• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

ভূমি খেকো ভূমি অফিস (তৃতীয় পর্ব)

অর্ধশত কোটি টাকার পরিত্যক্ত সম্পত্তি আত্মসাতে জাল খতিয়ান ও দলিল তৈরি

নাসির উদ্দিন, চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশিত: ১২:২৪, ১৫ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১২:৫৬, ১৫ জুলাই ২০২৫

ফন্ট সাইজ
অর্ধশত কোটি টাকার পরিত্যক্ত সম্পত্তি আত্মসাতে জাল খতিয়ান ও দলিল তৈরি

চট্টগ্রামে ভূমি অফিস রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করায় সরকারি শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি গ্রাস করছে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট। রামপুরায় প্রথমে লীজগ্রহণ অতঃপর, জাল খতিয়ান ও দলিল তৈরী এবং ঘষামাঝার মাধ্যমে পরিত্যক্ত সম্পত্তিকে অর্পিত সম্পত্তি বানিয়ে অর্ধশত কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের বিষয় উঠে এসেছে সরকারি তদন্তে।

কিন্তু প্রশাসন দায়সারা তদন্ত করলেও অপকর্মে জড়িত ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ফাঁকতালে সরকারি সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা।    

চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর থানার রামপুর মৌজার ৪১শতক সম্পত্তির মালিক ছিলো অবাঙালির প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স আশরাফ এন্ড ব্রাদার্স’। ১৯৭১সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে প্রতিষ্ঠানটির মালিক বাংলাদেশ ত্যাগ করে পাকিস্তান চলে যান। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই সম্পত্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়। 

জেলা প্রশাসক পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে শফিউল আজম চৌধুরী, মো. ইকবাল ও মোহাম্মদ নুরুন্নবীকে একসনা লীজ দেন। তারা পরে জাল খতিয়ানসহ কাগজপত্র তৈরীর মাধ্যমে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা হতে অবমুক্তি পূর্বক ভূমি উন্নয়ন কর পরশোধ করার আবেদন করেন। 

একপর্যায়ে জনৈক অবাঙালি অখিল আহাম্মদ এই সম্পত্তির মালকানা দাবি করে ১৯৭৫ সালে সম্পূর্ণ সম্পত্তি মনছুর আলী গংয়ের নিকট বিক্রি করেন। এরপর একাধিক মালিক ক্রয়-বিক্রয় করেন। এমনকি পক্ষে-বিপক্ষে একাধিক মামলাও হয়। অপর মামলা নং-৯২/১৯৯৬ এবং অপর মামলা নং-৩৩০/১৯৯৭ এর নালিশী ও তপশীলের জমিতে সরকারের স্বত্ব ও স্বার্থ জড়িত থাকলেও সরকারকে বিবাদি কিংবা নোটিশ প্রদান না করে সরকারের বিরুদ্ধে একতরফা রায় ও সোলেনামা প্রদান করা হয়। 

শুধু তাই নয়, এই সম্পত্তি আত্মসাত করার জন্য ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল ২২২৪ নাম্বার জাল খতিয়ান তৈরী করা হয়। আবার খতিয়ান রেজিস্ট্রারে পরিত্যক্ত সম্পত্তি লেখা ঘষামাঝা করে অর্পিত সম্পত্তি বানানো হয়। কারণ পরিত্যক্ত সম্পত্তি অবমুক্ত করার সুযোগ নেই। এর দালিলিক প্রমাণ রয়ে গেছে রেজিস্টারে। আবার জালিয়াতচক্র অবমুক্তির জন্য আবেদনও করেছে। ২০১৫সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকায় এই জমিসহ অন্যান্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা ভূমি সচিবের নিকট পাঠানো হয়।

এই খতিয়ান বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার জন্য গত ১২ মে সহকারী কমিশনার ভূমি তানবির হাসান তুরান তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২২২৪ নাম্বার খতিয়ানটির অনুমোদনের তারিখ ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল হলেও ২২২৩ নাম্বার খতিয়ানের তারিখ ১০/০৯/২০১২ এবং ২২২৫ নাম্বার খতিয়ানের তারিখ ০৬/০৯/২০১২। অর্থাৎ কোন সামঞ্জস্য নেই।

বর্তমানে লীজি এই সম্পত্তিতে নিয়ম না মেনে শোকরানা হাউজ নামে দুই ইউনিটের দু’তলা বাড়ি করেছে। লীজ সম্পত্তিতে টিনশেড ঘর করার বিধান থাকলেও ভূমি অফিসের প্রশ্রয়ে এভাবে একর পর এক বেহাত হতে চলেছে সরকারি সম্পত্তি। মূল সম্পত্তির মালিক পাকিস্তান চলে যাওয়ার পরও ভূমিদসূ চক্রের সদস্যরা আদালতে একাধিক মিথ্যা মামলা করেন এবং নকল ব্যক্তি সেজে ও সাজাইয়া প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার এই সম্পত্তি আত্মসাতের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই বিষয়ে সনাক ও টিআইবি চট্টগ্রাম মাহনগর সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, অগ্নিমূল্যের কারণে প্রশাসনের সহায়তায় সরকারি সম্পত্তি দখল-বেদখলের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ভূমিদস্যুরা। সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য রক্ষাকবচ তৈরী করতে হবে।না হয় ভূমি অফিসের সহযোগিতায় সরকারি জায়গা দখল করে ভূমিদস্যুরা ভবন নির্মাণ অব্যাহত রাখবে।    

ভূমি আইন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. নওয়াব আসলাম হাবিব বলেন, এপি সম্পত্তি বিপি করার কোন সুযোগ নেই, এটি বেআইনী। ভূমি অফিসের যোগসাজশে নানাভাবে সরকারি সম্পত্তি ব্যক্তি নামে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আত্মসাতের সাথে জড়িত কর্মচারী এবং সুযোগসন্ধানী মহলের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ উচিত মনে করেন তিনি।

এদিকে বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন বলেছেন, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জাল খতিয়ান ও দলিল তৈরিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে। এসব অপকর্মে জড়িত অনেক কর্মচারীকে ইতোমধ্যে শাস্তি দিয়েছি, অনেকগুলো বিভাগীয় মামলা চলছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তির আওতায় আসবেন সবাই। 

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2