• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

ঘুরে ঘুরে দেয়ালে ছবি আঁকাই চাঁনু পাগলার কাজ

আতাউর রহমান আজাদ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:২২, ১৬ অক্টোবর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ঘুরে ঘুরে দেয়ালে ছবি আঁকাই চাঁনু পাগলার কাজ

নাম আবু বক্কর সিদ্দিক (৫১) ওরফে (চাঁনু মিয়া)। চাঁনু পাগলা নামেই তার পরিচিতি। তার পরিবারে পাঁচ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সে সবার ছোট। তিনি ভারসাম্যহীন একজন মানুষ। ভোর হলেই চাঁনু মিয়াকে আর তার বাড়িতে পাওয়া যায় না। নিজের ঘর তালা দিয়ে বের হয়ে যান অজানা গন্তব্যে। সারাদিন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন দেয়ালে আঁকেন নানা ধরণের ছবি। আবার সন্ধ্যা হলে ফিরে যান নিজ বাড়িতে। এভাবেই কেটে যায় তার দিন। দেয়ালে এমন সব ছবি দেখে মুগ্ধ প্রায় সব বয়সি মানুষ।

জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌর শহরের এনায়েতপুর এলাকার বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক (৫১)। তিনি ছোট বেলা থেকে একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাচল করতো।  পড়াশোনা করেছেন ১০ শ্রেণি পর্যন্ত। ছোট বেলায় পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সাথে মাঠে-ঘাটে কাজ করতেন। আর কাজের ফাঁকে সময় পেলে কচুরিপানা, পোড়া মাটির টুকরো বা কয়লা দিয়ে আঁকতেন ছবি। সেখান থেকে শুরু হয় তার ছবি আঁকার প্রতি ভালোবাসা। তার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙে পরেন তিনি। তারপর থেকে চাঁনু মিয়া ভারসাম্যহীন হয়ে পরেন। 

পৌর শহরের পার্ক বাজারের মোড়ে দেখা মিলে চাঁনু মিয়ার। তার সঙ্গে রয়েছে একটি বস্তা। আর বস্তার ভিতরে রয়েছে কয়লা, কচুরিপানা আর কিছু কাগজের টুকরো। সেখানে একটি দেয়ালে চাঁনু মিয়া ছবি আঁকছেন। তার ছবি আঁকা দেখতে ভিড় করছেন নানা বয়সি মানুষ। তার এ ধরণের ছবি দেখে সবাই প্রশংসা করছেন।
 


স্থানীয় বাসিন্দা রবিন সরকার বলেন, আমি ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি চাঁনু মিয়া কচুরিপানা ও কয়লা দিয়ে শহরের বিভিন্ন দেয়ালে ছবি আর্ট করে রাখেন। তার ছবি আঁকা খুবই সুন্দর।

সোলায়মান হোসেন রাব্বি বলেন, অনেক বার দেখতেছি বিভিন্ন দেয়ালে গাছের পাতা, কয়লা দিয়ে ছবি আঁকেন। বিভিন্ন দেয়ালে দেখা মিলেবে তার আঁকা ছবির। বিশেষ করে একটি ছেলে ও একটি মেয়ের ছবি। এই ছবি দেখে সবাই ধারণা করছে মেয়েটি তার প্রেমিকা ও ছেলেটি সে। তার এ ছবি আঁকা দেখে অনেক ভালো লাগে। এছাড়াও তিনি স্বাধীনতার ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ছবি আর্ট করে থাকেন। 

রিকশা চালক ইদ্রিস আলী বলেন, আমি রিকশা চালাই। এর জন্য শহরের বিভিন্ন এলাকায় আমার চলাচল। প্রায় সময়ই চাঁনু পাগলাকে বিভিন্ন জায়গায় ছবি আঁকতে দেখি। যখন যাত্রী না থাকে আমি রিকশা চালানো বন্ধ করে তার ছবি আঁকা দেখি, অনেক ভালো লাগে। যে দেয়ালে ছবি আঁকেন অনেক সময় তাকে বাসার মালিকরা গালিগালাচ করেন। তারপরও চাঁনু মিয়া থেমে যায়নি। 

সাংস্কৃতিক কর্মী জসিম উদ্দিন বলেন, চাঁনু মিয়া অনেক সুন্দর ছবি আর্ট করতে পারেন। সে একজন ভারসাম্যহীন মানুষ। তারপরও একজন পেশাদার চিত্রশিল্পীর মতো ছবি আর্ট করে, সেটা অনেক প্রশংসনীয়। আমি নিজেও মুগ্ধ তার এতো সুন্দর প্রতিভা দেখে। সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতায় যদি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেত, হয়তো সে সুস্থ্য হয়ে উঠতো।
 
টাঙ্গাইল জেলা কালচারাল অফিসার এরশাদ হাসান বলেন, আমি নিজেও দেখেছি চাঁনু মিয়া ভালো ছবি আঁকেন। কেউ যদি চাঁনু মিয়ার দায়িত্ব নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি বা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন। আমাদের যতটুকু সুযোগ আছে অবশ্যই চেষ্টা করবো তাকে সহযোগিতা করার।


 

বিভি/রিসি

মন্তব্য করুন: