অবরোধে উতপ্ত খাগড়াছড়ি, ৪ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে

১৪৪ ধারা জারির প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে সক্ষম হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। স্কুল শিক্ষার্থী ধর্ষণে অভিযোগে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকে সকাল -সন্ধ্যা সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
সহিংসতা প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি ও টিয়ারসেলা ছুড়ে। সহিংসতায় অন্তত ২৩ জন আহত হয়। পুরো শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেনাবাহিনী,বিজিবি, পুলিশ ও আমর্ড পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে অবরোধের সমর্থনে খাগড়াছড়ির সদরস্থ চেঙ্গী স্কয়ার, জিরোমাইল, স্বনির্ভরসহ বেশ কিছু জায়গায় পিকেটিং করে গাছের গুড়ি ফেলে টায়ার ও গাছের গুড়ি পুড়িয়েছে অবরোধকারীরা। পরে পুলিশ গিয়ে সড়ক থেকে তা অপসারণ করে। অবরোধ চলকালে অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর হয়।
খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন সড়কে দুপুর দেড়টার দিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যায়। এসময় খাগড়াছড়ি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স এলাকায় অবরোধকারীদের স্থানীয় বাঙালিদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুপুর ২টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য খাগড়াছড়ি পৌর শহর ও জেলা সদরে জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। খাগড়াছড়ির জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার এক বিজ্ঞপ্তিতে আদেশ দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় , খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং জনগণের জান ও মালের ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা রয়েছে তাই ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারা জারির আদেশ করা হয়। তবে ১৪৪ ধারা জারি করার পরও দুপুর দুই টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দুই পক্ষে খাগড়াছড়ি মহাজন পাড়া এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালি মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়। পরে সংঘর্ষ শহরে মহাজন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কয়েকজন হেলমেট ও মুখোশপরা উপজাতীয় যুবককে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা যায়।
প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি মিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ও টিয়ার সেল ছুড়তে হয়।
এছাড়া একই কারণে গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আইরিন আকতার।
শনিবার সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো.আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘অবরোধে সময় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তপরিস্থিতি অনেকটায় স্বাভাবিক ছিলো। কিন্ত দুপুরের পর উপজেলা ইউএনও সংলগ্ন এলাকায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি হয়। পরে ইট-পাটকেল ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী,বিজিবি ও পুলিশ নিরাপত্তায় যৌথভাবে কাজ করছে। পরে সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে উত্তেজিত দুই পক্ষকে আমরা সরিয়ে দিই। নতুন করে যাতে সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি খাগড়াছড়ি ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক মো. হাসনুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন মো.ছাবের বলেন, ‘দুই পক্ষের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে মোট ২৩ জন আহত হয়। এদের মধ্যে ২১ জন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছে। দুই জন খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
অবরোধে কারণে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিপাকে পরেছে সাজেকগামী পর্যটকেরা। সাজেকের সাথে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় আটকা পরেছে প্রায় তিন হাজার পর্যটক। যারা শুক্রবার বেড়াতে গিয়েছিলো তারা শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সাজেক থেকে খাগড়াছড়ি ফিরতে পারেনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা দীঘিনালায় অবস্থান করছে।
প্রসঙ্গত; গত মঙ্গলবার রাতে ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়। ভিকটিমের পিতা অজ্ঞাতনামা ৩ জনকে আসামি করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরদিন বুধবার সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ শয়ন শীল (১৯) নামে এক তরুণকে গ্রেফতার করেছে। এই ঘটনায় পলাতক রয়েছে আরো দুই আসামি। দুই আসামিকে গ্রেফতারের দাবিতে শুক্রবার সকালে নিপীড়ন বিরোধী সমাবেশ করে জুম্ম ছাত্র-জনতা। সমাবেশ থেকে শনিবার সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধে ডাক দেওয়া হয়েছিলো। এর আগে একই দাবিতে বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ পালন করেছে জুম্ম ছাত্র-জনতা।
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: