• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

ঠাকুরগাঁওয়ে বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়াজ বীজের চাষ শুরু, কৃষি বিভাগে উচ্ছ্বাস

খোদাবক্শ ডাবলু জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ২০ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ০৮:৫৮, ২০ মার্চ ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ঠাকুরগাঁওয়ে বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়াজ বীজের চাষ শুরু, কৃষি বিভাগে উচ্ছ্বাস

ঠাকুরগাঁওয়ে বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়াজ বীজের  আবাদ শুরু, কৃষি বিভাগে উচ

অনুকূল আবহাওয়া ও মাটির গুণগত মান ভালো হওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে বাণিজ্যিভাবে আবাদ শুরু হয়েছে পেঁয়াজ বীজের। বীজ উৎপাদনে লাভবান হওয়ায় অনেকে ঝুঁকছেন পেঁয়াজ বীজ চাষে। চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, বীজ সরবরাহ, কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শসহ বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা দিয়ে আসছে দেশের কৃষি উদ্যোক্তারা।  

এদিকে কৃষি বিভাগ বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে এই কৃষি উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানিয়েছেন। খুশি মনে বলছেন, এতে একদিকে দক্ষ হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা অন্যদিকে কর্মসংস্থানও বাড়ছে জেলায় ।

হিমালয় পর্বত নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে শীত আসে তাড়াতাড়ি এবং যায় দেরিতে। তাই খাদ্য-শস্যের বীজ উৎপাদনের উপযুক্ত স্থান এ জেলা। তারই ধারাবাহিকতায় ধান, গম, আলুসহ বিভিন্ন রকম সবজির পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়াজের বীজও উৎপাদন শুরু হয়েছে এখানে। পাবনা, রাজশাহী ফরিদপুরসহ পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী বিভিন্ন জেলা হতে কৃষি উদ্যোক্তারা এখানে এসে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে বিনিয়োগ করছেন। নিজে  এবং চুক্তির মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের দিয়েও পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করাছেন তারা। 

পেঁয়াজ বীজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা

পাবনা জেলার অতিথি উদ্যোক্তা কৃষক আরসেদ আলী খাঁন জানান,  এবছর আমি নিজে এবং চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের দিয়ে ৫০ শতকের বিঘায় ০১ শত ২৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজ আবাদ করেছি। গত কয়েক বছরে ভালো ফল পেয়েছি আমি। ৫০ শতকের বিঘায় ০৬ মন পেঁয়াজ বীজ পাবো বলে আশা করছি। এক জাতের সাথে আরেক জাত যেন মিলিয়ে না যায় তার জন্য দুই তিন কি:মি: ফাঁকে পেঁয়াজের বীজ আবাদ করি আমি। আমার এখানে ২৫ থেকে ৩০ জন শ্রমিক বছরের ০৬ মাস ধরে কাজ করে। ফলন ভালো ও অধিক লাভের আশায় অন্য জেলার অতিথি উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেক কৃষকদেরও দিন দিন  আগ্রহ বাড়ছে পেঁয়াজের বীজ চাষে । 

অতিথি উদ্যোক্তারা স্থানীয় জমির মালিকদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে জমি লিজ নিয়ে  এবং চুক্তিকৃত কৃষকদের দিয়ে তাহের পুরি, কিং, কুইন, সুক সাগর ও কিং সুপার  নামের পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করছেন । প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজ বিক্রি হয় প্রকারভেদে ২.৫ থেকে ০৩  হাজার টাকা দরে। সেই হিসেবে এই বীজ প্রতি মণ প্রায় ০১ লাখ টাকার উপরে বিক্রি করছেন কৃষকরা। এদিকে ৫০ শতকের এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে খরচ হয় জমিভেদে ৫৫ হাজার থেকে ০১ লক্ষ টাকা। আর বীজ উৎপাদন করতে সময় লাগে ০৫ থেকে ০৬ মাস।

 এই মৌসুমে প্রায় ১২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করা হয়েছে

কৃষকরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে বীজ উৎপাদন খুব ব্যাহত হয়। অনেক সময় পঁচন ও গলাকাটা রোগে আক্রান্ত হয় এই পেঁয়াজের বীজ ক্ষেত।  এই রোগ নিরসনে চাষিরা রোগরাল, নেক্সমিলে বোরিক এসিড ও এমিটফ কীটনাশক ব্যবহার করেন বলে জানান। এবছর প্রাকৃতিকভাবে পরাগায়ন ঘটছে না বলে ফুল ও কদমে হাত দিয়ে পরাগায়ন করছেন শ্রমিকরা। স্থানীয় আরো অনেক কৃষক  এই আবাদে উদ্ভুদ্ধ হয়ে আগামীতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। তারা বলছেন, অন্যান্য আবাদের চেয়ে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে মুনাফা অনেক বেশী। 

জেলার খামারবাড়ী’র কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলায় এই মৌসুমে প্রায় ১২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করা হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় ৫০ হেক্টর বেশী। এই আবাদের মাধ্যমে জেলার বাহিরের অতিথি উদ্যোক্তারা একদিকে যেমন স্থানীয় কৃষকদের দক্ষ করে তুলছেন পাশাপাশি শ্রমিকদেরও কর্মসংস্থান বাড়ছে। 

তিনি আরো বলেন, যদি কোন কৃষক পেঁয়াজের বীজ ক্ষেত হতে মধু আহরণে আগ্রহী হন তবে তারা মধু সংগ্রহের মৌমাছির বক্স বিনামূল্যে কৃষকদের সরবরাহ করবেন। যাতে করে কৃষকরা আরো লাভবান হবে বলে তিনি আশা করেন।

যথপোযুক্ত আবহাওয়া এবং উর্ব্বর মাটির কারণে পেঁয়াজসহ অন্যান্য বীজ উৎপাদনে উদ্যোগতারা বেছে নিবে এই জেলাকে, সাথে সাথে এগিয়ে আসবে সরকার এই প্রত্যাশা জেলাবাসীর। 

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: