জামিনের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা
ছবি: সংগৃহীত
জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসীরা, আর মুক্তির পরপরই বাড়ছে অপরাধের মাত্রা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তারা। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মনোবল ভেঙে পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। আর এই সুযোগটি কাজে লাগায় সন্ত্রাসীরা।
একাধিক মামলার আসামি হয়েও সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, জামিনে বের হওয়ার পরই কেউ কেউ আবার জড়িয়ে পড়ছেন চাঁদাবাজি, দখল ও সহিংসতায়।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান শফিকুল ইসলাম জানান, যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিনে বের হয়েছে আমরা তাদের গতিবিধি নজর দাড়িতে রেখেছি। সম্প্রতি কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পর সেই নজর দারি আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে গেল শুক্রবার তরুণ রাজনীতিবিদ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
যখন দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা নড়বরে, ঠিক সেই সময় শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) জামিন পেয়েছেন চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী শারমিন তামান্না। চার হত্যা মামলায় জামিন পেলেন তারা। গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। তবে ওই আদেশ চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে চট্টগ্রামের আদালতে পৌঁছালে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
বর্তমানে সাজ্জাদ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং স্ত্রী তামান্না ফেনী জেলা কারাগারে রয়েছেন। গত মাসে তাদের চট্টগ্রাম কারাগার থেকে ওই দুই কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
ডিএমপির তথ্য বলছে, এ বছর ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসে শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই প্রায় ২শ খুনের ঘটনা ঘটে। এই হিসাবে মাসে প্রায় ১৯–২০টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে রাজধানীতে। আগের বছরগুলোতে ১২ মাসে যতো হত্যার ঘটনা ঘটেছে, এবার ১০ মাসেই তার চেয়ে ৩০-৩৫টি বেশি খুনের ঘটনা ঘটে।
সম্প্রতি, মিরপুর পল্লবী এলাকায় হার্ডওয়্যারের দোকানে ঢুকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে। এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে খুন হন কিবরিয়া। এতেও উঠে আসে বিদেশে থাকা এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম।
নিহত পরিবারের অভিযোগ- নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। সন্ত্রাসীদের অন্যায় কাজে সারা না দেয়া ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকার কারণেই তাকে এভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যা কাণ্ডের সাথে যারাই জড়িত আছে তাদের বিচারের সামনে এনে কঠিন স্বাস্থির দাবি জানান।
গতমাসে ২৮ বছরের পুরোনো একটি হত্যা মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে প্রকাশ্যে খুন হন শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ মামুন। এদিন তিনি প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন। সিসি ফুটেজে দেখা যায়- প্রাণরক্ষায় মামুন পেছন ফিরে দ্রুত হাসপাতালে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। দুর্বৃত্তরা খুব কাছ থেকে তাকে লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি চালান। অভিযোগ, আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন পরিকল্পনায়ই ঘটে এই হত্যাকাণ্ড।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ অপরাধ ড. তৌদিহুল হক বাংলাভিশনকে বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিনে মুক্তির পর পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় অপরাধীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠছেন। কেউ জেলে বসে আবার কেউ জামিনে বের হয়ে সেই একই অপরাধে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এতে রাজধানীতে অপরাধের মাত্রা না কমিয়ে বেড়ে যাচ্ছে।
বিভি/এআই




মন্তব্য করুন: