‘তত্ত্বাবধায়ক মামলার আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য মামলার শুনানি স্থগিত’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার আপিল আবেদনের দ্বিতীয় দিনের শুনানি সম্পন্ন। এ সময় প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, 'তত্ত্বাবধায়ক মামলার আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোনো মামলার আপিল শুনানি হবে না। এটিই এখন সবচেয়ে বড় মামলা।'
বুধবার (২২ অক্টোবর) দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে আইনজীবীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আপিল বিভাগের গাইডলাইন চাইলে প্রধান বিচারপতি মামলাটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এ ঘোষণা দেন।
এসময় প্রশ্ন তুলেন প্রধান বিচারপতি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরলে তা সংসদের ক্ষমতাকে খর্ব করবে কি না।
শুনানিতে ড. বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে তার আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগ পর্যন্ত মোট ১২ জন বিচারপতি এ মামলাটি শুনেছেন, যার মধ্যে ৮ জনই এটি রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন, তবে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকসহ চারজন তা বাতিল করতে বলেন।
এর আগে, ২১ অক্টোবর নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের প্রথম দিনের শুনানি হয়। গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়।
এরপর ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আপিল করেন। পরবর্তী সময়ে নওগাঁর রানীনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আপিল করেন।
উল্লেখ্য, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।
এ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।
ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন— তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৬ অক্টোবর একটি আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
পরবর্তী সময়ে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর একটি আবেদন করেন।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: