দুই যুগে এক সড়কে প্রাণ গেল ৫জনের
মায়ের পেট ফেটে বেরিয়ে আসা শিশুর পরিবারে মহাসড়ক এক আতঙ্ক(ভিডিও)
ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের রায়মনি মোস্তাফিজুর রহমানদের বাড়ি। গতকাল সোমবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের সামনেই উঠানে পাশাপাশি তিনটি নতুন কবর। যেখানে শায়িত হয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী রত্না বেগম ও মেয়ে সানজিদা। একসঙ্গে তিনজনকে হারিয়ে কবরগুলোর পাশে নির্বাক বসে আছেন জাহাঙ্গীরের বৃদ্ধ মা সুফিয়া আক্তার আর বাবা মুস্তাফিজুর রহমান বাবলু। একটু দুরে ঠায় দাঁড়িয়ে জাহাঙ্গীর-রত্না দম্পতির শিশুকন্যা জান্নাত ও ছেলে এবাদত। দুজনই বাকরুদ্ধ। স্বজনদের ভিড়ে কেবল মা-বাবাকেই খোঁজে ফিরছিল তাদের নয়ন।
বাবলুর পরিবারের কাছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এখন এক আতঙ্কের নাম। এই সড়কে গত ২৭ বছরে প্রাণ গেছে ভাই ছেলে নাতিসহ ৫জনের। সবারই কবর দেওয়া হয়েছে পাশাপাশি, বাড়ির উঠানে। সেখানেই বাকরুদ্ধ দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই নাতিসহ সত্তরোর্ধ্ব প্রতিবন্ধী মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু। তাই কাঁদলেও দুচোখ বেয়ে আর জল গড়ায় না। গলা ধরে আসা কণ্ঠে শুধু বললেন, ‘আমি কী নিয়ে বাঁচব, আল্লাহ আমাকে কোন পরীক্ষায় ফেলেছেন।
আশ্বাস দিলেও এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটির সাহায্যে। ঘটনার তিনদিন পার হলেও এখনও তাদের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। সবাই শুধু অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া নবজাতককে দত্তক নিতে চায়। তবে যদি এমন কেউ আমাদের চারজনের দেখা শুনার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হয় তাহলে শিশুটিকে দত্তক দেয়ার ব্যাপারে ভেবে দেখা হবে বলে জানান শিশুটির দাদা মুস্তাাফিজুর রহমান বাবলু।
যার কারনে তিনটি প্রাণ কেড়ে নিয়ে এই পরিবারটিকে নিঃস্ব করে দিয়েছে সে ট্রাক ড্রাইভারের বিচার চান শিশুটির দাদী ও স্বজনরা।
নিজে লেখাপড়া কম করলেও জাহাঙ্গীরের ইচ্ছে ছিল তার বড় মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে বড় করবে। এখন সেই স্বপ্ন পুরন করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন অকালে পিতা হারা কন্যারা।
গত শনিবার দুপুরে ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবা ও এক সন্তান মারা গেলেও গর্ভবতী মায়ের পেট ফেটে বেরিয়ে আসা নবজাতকটি আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে আছে এবং সুস্থ আছে।
মন্তব্য করুন: