ঘুষগ্রহণ ও দায়িত্বে অবহেলা: আশুলিয়া থানার এসআই ক্লোজড

সাভারের আশুলিয়ায় শিশু অপহরণের পর পরিবারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ আদায় ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে আশুলিয়া থানার এসআই মাসুদ রানাকে ক্লোজ করা হয়েছে। মঙ্গলবার আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নান এ বিষয়েটি নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় তাকে ক্লোজ করে ঢাকা জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নিরপরাধ ব্যক্তিকে চুরির মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে ।প্রায় ২ মাস আগে তিনি আশুলিয়া থানায় যোগদান করে নানা ধরনের অনিয়মের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন।
জানা গেছে, শিশু নিখোঁজ ডায়েরির তদন্তের জন্য ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করেন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক মাসুদ রানা। তবে তিনি কোনো ধরনের তদন্ত করেননি।
ভুক্তভোগী পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি বিরক্ত হয়ে বলতেন, এ থানায় আরও ২০-২৫জন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের কেউ এতোটা বিরক্ত করে না, যতটা আপনারা করছেন।
পুলিশি সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে পরিবারের সদস্যরা র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এক পর্যায়ে নিখোঁজের ১৩ দিন পর শিশু জোনায়েদের হাড়গোড় উদ্ধার করে খুনি মোরসালীনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৪।
শিশুটির মা জাহানারা বেগম বলেন, আমার ছেলে গত ১৬ আগস্ট নিখোঁজ হয়। ওই দিনই আশুলিয়া থানায় নিখোঁজের অভিযোগ করি। তবে নিখোঁজ ডায়েরির পরও দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই মাসুদ রানা কোনো তদন্ত করেননি।
আমাদের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমরা সামান্য কিছু টাকা দিলে সেদিনও বলেন, এসব কি খুচরা টাকা দেন। এসআই মাসুদকে আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখার অনুরোধ করলে তিনি আমাদের ওপরই সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখার দায়িত্ব দেন।
তিনি বলেন, আপনারা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে থানায় নিয়ে আসেন। চাপে পড়ে তার দাবি অনুযায়ী পুরো দশ হাজার টাকা দেই। তবুও শেষ রক্ষা হলো না। আমার বাচ্চাকে ওরা মেরে ফেললো।
আশুলিয়া থানার এসআই মাসুদ রানার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিনি। পরবর্তীতে তার সঙ্গে আবারও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন বন্ধ করে দেন।
আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নান বলেন, মাসুদকে জেলা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে । এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী যদি তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাব-৪ সিপিসি-২ এর স্কোয়াড্রন লিডার নাজমুল ইসলাম বলেন, আটক মোরসালিন প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন যে, তার বেশ কিছু টাকা ঋণ হলে জোনায়েদকে অপহরণ করে আটকে রাখে। উদ্দেশ্য ছিল অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করে ঋণের টাকা পরিশোধ করা।
তিনি বলেন, মুক্তিপণের টাকা দাবি করা ফোন কলের সূত্র ধরে জোনায়েদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর পর আমরা ঘাতক মোরসালিনকে আটক করেছি।
এলাকাবাসী জানান, আশুলিয়ায় অপহরণের ১৩ দিন পর গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শিশু জোনায়েদ এর গলিত লাশ আশুলিয়ার শ্রীপুরের এজিজ গেটের ফারুকনগর এলাকার একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়। নিহত জোনায়েদ গাইবান্ধা জেলা সদরের খামার বোয়ালি গ্রামের সাগর মিয়ার ছেলে। সে পোশাক শ্রমিক বাবা-মায়ের সঙ্গে আশুলিয়ার শ্রীপুরের এজিজ গেট এলাকায় মিয়াজ উদ্দিন ভান্ডারির বাড়িতে ভাড়া থাকত।
আটক মোরসালিন রাজশাহী জেলার গোদাগারী থানার কাপাসিয়া পাড়ার মামুন আলীর ছেলে। তিনি আশুলিয়ার শ্রীপুরের এজিজ গেট এলাকায় মিয়াজ উদ্দিন ভান্ডারির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: