• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

এমটিএফই প্রতারণায় টাকা হারিয়েও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গ্রাহকরা!

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ২৩ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ২৩:২৪, ২৩ আগস্ট ২০২৩

ফন্ট সাইজ
এমটিএফই প্রতারণায় টাকা হারিয়েও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গ্রাহকরা!

ফাইল ছবি

মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ বা এমটিএফই নামের একটি ট্রেডিং গ্রুপের প্রতারণার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশের অন্তত ৪২ লাখ গ্রাহক। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা তারা হাতিয়ে নিলেও বাংলাদেশের কোনো থানায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেননি কেউ। এমনকি সর্বশান্ত হওয়ার পরও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কোনো আলোচনাও করতে চাইছেন না। উল্টো সর্বস্ব হারিয়েও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গ্রাহকরা। কিন্তু প্রশ্ন হলো এতো বড় প্রতারণার শিকার হয়েও কেনো থানায় গিয়ে অভিযোগ করছেন না ভুক্তভোগীরা? 

রাজধানীর অদূরে একটি গ্রামের কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয় বাংলাভিশনের। তারা জানান- লাখ লাখ টাকা হারিয়েও প্রতিকার তো দূরের কথা, থানায় অভিযোগ করারও সাহস পাচ্ছেন না পুলিশি ঝামেলার ভয়ে। তাদের শঙ্কা- এমটিএফই-এর ব্যবসা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে করা হয়েছিলো। আর  বাংলাদেশে এর অনুমোদন নেই। তাই অভিযোগ করতে গেলে হয়রানির শিকার হতে পারেন এমন আশঙ্কা তাদের।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীরা জানান, তারা কলেজে পড়াশুনা করছেন। মাস কয়েক আগে একদিন এলাকার এক বড় ভাই তাদেরকে এমটিএফই-তে লাভের বিষয়ে ধারণা দেয়। এরপর তাদেরকে একদিন এমটিএফই আয়োজিত সেমিনারে অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করে। আর সেখান থেকেই তারা এই গ্রুপে যুক্ত হন। কিন্তু তারা তখন কোনোভাবেই বুঝতে পারেননি এরা অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। 
    
ভক্তভোগীরা জানায়, মাসুদ আল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি দুবাই থেকে এই প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করতেন। আর তাদের সহযোগী হিসেবে মহসিন ও সজীব নামের দুজন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে নামীদামী হোটেলে সেমিনার করতো। আর এভাবেই গ্রাহককে নিজেদের ডেরায় টানেন তারা। ক্ষণে ক্ষণে তারা  নানা অফার দিতেন গ্রাহকদের। কখনও কখনও একজন গ্রাহক ১০০ জন গ্রাহককে যুক্ত করলেই হয়ে যেতেন কোম্পানি নিযুক্ত সিইও। 

জানা গেছে, ঢাকাসহ সারাদেশে এই কোম্পানির ৪ শতাধিক অফিস রয়েছে। মূলত এসব অফিস একেকজন সিইও’র অধীনে পরিচালিত হতো। আর এসব সিইও’র অধীনে থাকতো কয়েক লাখ গ্রাহক। তবে তাদের অফিসগুলো প্রকাশ্যে ছিলো না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। 

প্রায় বছরখানেক ধরে এমন প্রতারণার জাল বুনলেও গ্রাহকরা প্রথম আভাস পান গত ৭ আগস্ট। সেদিন কারিগরি ত্রুটির কথা বলে গ্রাহকদের টাকা উত্তোলন সেবা বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর গত ১৭ আগস্ট অনলাইন থেকে পুরোপুরি হাওয়া হয়ে যান তারা। তবে হাওয়া হয়ে গিয়েও থামেনি তারা। গ্রাহকের একাউন্টে থাকা সব টাকা লুটে নিয়ে উল্টো একাউন্টে মাইনাস ফিগার বসিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, মাইনাস ফিগারের ডলার পরিশোধ না করলে গ্রাহকের বিরুদ্ধে ওই কোম্পানি আইনগত ব্যবস্থা নেবে। 

কোম্পানিটির নেপথ্যের কারিগর মাসুদ আল ইসলাম দুবাই থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেন তারা প্রতারণা করেননি। একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে লোকসানের শিকার হয়েছেন। তাই এমটিএফই গ্রাহকের ব্যালেন্স মাইনাস দেখাচ্ছে। উল্টো তিনি সাফাই গাইলেন কোম্পানির পক্ষে। বললেন, সবকিছু আগের মতো সচল আছে।

তবে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ না করলেও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে দেশের একাধিক নিরাপত্তা সংস্থা কাজ করছে বলে জানা গেছে। এই বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিও কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সাইবার ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রেজাউল মাসুদ।

দীর্ঘ সময় ধরে দেশে অবৈধভাবে এমন কর্মকাণ্ড চললেও কেন তা প্রশাসনের নজরে পড়েনি তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। তবে এ নিয়ে দায়িত্বশীল কোনো প্রতিষ্ঠান মন্তব্য করতে রাজি হননি। 
 

বিভি/এসএইচ/টিটি

মন্তব্য করুন: