• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

স্কুলের দেড়শ কোটি টাকা মূল্যের ৪ একর জমি ও মার্কেট বেদখল

রাজেক জাহাঙ্গীর, যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৩৫, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
স্কুলের দেড়শ কোটি টাকা মূল্যের ৪ একর জমি ও মার্কেট বেদখল

যশোর ঝিকরগাছার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ গঙ্গানন্দপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৪ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। দখল হওয়া এই জমির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। 

অবাক বিষয়টি হচ্ছে, বিদ্যালয়টির মোট ৬ একর ১৯ শতক জমির মধ্যে ওই ৪ একর জমিতে কোন কর্তৃত্ব নেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। মালিকানা হাতছাড়া হওয়ার মতো এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটলেও কারো যেন মাথাব্যথা নেই। 

ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নের ছুটিপুর বাজার এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, গঙ্গানন্দপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রাচীনতম একটি বিদ্যাপীঠ। যার নিজস্ব জমির পরিমাণ ৬ একর ১৯ শতক। এর মধ্যে প্রায় ৪ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে  মার্কেট, দোকাপাটসহ ২১৪টি পাকা স্থাপনা। কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে জোরপূর্বক গড়ে তোলা এসব স্থাপনার বেশিরভাগেই কংক্রিটের গ্রেডবিম ব্যবহার ও দীর্ঘস্থায়ী টেকসই ছাদ নির্মাণ করা। এখানে রয়েছে গার্মেন্ট, ফার্মেসি, বস্ত্রবিতান, হার্ডওয়ার, মুদি দোকান, হোটেল রেস্তোরাঁ, রড সিমেন্ট ইত্যাদির  দোকানপাট। এমনকি স্কুল গেইটের সাথেই বিশাল আকৃতির গোডাউনে চলছে ব্যবসা।

জানা গেছে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে খালি জায়গা নাম সর্বস্ব মূল্যে ঘরের লম্বা যতবেশিই হোক না কেন ৩ টাকা হাত মেইন পজিশন হিসেবে ভাড়া নেয়া হয়। এরপর গড়ে তোলা হয় বাণিজ্যিক পাকা স্থাপনা। মাত্র ৩ টাকা এক হাত মূল্যের ভাড়ার টাকাও অনাদায় থাকে বছরকে বছর। বছরের পর বছর অনাদায় থাকে। বাজারমূল্যের তুলনায় কখনোই এক টাকাও ভাড়া বাড়েনি। এ নিয়ে কথা বলার সাহস নেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। 

অভিযোগ রয়েছে, পানির দামে ভাড়া নেয়া একসময়ের খালি জায়গায় পাকা দোকানপাট গড়ে তুলে হাত বদলের মাধ্যমে ৩ লাখ, ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত  চড়াদামে  বিক্রি এবং তা হস্তান্তর করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের অনেকেই এখান থেকে সুবিধাভোগ করেছেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি। 

তারা জানান, অনেক আগে থেকেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রতিটি দোকানের লম্বা যতই হোক না কেন সামনের মুখ প্রতি হাত জায়গার মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় মাত্র ৩ টাকা। ধরা যাক, দৈর্ঘ্য ১০ হাত, প্রস্থ ১০ হাত। সেই দোকানি মাসে ভাড়া দিচ্ছেন মাত্র ৩০ টাকা। ক্ষেত্রফল ১'শ হাত। মোট ২২৫ বর্গফুট। সেই হিসেবে প্রতিটি দোকানের মাসিক গড় ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩'শ থেকে ৪'শ টাকা মাত্র। এভাবে ২১৪টি ছোট বড় দোকান মিলিয়ে ঘর ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রতিমাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা মাত্র। বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে যা কল্পনা করা যায় না। 

এদিকে ঘর ভাড়ার টাকা আদায়ে ভাড়াটিয়ার প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সিল-স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নিজ নামীয় প্যাডসহ সিল-স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয় না। এমন স্বীকারোক্তি দিয়ে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান দাবি করেন, ঘরভাড়া আদায়ে প্রতিষ্ঠানের নামীয় প্যাড ছাপাতে দেয়া হয়েছে। 

এ ব্যাপারে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, তিনি এডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দোকান মালিকদের সাথে বসে ঘরভাড়া বাড়ানোর কথা জানাবেন। কিন্তু দোকান মালিকরা তার কথায় কর্ণপাত করেননি। 

গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাজিদ বক্স বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থেকে এসব করেছে। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাজারদর অনুযায়ী একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সচেতনমহল এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকসহ শিক্ষা অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।   

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: