বরাট, রাজবাড়ী
স্বাস্থ্যকেন্দ্র নাকি মাদক সেবনের কেন্দ্র, প্রশ্ন স্থানীয়দের
গোয়ালন্দ ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী বরাট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র এখন মাদক সেবন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির বেহালদশায় দুর্ভোগে পড়েছে দুই উপজেলাবাসী। জরাজীর্ণ ভবনে খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা (পলেষ্টার), বেরিয়ে পড়েছে রড। দরজা, জানালা ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন; ফ্যান, লাইটগুলো চুরি হয়ে গেছে। ঔষধ ও জনবল সংকটসহ নানা সমস্যা নিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। মাসে একদিন শিশুদের টিকা দান ও সপ্তাহে বৃহস্পতিবার চলে রোগীদের চিকিৎসাসেবা।
জানা যায়, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে ১৯৮১ সালে গোয়ালন্দ উপজেলার চৌধুরী পরিবার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নামে এক একর জমি দান করে। দান করা ওই জমিতে নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও দুই ইউনিটের পৃথক স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও ভবনটি সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে দরজা-জানালা ভেঙে ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভবনের ছাদের ওপর বটগাছসহ অন্যান্য গাছ গজিয়েছে, মাঠ আগাছায় ভরে গেছে। ভবনটি দ্রুত সংস্কার বা নতুনভাবে নির্মাণ করে পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এটি অনেক পুরোনো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। বিশেষ করে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গোয়ালন্দ ও রাজবাড়ী সদর এ দুইটি উপজেলার এবং চরাঞ্চলের অনেক রোগী এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। গোপালবাড়ি এলাকার মোমতাজ বেগম (৫০) বলেন, শরীরে চুলকানি হয়েছে। ঔষধ নেওয়ার জন্য চার দিন এসেছি। এসে কোন চিকিৎসক পাই না, ঘুরে যাই।

বরাট স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ সহকারী ফাতেমা জিন্না বলেন, সপ্তাহে একদিন ভিজিটর চিকিৎসক আসেন তখন রোগী দেখা হয়। এছাড়া বাকি সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ থাকে। সপ্তাহে প্রায় দুই শতাধিক রোগীকে চিকিৎসাপত্র দেওয়া হয় এই কেন্দ্র থেকে এবং বিনামূল্যে ঔষধ দেওয়া হয়।
জমিদাতা পরিবারের সদস্য মো. খাদেম আলী চৌধুরী বলেন, আমাদের বাবা ও চাচারা এই তিন বিঘা জমি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নামে দান করে দিয়েছে। এখানে এক সময় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হতো, নিয়মিত চিকিৎসক বসতো। তাদের আবাসিক ব্যবস্থা ছিলো। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি অযন্তে-অবহেলায় নষ্ট হয়ে গেছে। এটা সরকারের উদাসীনতার কারণে হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এখন মাদক সেবন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। রাত-দিন এখানে বিভিন্ন অপকর্ম হয়ে থাকে। সরকারের নিকট আমাদের আকুল আবেদন দ্রত সময়ে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রটি মেরামত করে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা চালু করা হোক।
রাজবাড়ী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রহমত আলী বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছিল। তাদের প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে সরকারের নিকট স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পুনরায় সচল করার জন্য লিখিতভাবে একাধিকবার আবেদন করেছি। কিন্তু, কোনো সারা পাইনি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি সচল করার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
বিভি/পিএইচ




মন্তব্য করুন: