গোয়ালন্দে মা ইলিশ রক্ষায় দায়সারা প্রচারণার অভিযোগ, ট্রলার ও জাল জব্দ

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় পদ্মা নদীতে অভিযান চালিয়ে একটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার, ৫০০ মিটার কারেন্ট জাল ও ৫ কেজি ইলিশ জব্দ করেছে মা ইলিশ রক্ষার টাস্ক ফোর্স কমিটি। সোমবার (৬ অক্টোবর) এসব উদ্ধার করা হয়।
ওইদিনই দুপুরের দিকে দৌলতদিয়া ৭নং ফেরিঘাট এলাকায় লক্ষাধিক টাকার ইঞ্চিনসহ ট্রলারটি নিলামের মাধ্যমে মাত্র ৩৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়। এছাড়া জালগুলো পুড়িয়ে এবং মাছগুলো স্থানীয় দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
তবে অভিযোগ উঠেছে, এ বছর মা ইলিশ রক্ষায় যথেষ্ট প্রচার-প্রচারণা চালায়নি স্থানীয় প্রশাসন। জেলেদের এখনো দেওয়া হয়নি খাদ্য সহায়তার চাল।
নিষেধাজ্ঞার চারদিন অতিবাহিত হওয়ার পর বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর সোমবার সকাল ১১টায় দায়সারাভাবে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করে উপজেলার মৎস্য অফিস।
এলাকায় মৎস্যজীবীর সংখ্যা দেড় সহস্রাধিক হলেও সভায় জেলে ও স্হানীয় বাসিন্দা মিলিয়ে ১০০ জনের মতো লোক উপস্থিত ছিলেন। বিগত বছর গুলোতে নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই এ ধরনের সভা করা হতো।
এবছর মন্ত্রণালয় কতৃক নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিগত বছরের ন্যায় (ক) জেলা ও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ মাছ ঘাট, আড়ৎ, বাজারসমূহে মাইকিং; (খ) জেলেপল্লী, মাছ ঘাট, বাজার, আড়ৎ, ল্যান্ডিং সেন্টারে পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ; (গ) জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সভা সমাবেশের আয়োজন; (ঘ) জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রে গণবিজ্ঞপ্তি ও বিজ্ঞাপন প্রকাশ; (ঙ) প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে প্রচার ও প্রচারণা; (চ) বাংলাদেশ রেলওয়ে, ট্রলার মালিক সমিতি, লঞ্চ মালিক সমিতি, ট্রাক ও বাস মালিক সমিতি এবং মৎস্যজীবী সমিতিকে এতদসংক্রান্ত বিধি-বিধান অবহিতকরণ ইত্যাদি প্রচারণামূলক কার্যক্রম চালানো।
কিন্তু বাস্তবে এগুলোর বেশিরভাগই এ বছর বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে ।
দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় আজিবর হোসেন জানান, প্রতি বছর ব্যাপকভাবে প্রচারণা হয় এবং জেলে পাড়ার সামনে ৭ নম্বর ফেরিঘাটে বিশাল সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। এবছর এগুলোর কিছুই করা হয়নি।
নদী পাড়ের ছাত্তার মেম্বার পাড়ার সোহেল ব্যপারী জানান, এবছর শুধু মাছ বাজারে একটা সাইনবোর্ড দেখেছিলাম আর আজকের ছোট্ট একটা আলোচনা সভা এবং জাল পোড়ানো ও ট্রলার জব্দ করা দেখলাম।
তিনি আরও বলেন, জেলেরা শিক্ষিত না তারা নদীতে থাকে। তাদের কাছে স্মার্ট ফোন বা অন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও নেই। তাদেরকে আরো আগে থেকে সতর্ক করলে ভালো হতো। তাহলে এভাবে সম্পদের ক্ষতি হতো না।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের আড়তে থাকা কয়েকজন জেলে জানান, প্রতিবছর সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া আমাদের নিয়ে বেশ কয়েকবার বসা হয়। এবছর এগুলোর কিছুই করা হয়নি। তবে গোয়ালন্দ শহর এলাকায় কিছুটা মাইকিং করা হয়েছে বলে শুনলাম। অথচ এই সকল কাজের জন্য সরকারি বাজেট বরাদ্দ রয়েছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস জানায় এ বছর ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ আহরণ, মজুদ ও বিপণন বন্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেল জরিমানা করবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। মাঠে থাকবে কোস্টগার্ড, পুলিশ ও টাস্কফোর্সের অন্যান্য সদস্যরা।
সূত্র আরো জানায়, যে সমস্ত বেসরকারি সংস্থা থেকে জেলেরা ঋণ নিয়েছে সেগুলোর কিস্তি আদায় একমাস বন্ধ রাখতে অনুরোধ করবে প্রশাসন।
গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম পাইলট জানান, আমরা এবছর অনেক পরে চিঠি পেয়েছি। তখন পূজার ছুটি থাকায় প্রস্তুতি সভা করা সম্ভব হয়নি তাই এখন সভা করে বিষয়টি জেলেদেরকে অবহিত করছি। মাইকিং সহ অন্যান্য প্রচারণা করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান জানান, ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা টাস্কফোর্স কমিটি নিয়মিত নদীতে অভিযান চালাবো। এ সময় জেলেসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করি। নিষেধাজ্ঞাকালীন সহায়তা হিসেবে ইলিশ সংশ্লিষ্ট জেলেদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ৩০ কেজি করে খাদ্য সহায়তার চাল দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিভি/এসজি
মন্তব্য করুন: