• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

নিহত ছাত্রের স্বজনকেই গ্রেফতার দেখালো পুলিশ

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ১২ জুন ২০২২

আপডেট: ০৮:২৪, ১২ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
নিহত ছাত্রের স্বজনকেই গ্রেফতার দেখালো পুলিশ

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের সেবা না পেয়ে মারা যাওয়া কলেজছাত্রের মামাসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিকালে ঘটনাস্থল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হলে রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় তাদের দুজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

গ্রেফতার দুজনের নাম আনোয়ার হোসেন ও শাওন। শাওন  ইসলামিয়া কলেজের ডিগ্রির ছাত্র, উত্তর আমানতগঞ্জ এলাকার কবির হোসেনের ছেলে। আনোয়ার হোসেন নিউ ভাটিখানা এলাকার ইউনুস হাওলাদারের ছেলে, চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়া কলেজছাত্র রিয়াদের মামা।

এ ঘটনায় শাওনের মা শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘আমার ছেলে কাউকে মারধর করেনি। আহত রিয়াদ হাসপাতালের বেডে ছটফট করতে করতে যখন মারা যাচ্ছিল তখন ও পাশেই ছিল। মৃত্যুর দৃশ্য দেখার পর থেকেই রিয়াদের লাশের পাশে বসে ছিল। কিন্তু আমার ছেলেকে বিনাদোষে গ্রেফতার করা হয়েছে। আপনারা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিওতেও দেখতে পারেন সে কারও ওপর হামলা করেনি। এমনকি ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রিয়াদের লাশ আটকে রেখেছিল। আহত অপর দুই ছাত্রের চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছিল। ইন্টার্নরা হাসপাতালের গেটে তালা লাগিয়ে কর্মবিরতি পালন করে। শেষে রিয়াদের সহপাঠী ও এলাকাবাসী লাশ এবং আটক দুইজনের মুক্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। মেয়র নিজে ঘটনাস্থলে এসে আশ্বাস দেন। কিন্তু বিনাদোষে আমার ছেলে ও রিয়াদের মামাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

আনোয়ার হোসেন ও শাওনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন। তিনি বলেন, ‘শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে গ্রেফতার দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। রাত সাড়ে ৮টায় এজাহার গ্রহণ করা হয়। এজাহারে চিকিৎসকদের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেন ও শাওনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ‘

তিনি জানান, সকালে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া কলেজছাত্রের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মারা যাওয়া রিয়াদের ভাই শেখ পাপ্পা বলেন, ‘আমার ভাই বিনা চিকিৎসায় মারা গেলো। তারপর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আমাদের মারধর করল। আমাদের দুইজনকে গ্রেপ্তার করল। বিনা কারণে আমাদের ওপর অবিচার করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কেউ মারধর করেনি। রিয়াদের সহপাঠীরা উত্তেজিত হয়ে একটি ফ্লাক্সে আঘাত করলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এসে মারা যাওয়া রিয়াদের স্বজনসহ সহপাঠীদের মারধর করে। অথচ মারধরের অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হলো আমাদের।

এ ঘটনায় ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাকিন আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে কাজের নিরাপত্তা না পেলে আমরা কর্মবিরতিতে যাবো। আমাদের সঙ্গে সারাদেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও কর্মবিরতিতে যাবে। আমরা সিটি করপোরেশনের মেয়রের আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু হামলাকারীরা যদি প্রকাশ্যে ক্ষমা না চায় তাহলে আবারও আন্দোলনে যাবো।’

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটির সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করছি। আমি ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবিসমূহ শুনেছি। আশা করি, দ্রুত উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির সমাধান হবে।

শনিবার (১১ জুন) দুপুর ১২টার দিকে রিয়াদ হোসেন, হৃদয় ও ওসমান গনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। সেখান থেকে আহত তিনজনকে উদ্ধার করে দুপুর দেড়টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক রিয়াদ হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন।

তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না দেওয়ায় রিয়াদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করে স্বজন ও সহপাঠীরা। তাদের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সূত্র ধরে রাত সাড়ে ৯টা থেকে কর্মবিরতি পালন করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এরপর সড়ক অবরোধ করেন মারা যাওয়া ছাত্রের স্বজন-সহপাঠীরা। অবশেষে মেয়রের আশ্বাসে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা অবরোধ তুলে নেয়।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: