গণ সংস্কৃতির নতুন বয়ান

"আউল বাউল লালনের দেশে, মাইকেল জ্যাকসন আইলোরে"
একটি গানের পংক্তি যা কিনা প্রাচ্য ও প্যাশ্চাত্যের উভয় অংশের কথা বলতে চাইছে, কিন্তু কতটা এবং এর ভেতর লুকিয়ে আছে দুটি দেশের আলাদা সংস্কৃতির গন্ধ। হ্যাঁ সংস্কৃতি বা কৃষ্টি,
"সংস্কৃতি হলো মানুষের মনও আত্মার বিস্তার"
- জহরলাল নেহরু
কৃষ্টি হলো সেই জটিল সামগ্রিকতা যার মধ্যে অন্তর্গত আছে জ্ঞান , বিশ্বাস, নৈতিকতা, শিল্প, আইন, রাজণীতি, আচার এবং সমাজের একজন সদস্য হিসাবে মানুষের দ্বারা অর্জিত অভ্যাস। এটি একটি গভীর দৃষ্টিভঙ্গি ও তৈরি করে মানুষের মাঝে। সংস্কৃতি প্রবাহমান বরং তা স্থানিকতাকে ছাড়িয়ে এগিয়ে চলে দেশ, কাল সীমানা অতিক্রম করে গণ মানুষের মাঝে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে।
তেমনি কিছু তরুণের মাঝে চিত্রকলার পাশ্চাত্য ধারার প্রাতিষ্ঠানিক রুপকে পাশ কাটিয়ে, একটি জনপ্রিয় শিল্প নিয়ে বক্তব্য পেশ করছে সমাজের মানুষের মাঝে তা হলো পপ কালচার বা গণ সংস্কৃতি বলা হয়। কখনো কখনো সুক্ষ্ম শিল্পের সাথে
বৈপরীত্য হিসাবে স্বীকৃত হয়।
রাজধানীর লালমাটিয়ার গ্যালারী দ্বীপের সমস্তটা জুড়ে এই চার শিল্পীর নানা আলাপ ছড়িয়ে দিয়েছে ওরা,খনিকটা প্রাচ্যে দাড়িয়ে পাশ্চাত্যের মহান শিল্পী পাবলো পিকাসোকে বলে উঠছে " Pablo ঠিক aso" হ্যা প্রদর্শনীর শিরোনাম" Pablo ঠিক aso"।শুধু যে চিত্রকলা তা নয়,স্থাপনা শিল্প আছে প্রদর্শনীতে,
"সংস্কৃতি আমার ব্যক্তিত্ব ও পরিচয় বহন করে"
- এম, এম, মনজাজের
প্রদর্শনীর বক্তব্য এক কিন্তু কাজের ধরনের জন্য তাদের আলাদা ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।পোষ্ট-মর্ডান শিল্পের প্রথমেই আলোচনায় আসে পপ আর্ট, ১৯৫০ দশকে শুরু হয় কিন্তু ১৯৯৬০ এর দশকে সামাজিক আন্দলনের ফলে পপ আর্টের দ্রুত বিকাশ ঘটে। ফ্যাশন থেকে মিউজিক সবক্ষেত্রেই এই পপ কালচারের দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং তা মার্কিন মুল্লুকে শুরু হয়। ফলে দেখা যায় কিছু শিল্পী যারা প্রাতিষ্ঠানিক আচারনের বাইরে গিয়ে তাদের ব্যক্তিত্বের কথা জানান দিচ্ছেন যেমন আমরা "Jean Michel Basquit" এক কথা বলতে পারি, যিনি রাস্তাকে বেছে নিয়েছিলেন তার শিল্পের ভাষা প্রকাশের জন্য, শিল্পী "Keith Haring" শহরের দেয়াল গুলোকে বেছে নিয়েছেন তার ক্যানভ্যাস হিসাবে, ফলে বলা যায়, পপ আর্ট গণমানুষকে সংযুক্ত করে থাকে, এবং দেখা যায় এরা সবাই সমাজের নানা অসংগতিকে ধিক্কার দিয়েছেন তাদের শিল্পের ভাষায়, প্রতিবাদ এখানে বেশ মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
"Pablo ঠিক aso" প্রদর্শনীতে আমরা ঠিক তেমনি দেখতে নাই, শিল্পী গরিব আনজু তার নানা মাধ্যমে চিত্রকলাকে সাজিয়েছে কখনো ব্যবহৃত কাগজে,কখনো টিসু পেপারে কখনো পন্য সংগ্রহের প্যাকেটে ফলে বক্তব্য প্রকাশিত হলেই শিল্পী স্থিতিশীল। আবার নিজের নাম গরিব দিয়েও সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণির কার্যক্রম কে ভৎসনা করছে শিল্পী।গরিবের কাজে "Keith Hering "এর রেখার প্রভাব লক্ষনীয়।গরিব প্রাণীকুল কে বেছে নিয়েছে বক্তব্য প্রকাশের হাতিয়ার হিসেবে,আবার শিল্পী আকাশ ও কিছুটা একই ধারায় হেঁটেছে বলে মনে হচ্ছে, বিষয়বস্তুর ভিন্নতা থাকলেও রেখা ও উজ্জ্বল রঙের প্রভাব লক্ষণীয়। ভিন্ন স্বাদে উপস্থিত জুবায়ের ও তাহিল, স্থাপনা শিল্পের মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক আলাপ করছে জুবায়ের। দেশি চটকে অসাধারণ বিন্যাসের ভিতর দিয়ে চলমান অসংগতিপূর্ণ রাজনৈতিক আলাপ কে একটি মাকড়সার জালের ভিতর দিয়ে আঁকড়ে ধরে নিয়ে আছে তা প্রকাশ করেছে। তাহিলকে দেখা গেল পুরান ও নতুনের মিশেল দিয়ে স্থাপনা শিল্পের ভাষায় প্রকাশ করতে, বায়স্কোপ কে নতুন টেলিভিশনের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করতে কিন্তু বক্তব্য সম্মিলিত, কোথাও গিয়ে এই চারজন তরুণ শিল্পী জীবনাচরণের ভিতর দিয়ে চলমান শিল্পকে দেখছে এটা স্পষ্ট।
"সংস্কৃতি একজন মানুষের ক্ষমতা বাড়াতে বা শক্তিশালী করতে পারে"
-জন এবোট।
এই গণ সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে চলা এই তরুন শিল্পীরা, যাদের জীবনাচারনের ভিতর দিয়ে শিল্প সৃষ্টি করে চলেছে, নতুন নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে এবং তা শিল্পদ্বারা গণমানুষের মধ্যে ছুড়ে দিতে চাই, তা সবসময়ই গ্যালারীর নরম লাল গালিচায় দাড়িয়ে তা মনে হয় না। তারা সংস্কৃতি দ্বারা পরিচালিত এবং সংস্কৃতির শক্তিতে বলিয়ান, সময় বলবে কতটা জনপ্রিয় সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করতে পারবে "Pablo ঠিক aso" বলা এই শিল্পীদল।
মন্তব্য করুন: