কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল
কুমিল্লায় সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেলসহ জোড়া খুনের ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এতে দেখা গেছে কাউন্সিলর সোহেলের অফিস থেকে প্রায় ৫০ গজ পশ্চিমে মুখোশপরা দুই অস্ত্রধারীর আশপাশের বাসাবাড়িতে গুলি করছেন। ২ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে পশ্চিম দিকে সুজানগর-পাথুরিয়াপাড়া সড়কে মুখোশপরা দুই যুবক প্রকাশ্যে গুলি করছেন। এ সময় আশপাশের সব দোকানপাট বন্ধ ছিলো। রাস্তায়ও কাউকে চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে এ সময় সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে স্থানীয়রা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উত্তেজিত হয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান তারা। এর কিছুক্ষণ পরই স্থানীয়রা বাড়িঘর থেকে বের হয়ে দৌঁড়ে পূর্ব দিকে কাউন্সিলরের কার্যালয়ের দিকে যান। ভিডিও ফুটেজে এক যুবকের হাতে দু’টি এবং আরেক যুবকের হাতে একটি পিস্তল দেখা যায়। ফুটেজে অনেকে দোকানপাট বন্ধ করে লুকিয়ে থাকতে দেখা গেছে। সন্ত্রাসীরা চলে গেলে দলবেঁধে লোকজন রাস্তায় বের হয়ে ছোটাছুটি করে।
এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে কুমিল্লার চান্দিনা থেকে মাসুম নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকার।
মাসুম ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারনামীয় আসামি এবং নগরীর সংরাইশ এলাকার মঞ্জিল মিয়া’র ছেলে। এই নিয়ে কাইন্সলর সোহেল হত্যা মামলায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হলো।
পুলিশ সুপার সোহান সরকার বলেন, ঘটনার পর পর মাসুম চান্দিনায় পালিয়ে যায়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। কাউন্সিলর সোহেলসহ জোড়া খুন মামলায় মাসুম এজাহারভুক্ত ৯ নম্বর আসামি। তাকে চান্দিনা থেকে গ্রেফতার করে বিকালে কোতোয়ালি থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে বুধবার এই মামলায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা থেকে এজাহারভুক্ত ৪ নম্বর আসামি সুমনকে গ্রেফতার করে র্যাব। সুমন শহরের সুজানগর পূর্ব পাড়া বৌবাজার এলাকার কানু মিয়া’র ছেলে।
এই ঘটনায় দুপুরে কুমিল্লা-৬ সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাইউদ্দিন বাহার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেলের পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেন।
খুনের আসামিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ বেলা ১১ টায় কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন।
মেয়র সাক্কু বলেন, কুমিল্লার ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা আগে কখনো ঘটে নি। আমরা সিটি কর্পোরেশনের সকল কাউন্সিলরসহ নগরবাসী এক হয়েছি। আমরা খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
এসময় বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলর জমির উদ্দিন খান জম্পি, মঞ্জুর কাদের মনি, মাসুদুর রহমান মাসুদসহ আরও অনেকে।
পরে তাঁরা বিচারের দাবিতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি ও প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, গত ২২ নভেম্বর সোমবার বিকালে কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহাকে। এ সময় আরও চারজন গুলিবিদ্ধ হয়।
পরে মঙ্গলবার রাত ২টায় সোহেল-এর ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় শহরের সুজানগর বৌবাজার এলাকার জানু মিয়া’র ছেলে ‘মাদক কারবারী’ শাহ আলমকে প্রধান করে ১১ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও ৮/১০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
বিভি/এসএমপি/এএন
মন্তব্য করুন: