• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫

ফরিদপুরে অর্ধডজন ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ

হারুন আনসারী, ফরিদপুর

প্রকাশিত: ২০:১৫, ৬ নভেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
ফরিদপুরে অর্ধডজন ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ

ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ফ্লাট বাসা ভাড়া নিয়ে চলছিলো যুবক-যুবতী দিয়ে আপত্তিকর কার্যকলাপ। এলাকাবাসী টের পেয়ে এই চক্রের হোতা সহ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত যুবক-যুবতীদের হাতেনাতে তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। 

আর এসময় ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে আটককৃতদের ছাড়িয়ে নিতে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে কর্মরত আব্দুল আওয়াল। তবে তাঁর কথামতো তাদের ছেড়ে না দেওয়ায় তিনি পুলিশে খবর দেওয়ায় স্থানীয়দের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

জানা গেছে, শহরের দক্ষিণ আলীপুরের একটি চারতলা ভবনের নিচের তলার একটি ফ্লাটে বহিরাগত যুবক-যুবতীদের আনাগোনা দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। মঙ্গলবার বিকেলে ওই ফ্লাটে বহিরাগত যুবক-যুবতীদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে স্থানীয়রা জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশে খবর দেন। এরপর কোতোয়ালি থানার এসআই হাসান শিকদারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছে তাদের আটক করে।

আটককৃতরা হলেন, সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চুনাঘাটা বেড়িবাঁধ এলাকার মোস্তফাডাঙ্গী গ্রামের জুয়েল বিশ্বাস (৪০), দক্ষিণ টেপাখোলার মুন্সিডাঙ্গীর মাহিয়া (২০) ও কৈজুরি ইউনিয়নের চর মঙ্গলকোটের বাসিন্দা দুলি বেগম (৩৫)। তাদের বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থেকে গণ-উপদ্রব সৃষ্টির অভিযোগে মামলা দাখিল করা হয়েছে।

কোতয়ালী থানার এসআই হাসান শিকদার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয়রা অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকায় আসামীদেরকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। আটককৃতরা বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত থেকে সমাজে গণ-উপদ্রব সৃষ্টি করে যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছিল। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলা নং- ১৩৬/২৫, তারিখ- ৫ নভেম্বর ২০২৫। তিনি জানান, আসামীদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ২৯০ ধারায় অপরাধ প্রাথমিক তদন্তে ও সাক্ষ্যে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ইতোপূর্বেও তারা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন।    

ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় যুবক অন্তু বলেন, ওই যুবক-যুবতীদের আটকের সময় তারা সেখানে ইয়াবা সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম দেখতে পান। কিছুক্ষণ পূর্বে সেবন করা হয়েছে এমন মাদকের গন্ধও তারা পেয়েছেন। ফ্ল্যাটটিতে তখন দুলিসহ আরো দুই যুবক ও দুই যুবতী ছিলো। তাদের মধ্যে তিনজনকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আর তাদের থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে আব্দুল আউয়াল উপস্থিত হয়ে ফ্লাটের অন্যদের হুমকি-ধমকি দেন।

ঘটন্স্থালে উপস্থিত স্থানীয়রা জানান, সকলের সামনে পুলিশের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদে দুলি স্বীকার করেছে যে, শহরের আরো বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ফ্লাট বাসা ভাড়া নিয়ে তারা এই অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। এই কাজে সে যুবতীদের সরবরাহের দ্বায়িত্বে রয়েছে। 

আটক অপর যুবক জুয়েল এর মাস ছয়েক আগে শহরের আলীপুর মোড়ে অবস্থিত একটি আলোচিত আবাসিক হোটেল থেকে নারী সহ গ্রেফতার হয়। ওই ঘটনায় এক মেয়ের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সোনাগহনা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে সেসময়। সেসময়েও সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যদের ছাড়িয়ে নিতে আব্দুল আউয়ালের তৎপরতা চালাতে দেখা যায়।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির মুন্সি মোখলেসুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, আব্দুল আউয়াল বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে স্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত রয়েছেন। 

জানা গেছে, এর আগে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন আব্দুল আউয়াল। সেসময় ২০২২ সালের ৩ জুলাই রাতের আঁধারে অফিসের সীমানার কেটে রাখা গাছের গলুই চুরি করার অভিযোগে স্থানীয়রা তাঁকে হাতেনাতে আটক করে। এরপর মধুখালী উপজেলা থেকে জেলা সদরের দপ্তরে বদলি হয়ে আসেন তিনি।

শহরের দক্ষিণ আলীপুরের চারতলা ভবনের নিচের তলার ওই ফ্লাটের মালিক জাহাঙ্গীর জানিয়ছেন, এ মাসেরই তাঁর ফ্লাটটি আব্দুল আউয়াল ৯ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। তিনি বলেন, আব্দুল আউয়াল ডিসি অফিসে চাকরি করেন এ বিষিয়টি নিশ্চিত হয়ে তাঁকে ফ্লাটটি ভাড়া দেই। ওই ফ্লাটে স্ত্রী ও শ্বাশুড়িকে নিয়ে তিনি বসবাস করবেন বলে আউয়াল তাঁকে জানান।

ফ্লাট মালিক জাহাঙ্গীর আরো জানান, আগের ভাড়াটিয়া মাস শেষ হলেও তাঁর সব মালপত্র নিয়ে যেতে পারেননি। তিনি কয়েকদিন পর নতুন ভাড়াটিয়াকে ওঠার অনুরোধ জানান। তবে তার আগেই গত শনিবার নতুন ভাড়াটিয়া ফ্লাটে উঠে যান। এখনো পুরনো ভাড়াটিয়ার কিছু মালামাল সেখানে রয়ে গেছে। এরইমধ্যে জানতে পেলাম সেখানে খারাপ কাজ করতে যেয়ে তারা ধরা খেয়েছে। আমি নিজেই এতে খুবই লজ্জিত। আমি তাদেরকে ওই ফ্লাট ছেড়ে দিতে বলেছি।

এবিষয়ে আব্দুল আউয়ালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ফ্লাট তিনি নন, তাঁর পরিচিত চুনাঘাটা বেরিবাঁধ এলাকার জুয়েল ভাড়া নিয়েছেন। ঘটনার দিনে জুয়েল তাকে ফোন করে বিষয়টি জানালে তিনি সেখানে যান। তবে ফ্লাট মালিকের তথ্য অনুযায়ী আউয়াল’ই ফ্লাটটি ভাড়া নেন, এ কথা উল্লেখ করা হলে তিনি তাঁর ভাইয়ের সাথে কথা বলে বিষয়টি কিছুক্ষণ পরে জানাবেন বলে জানান। তবে পরে আর তিনি এই প্রতিবেদককে এবিষয়ে কিছু জানাননি। আউয়াল বলেন, আমি তাদের ছাড়ানোর জন্য বলিনি, কাউকে হুমকিধামকিও দেইনি।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: