• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

মডার্ণ সী ফুডের কর্মকর্তা হত্যা

শিল্পপতির ছেলেসহ পাঁচজনের যাবজ্জীবন 

খুলনা প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ৪ এপ্রিল ২০২২

আপডেট: ২১:০৩, ৪ এপ্রিল ২০২২

ফন্ট সাইজ
শিল্পপতির ছেলেসহ পাঁচজনের যাবজ্জীবন 

নিহত উজ্জ্বল

খুলনার বহুল আলোচিত মডার্ণ সী ফুডের কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার সাহা হত্যার দায়ে একই প্রতিষ্ঠানের মালিকের ছেলে মেহেদী হাসান স্টার্লিংসহ পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সোমবার খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ শহীদুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি কামরুল ইসলাম।
 
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলো- শিল্পতি রেজাউল হকের ছেলে মেহেদী হাসান স্টার্লিং, মোঃ আরিফুল হক সজল, নাহিদ রেজা রানা ওরফে রানা ওরফে লেজার রানা, মোঃ ডালিম শিকদার ওরফে আমির শিকদার ডালিম ও সজল মোল্লা। অপরদিকে এ মামলার অন্য চার আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় তাদের খালাস দিয়েছেন আদালত।

মামলার বিবরণে জানা যায়, উজ্জ্বল কুমার সাহা মডার্ণ সী ফুডের ফিন্যান্স শাখায় কর্মরত ছিলেন। চাকরির সুবাদে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী হাসান স্টার্লিংয়ের পিতা ও স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক ছিলো। বিভিন্ন সময়ে তিনি মেহেদী হাসান স্টার্লিং সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তাদের কাছে সরবরাহ করতেন। এক পর্যায়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে উজ্জ্বল কুমার সাহাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপরও মেহেদী হাসান স্টার্লিং বিভিন্ন বিষয়ে উজ্জ্বল কুমার সাহাকে নানা বিষয়ে সন্দেহ করতেন। একপর্যায়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

২০১২ সালের ৭ জুন সকাল পৌনে ১০টার দিকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সন্ত্রাসীদের দিয়ে উজ্জ্বল কুমার সাহার ওপর জোহরা খাতুন বিদ্যানিকেতনের সামনে হামলা চালানো হয়। সন্ত্রাসীরা ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প ও ইট দিয়ে তাকে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। এ অবস্থায় তাকে প্রথমে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তার ছোট ভাই সুমন কুমার সাহা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা থানার এসআই মো. সোহেল রানা মেহেদী হাসান স্টার্লিংসহ সকল আসামিকে গ্রেফতার করেন। এর মধ্যে আসামি মামুনকে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে সহ সকল আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এ মামলা থেকে মূল পরিকল্পনাকারী মেহেদী হাসান স্টার্লিং ও তার বন্ধু মেহেদী হাসান মামুনের নাম বাদ রেখে ৮ জনের নামে তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

২০১৪ সালে ১৩ জানুয়ারি আদালতের নির্দেশক্রমে মামলাটির তদন্তভার সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক শেখ শাহাজাহানের ওপর ন্যস্ত করা হয়। তদন্ত শেষে একই বছরের ১২ অক্টোবর প্রধান আসামি মেহেদী হাসান স্টার্লিং ও তাঁর বন্ধু মেহেদী হাসান মামুনকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। 
সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর খুলনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের আদেশ মোতাবেক মামলাটির তদন্তভার পিবিআই হেডকোয়ার্টারের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলামের ওপর ন্যস্ত হয়। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি তিনি মামলার কেস স্টোরি স্ট্যাডি করেন। সেখানে তিনি দেখেন মেহেদী হাসান স্টার্লিংয়ের অনৈতিক কার্যকলাপের কথা পরিবারকে বলার কারণে উজ্জ্বল কুমার সাহাকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করা হয়। মূল পরিকল্পনাকারী মেহেদী হাসান স্টার্লিংকে কিভাবে এ মামলার দায় থেকে পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তারা বাদ দিলেন তা তার বোধগম্য নয় বলে গত বছর ২ আগস্ট দেয়া সম্পূরক  চার্জশিটে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি ২০২১ সালের ২ আগস্ট আদালতে মেহেদী হাসান স্টার্লিংয়ের নাম উল্লেখসহ নয়জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। মামলা থেকে স্টার্লিংয়ের বন্ধু মেহেদী হাসান মামুনকে অব্যাহতি চাওয়া হয় চার্জশিটে।

এরপর উজ্জ্বল কুমার সাহা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ও প্রতিষ্ঠানটির ডিরেক্টর শিল্পপতি মেহেদী হাসান স্টার্লিং ২২ সেপ্টেম্বর (বুধবার) আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে কারাগারে পাঠান আদালত। আদালত-সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ রায় প্রদান করেন।

বিভি/এপি/এইচএস

মন্তব্য করুন: