নামের শেষে থাকা ‘ভূঁইয়া’ শব্দের মানে কী?
ভূঁইয়া বা ভূমিয়া বাংলা শব্দ যা দিয়ে ভূমির অধিকারী কৃষক বোঝানো হতো। ফার্সি শব্দ মজুমদার একই জিনিস বুঝায়। তবে ভূমিরাজস্ব আদায়ের জন্য একটি ক্ষুদ্র এলাকায় তালুক প্রতিষ্টা করে সেখানে একজন তালুকদারকে কর আদায়ে নিযুক্ত করা যেত। কিছু তালুকদার নিজেকে ভূঁইয়া বা মজুমদার হিসাবে বিবেচনা করতে পারতেন, কেননা তিনি যাদের কাছ থেকে রাজস্ব নিতেন, তাদের একজন তিনি নিজেই, একজন বড় কৃষক।
রাজস্ব আদায়ের জন্য একটা বড় এলাকায় জমিদার নিয়োগ দেয়া হতো। জমিদারগণ নিজেদেরকে রাজা, রায়, নওয়াব এইসব ভারিক্কি উপাধি নিতেন। সরকার তাদের কেউ কেউকে রায়বাহাদুর, রাজাবাহাদুর, নওয়াব, খানবাহাদুর এইসব উপাধি দিতেন।
চতুর্ধুরীণ হলেন এমন লোক যিনি জমির চার দিকের সীমা মেপে ঠিক করতেন। এরা প্রভাবশালী হয়ে ক্রমে চৌধুরী নাম নেন। অনেক চৌধুরী সার্ভেয়ার হিসাবে মাঠে কোন জমির সীমান কি সেসব ঠিক করতে গিয়ে নিজেই জমিদার তালুকদার হয়ে উঠেন। ফলে দেখা যায় বেশ কিছু জমিদার নিজেকে রায়চৌধুরী বলছেন।
হিন্দু ও মুসলমান দুই সমাজেই চৌধুরী, মজুমদার, তালুকদার, মুন্সি (কেরাণী, লেখক, রেজিস্ট্রার) দেখা যায়। কিন্তু মুসলমানগণ নিজেদেরকে রায় আর হিন্দুরা নিজদেরকে খান বলতে চাইতেন না। খান মূলতঃ সেনাবাহিনীর কর্তা, মিলিটারী লোক, কিন্তু রায় মূলতঃ সিভিলিয়ান লোক। কিন্তু লোক পেশাদার নামকে যখন বংশ পদবী করে ফেলে, তখন তা যা কিছু হতে পারে।
কাজী নামটা বিচারকের পদবী, কিন্তু লোকে সেটাকে বংশ পদবী হিসাবে নিতে পারে। পাঠান-মোগল আমলের ফার্সি পদবী জায়গীরদার (করমুক্ত জমির মালিক), চাকলাদার (আস্ত একটা চাকলা /উপ-প্রদেশ এর জমির কর্তা), মহালদার (জল্মহালের কর আদায় কারী), দস্তিদার (রাজবাড়ীর ব্যঙ্কুয়েট হলের কর্তা) ইত্যাদি দার প্রত্যয় যুক্ত পদবী দেখা যায়। সেনাবাহিনীর ফার্সী পদবী ছিল জমাদার, হাবিলদার, রিসালদর ইত্যাদি (ক্যাপ্টেন, মেজর, কর্নেল এইসব ইংরেজি পদবী নয়)।
খাজানা আদায়কারী ছিলেন তহশীলদার। তারা হয়তো ভূইয়া আর চৌধুরী আর খান সাহেবদেরকে বড় করদাতার উপযোগী মর্যাদা দিতেন। তহশিলদার এর কাচারিতে খাজানা দিতে গিয়ে সাথে নিতেন উকিল আর মুখতারকে। মুখতার মানে সলিসিটর, যার কাজ ছিল খাতির আদায় করা। সূত্র: কোরা
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: