• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণ শ্রমিক, উদ্ধার করতে গিয়ে আহত অনেক পুলিশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ফন্ট সাইজ
গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণ শ্রমিক, উদ্ধার করতে গিয়ে আহত অনেক পুলিশ

ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে দুইজন নির্মাণ শ্রমিক নিহত। যারা সম্পর্কে আপন দুই ভাই। এ ঘটনায় গণপিটুনিতে আরও পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতালে আনার আগে তাদের উদ্ধার করতে যেয়ে আহত হয়েছেন আরও অনেক পুলিশ সদস্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। পুলিশের একাধিক সূত্র এ সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, পঞ্চপল্লী গ্রামের একটি কালি মন্দিরে আগুন দেওয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নির্মাণ শ্রমিকদের গণপিটুনিতে আহত করে মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের নির্মাণাধীন একটি স্কুল ভবনের কক্ষে হাত-পা বেঁধে মেঝেতে ফেলে জিম্মি করে রাখা হয়।

খবর পেয়ে সন্ধ্যার পরে প্রথমে মধুখালী থানার ইউএনও এবং ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপরেও হামলা করে জিম্মি করে রাখা হয়। এসময় ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সেখানে পৌঁছালে হামলাকারীরা রণমূর্তি ধারণ করে। তারা ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে পুলিশকে লক্ষ্য করে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। 

খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

প্রায় ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকার পর আহতদের উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় সেখানে রিপোর্ট লেখার সময়েও চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গোটা এলাকায় আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকার অতিরিক্ত র‍্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অতিরিক্ত নিরাপত্তার স্বার্থে জেলা প্রশাসন ৪ প্লাটুন বিজিবি চেয়ে পাঠিয়েছে।

এ ঘটনায় নিহতরা হলেন-মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও তার ভাই আশাদুল (১৫)।

ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন জানান, পাঁচ গ্রাম নিয়ে সেখানে পঞ্চপল্লী অবস্থিত। এলাকাটি হিন্দু বসতি অধ্যুষিত। এর মাঝে কৃষ্ণনগর নামে এক গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজের জন্য সেখানে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছিলেন। পঞ্চপল্লীর একদল মানুষ ওই নির্মাণ শ্রমিকদের পিটিয়ে আহত করে নির্মাণাধীন স্কুল ঘরে আটকে রাখে। স্কুল ভবনের দরজা, জানালা, গ্রিল ভেঙে ফেলে তারা। এসময় বাইরে থেকে কেউ ওই গ্রামে যেতে পারেনি। সেখানে একটি কালি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। 

তপতি মন্ডল নামে ওই গ্রামের এক নারী বলেন, তিনি মায়ের ঘরে (কালিমন্দির) সন্ধ্যা বাতি দিচ্ছিলেন তখন শ্রমিকেরা জানালা দিয়ে দেখছিলো কোনো অসুবিধা হইছে কি না। তারপর বাড়ি গিয়ে আবার আমি ঘোষি নিতে। তখন ওরা (শ্রমিকেরা) রড ওঠা-নামা করতেছিলো আর বকাবাজি করতেছিলো ওরা ওরাই। তারপর বাড়ি যাইয়ে শুনি যে চ্যাঁচামেচি। আগোয় আইসে দেহি যে, মা একদম পুড়ে গ্যাছে। তারপর লোকজন জড়ো হয়ে গেলো। এই যা। তারপর কি হলো তা তিনি দেখেন নি বলে জানান। এছাড়া কারা মন্দিরে আগুন দিয়েছে তাও তারা কেউ দেখেননি বলে জানান।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার এ ঘটনায় একাধিক প্রাণহানির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলের পথে। তবে কী কারণে কতজনের প্রাণহানি হয়েছে তা এই মুহূর্তে সঠিক বলা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে ব্যস্ত থাকায় মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিংবা জেলা পুলিশের দ্বায়িত্বশীল কারো বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফরিদপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজবাড়ী জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আনা হয়েছে পরিস্থিতি মোকাবিলায়। পাশাপাশি ফরিদপুর থেকে র‍্যাব সেখানে পৌঁছেছে। থেমে থেমে সেখানে ফাঁকা গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ঘটনাস্থলের প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সিধলাজুড়ি নামক স্থানের কাছে অবস্থান নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, এখানে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছিলো। উত্তেজিত জনতা ভেতরে ঢুকে তাদের লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে মধুখালী থানার ইনচার্জ ফোর্সসহ এখানে আসে। তাদের সাথে মধুখালী উপজেলার ইউএনও ও ছিলেন। তারা এখানে এসে উত্তেজিত জনতার হাতে আটকে পড়ে। খবর পেয়ে আমরা ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত ফোর্সসহ এসে তাদের আহতদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে ফরিদপুরে হাসপাতালে পাঠাই। 

পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনায় অনেক পুলিশ আহত হয়েছেন। তাদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারা হয়েছে। গ্রামবাসীসহ সকলকে অনুরোধ করবো কেউ যেনো আইনকে নিজের হাতে তুলে না নেয়। বিষয়টি ঢাকা থেকে আইজি মহোদয় নিজেও সবসময় খবরাখবর রাখছেন বলে জানান তিনি।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকদের জানান, এখানে পঞ্চপল্লী গ্রামে একটি কালি মন্দিরে আগুন দেয়ার খবরে ঘটনার সূত্রপাত। গ্রামবাসীর সন্দেহ এখানে একটি নির্মাণাধীন প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণ শ্রমিকেরা আগুন দিয়েছে। তারা এই শ্রমিকদের বেদমভাবে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা তাদের পরীক্ষা করে বলতে পারবেন তাদের মধ্যে কয়জন জীবিত আর কয়জন মৃত রয়েছেন। সবার অবস্থাই খারাপ।

তিনি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ আহতদের উদ্ধার করতে এলে তাদের বাধা দেয়া হয়। তখন কয়েক রাউন্ড গুলি করে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।  

রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পঞ্চপল্লী গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‍্যাব মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, সকালে এখানে বিজিবি মোতায়েনের জন্য চার প্লাটুন বিজিবি চাওয়া হয়েছে। মধুখালী ছাড়াও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হবে। কাউকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সুযোগ দেওয়া হবে না।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান এ ঘটনায় দু'জন নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চারজনকে আনা হয়। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। নিহত একজনের নাম আশরাফুল। বাড়ি মধুখালীর নওপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় আহত আরও তিনজনকে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন: