ভূমি খেকো ভূমি অফিস (দ্বিতীয় পর্ব)
হাজার কোটি টাকার খাস সম্পত্তিতে গড়ে উঠেছে হিলভিউ হাউজিং!

চট্টগ্রামে ভূমি অফিস রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করায় সরকারি শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি গ্রাস করছে ভুমিদস্যু সিন্ডিকেট। মহানগরীর পাঁলাইশ ও বায়েজিদ এলাকায় এই সিন্ডিকেট হাজার কোটি টাকার ৪৬ একর খাস জমিতে গড়ে তুলেছে হিলভিউ হাউজিং।
সরকারি বিপুল সম্পত্তি আত্মসাতের কারণে দুই দশক নামজারী বন্ধ থাকলেও একটি রায়কে ঘিরে ভূমি অফিস হঠাৎ দুইমাসে খতিয়ান সৃজন করেছে ১৬০টি। এদিকে বিষয়টি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার অনুসন্ধান করছেন জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার এসব জমি উদ্ধার করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বললেন।
চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁলাইশ ও বায়েজিদ থানা এলাকার পাহাড়ি ৪৬ একর সরকারের খাস জমি। এই সরকারি খাস জমিতে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে হিলভিউ হাউজিং কোম্পানি লিমিটেড। এখানে গড়ে ওঠেছে ছোট-বড় কয়েকশ’ আবাসিক ভবন। উচ্চতা এক থেকে ১০তলা পর্যন্ত।
সরকারি খাস জমিতে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলায় এসবের নামজারি হয় না দীর্ঘ দুই দশক। এ বিষয়ে সরকার ও হাউজিং কোম্পানির একাধিক মামলা-পাল্টা মামলা বিচারাধীন রয়েছে। নিয়ম না মেনে তবুও ৩ জুলাই পর্যন্ত ২ মাসের মধ্যে তড়িঘড়ি করে ১৬০টি নামজারী মামলা সম্পন্ন করেছে সহকারী কমিশনার ভূমি।
সরকারি খাস জমি প্রথম আপিলে হারলেও দ্বিতীয় আপিলসহ সর্বোচ্চ আপিলে আইন ও বিধি অনুযায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নিয়ম রয়েছে হয়। আপিল মামলা নং ৮৯/২০২৩ এর ২৩/০২/২০২৫ তারিখের আপিল ডিসমিস অর্থাৎ রায় ডিক্রির সার্টিফায়েড কপি এসি ল্যান্ড ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এখনো পাননি। তাছাড়া রয়েছে রিভিউ করার সুযোগও। তবুও রায় ডিক্রিমূলে নামজারী করতে হলে নিয়ম মোতাবেক এসি ল্যান্ড জেলা প্রশাসককে এবং জেলা প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনারকে পাঠাবেন মাতামতের জন্য। ১৬০টি নামজারী মামলা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি।
রীট ৬৯৬৩/১০ মূলে ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যে ইংজাংশন রুল নিষ্পত্তি পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল এই সম্পর্কে কোন তথ্যও নেই এসি ল্যান্ড’র নিকট। সরকারের পক্ষ থেকে দায়ের করা লিভ টু আপিল ২৪০৪/১০ এর সবশেষ অবস্থা কি এই সম্পর্কেও কোন তথ্য নেই এসি ল্যান্ড’র কাছে।
শুধু সরকারি সরকারি খাস জমি নয়, পাশের বার্মা কলোনীর রিফিউজিদের জন্য বরাদ্দকৃত ১৪একর জায়গাও দখলে নিয়েছে হিলভিউ হাউজিং কোম্পানি। এ ব্যাপারে অভিযোগ দিয়ে ও কোন কাজ হয়নি জানালেন, বার্মা কলোনী এডহক কমিটির নেতা মো. মাসুদ রানা।
তিনি বলেন প্রশাসন, সিডিএ সবসময় ভূমিদস্যুদের পক্ষে কাজ করে। একইভাবে নিয়ম না মেনে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে ১৬০টি নামজারী মামলা সম্পন্ন করার কথাও বলেন তিনি।
শুধু ভূমি অফিস নয়, খাস জায়গায় ভবন নির্মাণে অনিয়মের সাথে জড়িত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ-সিডিএও। তবে সিডিএ’র উপ প্রধান পরিকল্পনাবিদ মো. আবু ঈসা আনছারী দাবি করেন, জায়গার সমস্যা সম্পর্কে তাদের জানা ছিল না। প্রশাসনও লিখিতভাবে তাদের কিছু জানায়নি। জানালে স্থগিত রাখবেন বলে জানান তিনি।
তবে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, জেলা প্রশাসন বলেনি বলে সিডিএর দায় এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। সমস্ত কাগজপত্র যাছাই করে প্ল্যান অনুমোদন করে সিডিএ। কাগজপত্র দেখার একটি বিভাগও আছে। সিডিএ তদন্ত করে অনুমোদিত প্লান বাতিল করতে পারে।
এ বিষয়ে ভূমি আইন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. নওয়াব আসলাম হাবিব বলেন, সুযোগ সন্ধানী মহল ভূমি অফিসের যোগসাজশে নানভাবে সরকারী সম্পত্তি আত্মসাতের সাথে জড়িত। এব্যাপারে সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ উচিত। না হয় সরকারি সব খাস সম্পত্তি ধীরে ধীরে বেহাত হয়ে যাবে।
এ দিকে বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন বলেন, বাস্তবতা হলো সমাজে ভূমিদস্যু আছে, কিছু অসৎ কর্মচারী আছে তারা এসব অপকর্মের সাথে জড়িত। আদালতকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রায় গোপন করে রাখে। আমরা এসব নানা কারণে হেরে যাই। আমাদের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার বিষয়টি অনুসন্ধান করছেন। এসব জমি উদ্ধার করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনবেন বলেও জানান তিনি।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: