তলিয়ে গেছে বিদ্যালয়, প্রাথমিকের পাঠদান বন্ধ!

উজানের ঢল আর অতি বৃষ্টিতে পদ্মা নদীর পানি গত কয়েকদিন ধরে সতর্ক সীমায় প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক এলাকায় পানি প্রবেশ করার কারণে বিদ্যালয়ের মাঠ পেরিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে শ্রেণিকক্ষে। ফলে চাঁপাইনববাগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের ৫টি ইউনিয়নের ৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ হলেও এ অবস্থার মধ্যেই উঁচু শুকনো জায়গা খুঁজে সেখানে পাঠদান চালিয়ে নেয়ার কথা বলছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলাতুলি ইউনিয়নের ৫টি ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি মাদ্রাসা, শিবগঞ্জ উপজেলার দূলর্ভপুর ইউনিয়নের ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫টি মাদ্রাসা, পাঁকা ইউনিয়নের ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবং উজিরপুর ইউনিয়নের ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ দান ব্যহত হচ্ছে পানি প্রবেশ করার কারণে। আর শুধুমাত্র বিদ্যালয়গুলোতে নয় আশেপাশের পরিবারগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাবার কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শূন্যের কোঠায়। এর ফলেও বন্ধ প্রায় পাঠদান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর মাহমুদা মতিউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. হামিদা খাতুন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে প্রায় ৭৯২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিদ্যালয়টিতে কিছু ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতিতে ক্লাস হয়েছিল। কিন্তু গত শনিবার (৯ আগস্ট) রাত থেকে বিদ্যালয়ের মাঠ আর শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশের কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই। ফলে এখানে পাঠদান পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শিংনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ বলেন, বিদ্যালয়ের চারপাশেই পানি। কিন্তু পানির মধ্যে অভিভাবকরা বাচ্চাদের ক্লাসে পাঠাতে আগ্রহী নন। যে কারণে সোমবার (১১ আগস্ট) থেকেই বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। আবার এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে বলেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আসলে বিদ্যালয়ের আশপাশে শুকনো জায়গা না থাকায় ক্লাস চালিয়ে নিতে পারছি না।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার খুবই কম। আর এ কারণে জেলা সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ১৩টি করে মোট ২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এরপরও ওইসব প্রাথমিকের শিক্ষকদের ভিন্ন উপায়ে ক্লাস চালিয়ে নিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও ৯টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৬টি মাদ্রাসার অবস্থাও একই।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জেছের আলী বলেন, পদ্মা তীরবর্তী নিচু এলাকাগুলোর কিছু বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। যে কারণে পাঠাদান ব্যাহত হচ্ছে। তাদেরকে আশপাশের উঁচু জায়গায় পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
জেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন বলেন, নিম্নাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এর মাঝেও আশেপাশের উঁচু শুকনো জায়গা খুঁজে পাঠাদান কার্যক্রম চালানোর জন্য নির্দশনা দেয়া হয়েছে। আশা করছি পানি দ্রুত নেমে গেলে পাঠদান কার্যক্রম আগের মতোই স্বাভাবিক হবে।
তবে নিম্নাঞ্চলের অভিভাবকরা বলছেন, একেতো চারদিকে বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। ছেলে-মেয়েদেও স্কুলেও পানি উঠেছে। এখন বাড়িঘর সামলাবো নাকি বাচ্চাদেও সামলাবো। যদি স্কুল যেতে গিয়ে কোথাও পানিতে তলিয়ে যায় তথন বুকের ধনকে কে ফেরত দিবে ? পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা নিজেরাই তাদেও স্কুলে পাঠবো।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: