• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

দক্ষ জনবলের অভাবে চার বছর ধরে বন্ধ দৃষ্টিহীনদের বিদ্যালয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
দক্ষ জনবলের অভাবে চার বছর ধরে বন্ধ দৃষ্টিহীনদের বিদ্যালয়

সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম’ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৪ বছর। প্রয়োজনীয় আধুনিক অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র দক্ষ জনবলের অভাবে দৃষ্টিহীনদের জন্য নির্মিত এই বিদ্যালয় অকার্যকর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফলে জেলার দৃষ্টিহীনরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের দাবি, সমাজে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে এই প্রতিষ্ঠান চালু করা অতি জরুরি। আর, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলছেন, প্রশিক্ষিত জনবলের সঙ্কট নিরসন করা গেলেই আবারও শুরু করা যাবে জেলার একমাত্র সরকারি দৃষ্টিহীনদের বিদ্যালয়টির কার্যক্রম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সমন্বিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার কামাল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবনে দীর্ঘদিন ধরে চলছিল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম। পরে প্রয়োজনীয় আধুনিক অবকাঠামো উন্নয়ন শেষে জেলা শহরের স্বরুপনগর সরকারি শিশু পরিবার সংলগ্ন এলাকায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত করা হয়। যেখানে প্রথম শ্রেণি থেকে এসএসসি (মাধ্যমিক) স্তর পর্যন্ত ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষা লাভের সুযোগ ছিল ১০ জন দৃষ্টিহীন শিশুর। তাদের শিক্ষাদানের তদারকি করেন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রিসোর্স শিক্ষক। এছাড়া, সরকারি তরফ থেকে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের ব্রেইল বই ও অন্যান্য সহায়ক শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহের পাশাপাশি থাকা-খাওয়াসহ সম্পূর্ণ হোস্টেল সুবিধা, চিকিৎসাসেবা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করা হয়। শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ যাতে তারা সমাজে স্বাবলম্বী হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। অথচ, প্রায় ৪ বছর ধরে জনবলের অভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একমাত্র সরকারি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেখতে না পাওয়া শিশুরা।

সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পটি দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সহায়তা কর্মসূচি উল্লেখ করে একজন অভিভাবক বলেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে কাজ করে, যা দেখতে না পাওয়া শিশুদের অন্ধকার জীবনের পথ থেকে আলোর পথে আনতে সাহায্য করে। কিন্তু, সেখানে পর্যাপ্ত জনবল না থাকার কারণে আমি আমার ছেলেকে সেখান থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছি। তবে, লোকবল নিয়োগ হয়ে এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম আবার চালু হলে ছেলেকে পূনরায় সেখানে পাঠিয়ে দেবো লেখাপড়া করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য, কেউ যেনো তাকে সমাজের বোঝা মনে না করে। কাজেই দ্রুত জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু করা খুবই প্রয়োজন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টিতে মঞ্জুরী পদের সংখ্যা চারটি। একজন রিসোর্ট শিক্ষক থাকলেও বাকি হাউজ প্যারেন্ট কাম টিচার, অফিস সহায়ক ও নৈশ্য প্রহরীর পদ রয়েছে শূন্য। বিদ্যালয়টিতে আউট সোর্সিংয়ে একজন রাধুনী আছেন। কিন্তু, ছাত্র-ছাত্রী না থাকায় তিনি এখন সরকারি শিশু পরিবারে কর্মরত। এদিকে, ২০১৯ সালের জুন মাসে তিন জন দৃষ্টিহীন শিশু ভর্তি হলেও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে অভিভাবকরা ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর সন্তানদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান। এরপর থেকেই সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বিদ্যালয়টিতে তালা ঝুলছে।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে কুলসুম বলেন, সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমটি বন্ধ হয়ে গেছে দক্ষ জনবলের অভাবে। এখানে তিনজন শিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু, তাদের দেখভালের জন্য কেউ ছিল না। সেজন্য অভিভাবকরা তাদের বাড়িতে নিয়ে চলে গেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কয়েক দফায় প্রতিষ্ঠানটির জনবলের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে তথ্যও চেয়েছে। যখন এখানে জনবল নিয়োগ হবে তখন থেকে আবারও শুরু হবে জেলার একমাত্র সরকারি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বিদ্যালয়টির কার্যক্রম।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2