তি স্বাক্ষর।

এই লক্ষ্যে বর্ণিত জেলাগুলোতে ইউনিয়নভিত্তিক বাণিজ্যকভাবে সাইলেজ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের জন্য উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি দেশের স্বনামধন্য ফিড কোম্পানিদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে রেডি ফিড সম্প্রসারণের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত জুলাই, ২০২২ মাসে বাংলাদেশের অন্যতম গবাদিপ্রাণির খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নারিশ ফিড কোম্পানির (Nourish Feed Company) সঙ্গে পিকেএসএফ-এর ৮টি সহযোগী সংস্থার (এনজিও) একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে পিকেএসএফ, নারিশ, সাইলেজ উদ্যোক্তা এবং সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে পরিচালিত বর্ণিত কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে আগামী তিন বছর সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে। আর এই কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন প্রাণির উৎপাদনশীলতা (দুধ ও মাংস) ও পুনুরুৎপাদনশীলতা এবং নিরাপদ প্রানিজ পন্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে খামারীদের আয় বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের প্রাণিজ পুষ্টির ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ হবে।

লেখক: ব্যবস্থাপক, পিকেএসএফ।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: