• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

‘ভাইব্বা ল কিং’- গ্যাংয়ে অতিষ্ঠ ছিলো মোহাম্মদপুরবাসীঃ র‌্যাব

প্রকাশিত: ১৮:২৪, ২৩ নভেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
‘ভাইব্বা ল কিং’- গ্যাংয়ে অতিষ্ঠ ছিলো মোহাম্মদপুরবাসীঃ র‌্যাব

ভাইব্বা ল কিং’- গ্যাংয়ের গ্রেফতারকৃতরা, ছবিঃ বাংলাভিশন ডিজিটাল

গত দুই-তিন বছর ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, বসিলা ও রায়ের বাজারসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র মহড়া, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ভাড়ায় শোডাউন করে আসছিলো কিশোরদের ১৫-২০ সদস্যদের একটি গ্যাং। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলো মোহাম্মদপুরের বাসিন্দারা। এলাকায় চাঁদাবাজির কাজেও তাদেরকে ব্যবহার করতো ক্ষমতাসীনরা। এতে এই গ্যাং নিজেরকে গড়ে তুলেছে ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামে।

এই গ্যাংয়ের সদস্যরা দিনের বেলা কেউ অটোরিকশা চালক, কেউ দোকানের কর্মচারী, কেউ নির্মাণ শ্রমিক, কেউ বা আবার অফিসের পিয়ন। কিন্তু রাতে তারা হয়ে যায় সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র। তাদের অত্যাচারে দিনের বেলাও অনিরাপদ হয়ে উঠেছিলো মোহাম্মদপুর এলাকা। দিনে দুপুরেও কখনও কখনও তারা ছিনতাই করতো। তাদের এমন অত্যাচারের বিষয়টি র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারিতে প্রমানসহ ধরা পড়ার পর এই গ্যাংয়ের প্রধানসহ নয়জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-২।

সোমবার (২২ নভেম্বর) রাতে এক দম্পতি এই কিশোর গ্যাং চক্রের দ্বারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়। র‌্যাব-২ -এ অভিযোগ করার ১০ মিনিটের মধ্যে ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামের এই কিশোর গ্যাং চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে রাতে অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- গ্যাং লিডার শরীফ ওরফে মোহন (১৮), গ্যাং সদস্য মো. রুমান (১৮),  মো. উদয় (১৯), মো. শাকিল (১৯), মো. নয়ন (১৮) ও মো. জাহিদ (১৮)। তাদের মধ্যে তিনজনের বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় তাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি র‌্যাব।

গ্যাং সদস্যদের গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় চারটি লোহার দেশীয় তৈরি ছুরি, একটি স্টিলের হাতলযুক্ত কুঠার, গাঁজা ৫০ পুরিয়া, দু’টি স্টিলের তৈরি ছুরি, একটি স্টিলের তৈরি হোল্ডিং চাকু, একটি প্লাস্টিকের পিস্তল সদৃশ্য, ৬৫ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা খাওয়ার সরঞ্জাম এবং তিনটি মোবাইল।

র‌্যাব জানায়, আধিপত্য বিস্তার এবং ছিনতাইয়ের পাশাপাশি তারা নিয়মিত টিকটকেও অস্ত্র প্রদর্শন করে নানান ভীতিকর ভিডিও বানাতো। দিনে তারা অন্যান্য পেশার পাশাপাশি টিকটক ভিডিও বানালেও রাতে নেমে পড়তো ছিনতাই করার কাজে।

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কিশোর গ্যাংটির কর্মকাণ্ড নিয়ে এমন তথ্য জানান আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার বেশকিছু এলাকাকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্তৃক ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান ও বসিলা ও রায়েরবাজার এলাকা অন্যতম। এসব এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পায় র‍্যাব। গতকাল সোমবার রাত ৯টায় ঢাকা উদ্যানের সামনে থেকে র‌্যাব-২ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে ছিনতাইয়ের খপ্পরে পড়ার তথ্য জানিয়ে সহযোগিতা চান এক দম্পতি। র‌্যাব-২-এর গোয়েন্দা ও টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর রায়ের বাজার এলাকা থেকে ছিনতাইয়ে জড়িত চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ছিনতাই করা ভ্যানিটি ব্যাগ।

খন্দকার আল মঈন বলেন, রাতেই র‍্যাব-এর টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করে চাঁদ উদ্যান সংলগ্ন সাত মসজিদ হাউজিং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কিশোর গ্যাং চক্রটির লিডার মোহনসহ আরও পাঁচ সদস্যকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ধারাল অস্ত্র, পিস্তল সদৃশ্য ও মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, তারা ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামক একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের সদস্য। চক্রের সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। দলের লিডার মোহন-এর নেতৃত্বে দুই-তিন বছর আগে গ্যাংটি গঠন করা হয়। এরা মোহন সিন্ডিকেট নামেও পরিচিত। এই গ্রুপের সদস্যরা আগে লেবেল হাই গ্যাং-এর অন্তর্ভুক্ত ছিলো। অন্তকোন্দলে যা পাঁচ-ছয়টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রুপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকে সক্রিয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের গ্যাং সংক্রান্ত বিভিন্ন ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রচারণা পাওয়া যায়, যেমন- ‘মোহাম্মদপুরের পোলাপান যা করি তা টোকেন ছাড়াই ওপেন’, ‘মোহাম্মদপুরের পোলা বাজান, আমি একাই একশো, গেঞ্জাম করার আগে ভাইব্বা লইও’ ইত্যাদি।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, দুই-তিন বছর ধরে কিশোর গ্যাং চক্রটি মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চুরি-ডাকাতি ও আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। তারা ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে হুমকি ও মারপিটে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রমের সংগে জড়িত।

তিনি বলেন, ‘ভাইব্বা ল কিং’ মানে তাদের সদস্যদের যেই অবস্থায় থাকুক না কেন তারা মোহাম্মদপুরের কিং। অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা নিজেদের কিং হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। গ্রেফতাররা লেগুনা, অটো চালক, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণকর্মী ও অফিসের বার্তাবাহক পেশার পাশাপাশি মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সংগে জড়িত। তারা বিভিন্ন সময় ছিনতাইয়ের উদ্দেশে ব্যাংকের আশপাশে অবস্থান নিয়ে গ্রাহকদের টার্গেট করতো।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভাইব্বা ল কিং’ চক্রটিকে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পেছন থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকদের শনাক্ত করা হয়েছে। চক্রে জড়িত পলাতকসহ পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

বিভি/এসএইচ/এএন

মন্তব্য করুন: