নোয়াখালীতে ১৯ আশ্রয়কেন্দ্রে ২৬৮ পরিবার

ছবি: সংগৃহীত
টানা ভারী বর্ষণের ফলে নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় আবারও বাড়ছে পানির উচ্চতা। প্লাবিত হয়েছে জেলার কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, বেগমগঞ্জ ও সদর উপজেলার বহু গ্রাম। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় অসংখ্য মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা ও আশ্রয়কেন্দ্রে।
বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জানা গেছে, অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি পানিতে ডুবে গেছে গ্রামের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ। পানি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ইতোমধ্যে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৬৮ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।
চরফকিরা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ফয়জুন্নাহার গণমাধ্যমকে বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে বসতঘরে হাঁটুসমান পানি ওঠে। বাধ্য হয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া এলাকা থেকে আসা আব্দুর রহিম গণমাধ্যমকে বলেন, রাতেই দেখি উঠানে পানি, সকালে দেখি ঘরের ভেতরেও পানি ঢুকে গেছে। বাচ্চাদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছি।
চরফকিরা ইউনিয়ন যুবদল সাবেক আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন রিপন গণমাধ্যমকে বলেন, চরফকিরায় পানিবন্ধি মানুষের খোঁজ এবং আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে সহযোগিতা করছে প্রতিটি ওয়ার্ডে যাচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমাদের সব সময় সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিটি উপজেলায় অতিরিক্ত আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৬৮ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় ২০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আরও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টিপাত আগামী কয়েকদিন থাকতে পারে। ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে শঙ্কা করছি।
এদিকে পানি নিষ্কাশনের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, জেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে। জেলাব্যাপী এই জলাবদ্ধতা পরিস্থিতিতে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। জেলার জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। প্রয়োজনে আরও আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হবে।
এদিকে অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসরাত নাসিমা হাবীব বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ৯ জুলাই আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি পেয়েছে। আগামীকাল ১০ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম (ক্লাস) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকবেন এবং চলমান দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যালয়গুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের প্রয়োজন হলে তারা প্রস্তুত থাকবেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: