• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পরকীয়ায় আসক্ত দ্বিতীয় স্ত্রী, ভয় দেখাতে গিয়ে খুন

প্রকাশিত: ২১:১৯, ২৯ নভেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
পরকীয়ায় আসক্ত দ্বিতীয় স্ত্রী, ভয় দেখাতে গিয়ে খুন

সুজন মিয়া (৩৩)। ২০০৮ সালে বিয়ের পর কয়েক বছর রাজধানীতে নির্মান শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। এসময়ে ওই দম্পতির কোলজুড়ে আসে এক কন্যা সন্তান। এরপর টানা দশ বছর দুবাই ও কম্বোডিয়াতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও সুবিধা করতে পারেননি সুজন। তাই দেশে ফিরে আসেন তিনি। 

দেশে ফিরে আসলেও কাজ কমে যাওয়ায় আর্থিক অনটনে পড়ে যান তিনি। তাই পাঁচ বছরের মেয়েসহ স্ত্রীকে শেরপুরে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেন সুজন মিয়া। এরপর ঢাকায় এক রুমের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেন তিনি। কিন্তু আগে স্ত্রীসহ ঢাকায় থাকাকালে পাশের বাসায় এক তরুণীর সংগে সখ্যতা গড়ে উঠেছিলো সুজন মিয়া’র। একা থাকার সময় ওই তরুণীর সংগে সখ্যতা রূপ নেয় বিয়েতে। 

প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়েই ২০১৮ সালে তরুণী জোনাকি আক্তার জুনি (২১) কে বিয়ে করেন সুজন। বিয়ের কয়েক মাস পর জোনাকি আক্তারকে গাজীপুরের গাছা এলাকায় বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন সুজন। কাজের জন্য এসময় নারায়ণগঞ্জে থাকতে শুরু করেন তিনি। এসময় তার দ্বিতীয় স্ত্রী জোনাকি জড়িয়ে যায় পরকীয়ায়। বিষয়টি টের পান সুজন। ফন্ধি আঁটেন কিভাবে জোনাকিকে পরকীয়া থেকে ফেরানো যায়। বাজার থেকে একটা ধারালো ছুরি কিনে সেটি দিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ভয় দেখাবে বলে ঠিক করেন তিনি। ধারণা ছিলো, ভয় দেখালে হয়তো স্ত্রী পরকীয়া থেকে ফিরে আসবে। কিন্তু স্ত্রীকে ভয় দেখাতে গিয়ে এক পর্যায়ে রাগারাগি এবং ধস্তাধস্তি শুরু হয় তাদের মধ্যে। একসময় খুন হয়ে যায় স্ত্রী জোনাকি। 

গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাজীপুরের গাছা এলাকায় ঘটে এমন ঘটনা। এ ঘটনার পর র‌্যাব-১ এর হাতে গ্রেফতার হন সুজন মিয়া। পরে আজ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।

এ বিষয়ে র‌্যাব-১  এর সহকারি পরিচালক (অপস্ অফিসার) নোমান আহমদ বাংলাভিশন  ডিজিটালকে বলেন, জোনাকি আক্তার খুনের ঘটনায় নিহতের বোন রোজিনা বেগম (৩৩) বাদী হয়ে গাজীপুর গাছা থানায় নিহতের স্বামী মো. সুজন মিয়া (৩৩)কে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সংগে প্রচারিত হলে র‌্যাব-১ তাৎক্ষনিকভাবে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কেন্দুয়া কাঞ্চন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সুজন মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।  

গ্রেফতারকৃত সুজন জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি প্রায় তিন বছর আগে জোনাকি আক্তার জুনিকে বিয়ে করেন। এক বছর যাবৎ জোনাকী আক্তার তার বাবার বাড়ি কুনিয়া তারগাছ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। সুজন মিয়া রুপগঞ্জের কাঞ্চন এলাকায় বসবাস করেন এবং মাঝে মাঝে জোনাকিদের বাসায় আসা-যাওয়া করতেন।  এক মাস ধরে জোনাকি আক্তার পরকীয়া প্রেমে জড়িত বলে সুজন মিয়া সন্দেহ করেন এবং এর জের ধরে তারা প্রায়ই ঝগড়া করতেন। 

তিনি আরও বলেন, গত ২৬ নভেম্বর বিকাল আনুমানিক ৪টার দিকে সুজন মিয়া দ্বিতীয় স্ত্রী জোনাকিদের বাসায় আসে। কিন্তু বাসায় এসে স্ত্রীকে বাসায় না পেয়ে তার মোবাইলে ফোন দিলে সে বাইরে আছে বলে জানায়। পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে জোনাকি বাসায় আসলে সুজন জোনাকি আক্তারকে ছাদে নিয়ে পরকীয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাদের মধ্যে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সুজন মিয়া তার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করলে জোনাকি আক্তার সেখানেই মারা যান।

এই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নাদির-উজ-জামান বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, সুজন মিয়াকে গ্রেফতারের পর থানায় হস্তান্তর করেছে র‌্যাব। এই ঘটনায় সুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। 

এসআই নাদির বলেন, সুজন সেচ্ছায় জবানবন্দি দেওয়ায় তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

বিভি/এসএইচ/এসডি

মন্তব্য করুন: