• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

সুইজারল্যান্ডের প্রদর্শনীতে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ শ্রাবণ

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
সুইজারল্যান্ডের প্রদর্শনীতে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ শ্রাবণ

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় শান্তি সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ শিল্পপ্রদর্শনীতে উঠে এসেছে বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ তরুণ জলবায়ু কর্মী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণের ছবি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষাকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে শ্রাবণের পোর্ট্রেট ছিল অন্যতম আকর্ষণ।

মেক্সিকান তরুণ শিল্পী ও মানবাধিকার কর্মী আলভারো সেবাস্তিয়ান কুইরোজ বলানোস ‘ইকোস অব রিয়ালিটি’ শিরোনামের এই প্রদর্শনীতে বিশ্বের ১১ জন পরিবেশ ও মানবাধিকার রক্ষাকারীর প্রতিকৃতি বডিব্যাগ আকারে উপস্থাপন করেছেন। এদের মধ্যে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের শহীদ ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণও। প্রদর্শনীতে শ্রাবণের পোর্ট্রেটের নম্বর ছিল ১১। এর পরের ফ্রেমটি খালি, যেখানে লেখা—“এর পরে কে (খুন হবেন)?”। 

এটি দর্শকদের নাড়া দিয়েছে, মনে করিয়ে দিয়েছে যে পৃথিবীর বহু জায়গায় আজও মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষাকারীরা জীবন-হুমকির মুখে রয়েছেন। একই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থী নেতা মুহিবুল্লাহর প্রতিকৃতিও। ২০২১ সালে কুতুপালং শিবিরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন তিনি। ২০১৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় আসেন।

প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হয় জেনেভা গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউটে  শান্তি সপ্তাহ বা ‘পিস উইক ২০২৫’-এর অংশ হিসেবে। ১৫ ও ১৬ অক্টোবর দর্শনার্থীরা ‘মিট দ্য আর্টিস্ট’ সেশনে কুইরোজের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ পান। ১৭ অক্টোবর সমাপনী অনুষ্ঠানে শিল্প ও সংস্কৃতির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়।

আয়োজক সংস্থার আইরিস’র  ওয়েবসাইটে (https://irisart.mx/echoes ) শ্রাবণের প্রতিকৃতি সম্পর্কে লেখা হয়েছে, “পোর্ট্রেটে শ্রাবণের উঁচু ভঙ্গি দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করে। তাঁর শরীরের একটি অংশ মাটির নিচে—যা আত্মত্যাগ ও ভূমির সঙ্গে গভীর সংযোগের প্রতীক। কপালে লাল রুমাল (হিজাব), যা তাঁর মা উপহার দিয়েছিলেন পরিবারের ভালোবাসা ও সমর্থনের চিহ্ন। পেছনের আকাশে কালো ধোঁয়া ও জ্বলন্ত গাছ মানুষের উন্নয়ন ও প্রকৃতির ধ্বংসের সংঘাত এবং আসন্ন সংকটের বার্তা বহন করে।” 

 ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ একজন জলবায়ু কর্মী হিসেবে ইয়ুথনেট গ্লোবাল’র ফেনী জেলা শাখায় কাজ করতেন। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলায় নিহত হন শ্রাবণ। ওইদিন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালালে গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। এ সময় তার মাথায় মায়ের হিজাবের কাপড় বাঁধা ছিল।  শ্রাবণের মা ফাতেমা আক্তার বলেন, “আমার ছেলে আন্দোলনে যাওয়ার আগে আমার কাছ থেকে একটা হিজাব চেয়ে নেয়। সালাম করে বলে, ‘আমরা না গেলে কে যাবে? দেশটা আমাদের।’ আমরা নিশেধ করেছিলাম, সে শোনেনি। আজ অনেকে পাশে দাঁড়াতে চায়। যেখানে আমাদের সন্তানদের রক্তের ওপর নতুন বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে, সেখানে আমরা জানাতে চাই, আমরাই বাংলাদেশের মালিক।” 

প্রদর্শনীর প্রধান উদ্যোক্তা  আলভারো মাত্র ২৬ বছর বয়সেই মানবাধিকার, সামাজিক পুনর্বাসন ও শিল্পকে সংযুক্ত করার জন্য বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পেয়েছেন। ২০২৪ সালে জাতিসংঘে আয়োজিত ‘ইয়াং অ্যাক্টিভিস্ট সামিট’-এ বিশ্বের পাঁচজন প্রধান যুবকর্মীর একজন হিসেবে তিনি সম্মানিত হন।

একই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের তরুণ জলবায়ু নেতা ও ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান ‘ইয়াং অ্যাক্টিভিস্ট অ্যাওয়ার্ড’ পান। তিনিই আলভারোর প্রদর্শনীর জন্য শহীদ শ্রাবণকে মনোনয়ন দেন। সোহানুর রহমান বলেন, “ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ এমন একজন তরুণ সহযোদ্ধা, যিনি নিজের জীবন দিয়ে পরিবেশ ও মানবাধিকারের লড়াইকে আলোকিত করেছেন। কুইরোজের প্রদর্শনীর মাধ্যমে তাঁর ত্যাগ ও আদর্শ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের তরুণদের সাহস ও আত্মত্যাগের গল্প বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়াই এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য।”  ‘’শান্তি, সুবিচার ও মানবতার বার্তা বহনকারী এই প্রদর্শনী শেষ হলেও, শ্রাবণের প্রতিকৃতি বিশ্ববাসীর মনে থেকে যাবে এক প্রতীকে যে তরুণ নিজের জীবন দিয়েও থামাতে পারেনি স্বপ্ন ও সংগ্রামের যাত্রা’’, বলেন সোহানুর। 

মানবাধিকার সংস্থা গ্লোবাল উইটনেসের ‘রুটস অব রেজিস্ট্যান্স’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে কমপক্ষে ১৪৬ জন ভূমি ও পরিবেশ রক্ষাকারী নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন। ২০১২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৫৩ জনে। এর মধ্যে লাতিন আমেরিকা সবচেয়ে বিপজ্জনক অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত, যেখানে গত বছরই ১১৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে—বিশ্বের মোট হত্যার ৮২ শতাংশ। কলম্বিয়ায় ৪৮ জন, গ্বাতেমালায় ২০, মেক্সিকোতে ১৮, ব্রাজিলে ১২, ফিলিপাইনে সাতজন, হন্ডুরাস ও ইন্দোনেশিয়ায় পাঁচজন করে রক্ষাকারী নিহত হয়েছেন।

আলভারো কুইরোজ বলেন, “ইতিহাস কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়—প্রতিটি সংখ্যার পেছনে একটি জীবন, একটি আশা রয়েছে, যা নিভে যেতে দেওয়া যায় না। আমার কাজ মনে করিয়ে দেয় যে আমরা কখনও ভুলব না।”

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2