• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

৩৫ বছর যাবত হেটে হেটে নামাজের দাওয়াত দেন আব্দুস সাত্তার

আফজাল হোসেন পন্টি, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:২৩, ১৮ এপ্রিল ২০২২

ফন্ট সাইজ
৩৫ বছর যাবত হেটে হেটে নামাজের দাওয়াত দেন আব্দুস সাত্তার

কাঁধে ঝোলা ব্যাগ, হাতে হ্যান্ড মাইক, দূর থেকে দেখলে কোন পণ্যের ক্যানভাসার বলেই মনে হবে ৫৫ বছর বয়েসী আব্দুস সাত্তারকে। একটু কাছে গিয়ে খেয়াল করলে শোনা যাবে পণ্য বিক্রি নয় তিনি নামাজের দাওয়াত দিচ্ছেন। মাইক হাতে এভাবেই সবাইকে নামাজ পড়ার আহবান জানিয়ে পথে পথে হাঁটছেন বিগত প্রায় ৩৫ বছর ধরে। আপনি যদি নারায়নগঞ্জের রাস্তা ঘাটে চলাচল করেন, তাহলে কোন না কোন সময় সাত্তারের নামাজ পড়ার আহবান আপনার কানে পৌছবেই।

প্রায় ৬ মাস আগে প্রথম শহরের চারারগোপ এলাকায় মাইক হাতে সাত্তারকে নামাজের দাওয়াত দিতে দেখার পর মনে হয়েছিল বুঝি কোন ছিট গ্রস্থ মানুষ। কিন্তু আশেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করে বোঝা গেল যে, সাত্তারকে প্রায় সবাই কোন না কোন সময় দেখেছেন এবং জানেন সে ঘুরে ঘুরে নামাজ পড়তে বলেন সবাইকে। এরপর থেকেই মনে মনে খুঁজছিলাম লোকটিকে। গত রবিবার (১৭ এপ্রিল) দিন হঠাৎ মন্ডলপাড়া এলাকায় দেখা হয়ে যায় আবার। এবার আর দেরি করিনি। রিক্সা থামিয়ে নেমে পড়ি। কথা হয় আব্দুস সাত্তারের সাথে।

আব্দুস সাত্তার জানান, শহরের উত্তর চাষাড়া ছোট মসজিদ এলাকায় ভাড়া থাকেন তিনি। বোধ বুদ্ধি হবার পর থেকেই নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করেন আর বয়স ২০/২১ হবার পর অন্যদের নামাজ পড়ার দাওয়াত দিতে থাকেন। 

তিনি বলেন, কোরআন পড়ে বুঝতে পারি আল্লাহ বলেছেন নিজে নামাজ পড়, অন্যকে নামাজ পড়তে বলো এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করো। কথাগুলো মাথায় গেথে যায়। এরপর থেকেই রাস্তায় হেটে হেটে মানুষকে নামাজ পড়তে বলি। প্রথমে মানুষ পাগল ভাবতো। কিন্তু আস্তে আস্তে সবাই বুঝেছে যে আমি পাগল নই। নারায়নগঞ্জের প্রতিটি সড়কে আমি মাইক হাতে নামাজের প্রচার করি। প্রতিদিন সকাল ১০ টায় বের হই, আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত হেটে বেড়াই। নারায়নগঞ্জের বাইরে কুমিল্লা, চিটাগাং, বরিশাল, সিলেটসহ দেশের বহু জেলায় আমি গিয়েছি নামাজের দাওয়াত দিতে।

তার কাছে জানতে চাইলাম এটা ছাড়া পেশাগত কি কাজ করেন? জানালেন ইলেক্ট্রিসিয়ানের কাজ করেন। ২ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ২ ছেলের ১ জন গার্মেন্টসে চাকরী করে আরেকজন নিত্যপণ্যের ব্যবসা করে। মোটামুটি ভালই চলে যায়। এছাড়া অনেকেই তাকে আর্থিক সহায়তা করেন।

সাত্তার জানান, একটি মসজিদের পক্ষ থেকে আমাকে দুটা হ্যান্ড মাইক দেবে। আর একটি মাইক কোম্পানি অটোরিক্সা বা সিএনজি দিবে এই কাজে সহায়তা করতে। তখন হয়ত আরও বেশী মানুষের কাছে নামাজের দাওয়াত পৌঁছে দিতে পারব। 

তিনি আরও জানান, পরিবারের সবাই আমার এই কাজটাকে ভালভাবে নিয়েছে এবং তারা আমাকে উৎসাহও দেয়।

তার নামাজের আহবানে কেউ সারা দেয় কিনা জানতে চাইলে বলেন, প্রচুর লোক আমার এই দাওয়াত গ্রহন করে। বিশেষ করে যুবক ভাইয়েরা আমার আহবানে বেশী সারা দেয়। তারা আমাকে এই কাজটি চালিয়ে যেতে উৎসাহ দেয়।

কথা বলতে বলতেই আসরের আজান হয়ে গেল। আব্দুস সাত্তার বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।মাইকে ভেসে আসতে থাকলো তার আহবান,”নামাজ পড়েন,কোরআন পড়েন,আল্লাহকে ভয় করেন….”

বিভি/এইচকে

মন্তব্য করুন: