• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সর্বশেষ কোথায় ছিলেন পলাতক মেজর জিয়া?

প্রকাশিত: ১৭:২৪, ২২ ডিসেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৭:২৫, ২২ ডিসেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
সর্বশেষ কোথায় ছিলেন পলাতক মেজর জিয়া?

অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ মো. জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া

বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ মো. জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া এখন কোথায়? দেশে নাকি বিদেশে? গত কয়েকদিন ধরে এসব প্রশ্ন ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। তাঁর অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত নয় জানিয়ে র‍্যাব বলছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মেজর জিয়া সম্ভবত দেশে নেই। দেশে থাকলে ইতিমধ্যে গ্রেফতার হতেন। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, আমাদের কাছে যতোটুকু তথ্য আছে, তারা (জিয়া ও আকরাম) দেশে নেই। তারা অন্য দেশে গা-ঢাকা দিয়েছেন। যতো দ্রুত সম্ভব তাদের ধরে এনে রায় কার্যকর করা হবে। এজন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, জিয়াউল হক জিয়াসহ অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা এখনও বাংলাদেশেই রয়েছে। এই দু’জনের সন্ধান চেয়ে গত রবিবার ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণার সময় এই ধারণা ব্যক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের অধীনস্ত রিওয়ার্ড ফর জাস্টিস (আরএফজে)।

২০১৯ সাল পর্যন্ত মেজর জিয়াকে গ্রেফতারে তোড়জোড় থাকলেও তারপর থেকে খানিকটা ঝিমিয়ে পড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। 

তথ্য বলছে, তাঁকে গ্রেফতার করতে গত সাত বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা। এর মধ্যে অন্তত পাঁচবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁর সন্ধানও পেয়েছিলেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে কোনোভাবেই তাঁকে ধরা যায়নি। সর্বশেষ কয়েক মাস আগে তিনি সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করেছিলেন- গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে এমন তথ্য প্রকাশ করছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।

গোয়েন্দারা বলছেন, ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত মেজর জিয়া কোন কোন এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেন তার একটি চিত্র তাদের হাতে ছিলো। সেই হিসেবে- ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ এলাকায় তাঁর অবস্থান ছিলো। এই তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দারা অন্তত পাঁচবার তাঁর খুব কাছ পর্যন্ত পৌঁছালেও ধরতে পারেনি।

গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে, জিয়া সর্বশেষ কয়েক মাস আগে সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করেছিলেন। সেখান থেকে তিনি দেশের বাইরে চলে যান। তবে কোন দেশে এখন তাঁর অবস্থান, সেই তথ্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর কোনো সূত্রই নিশ্চিত করতে পারেনি।  

২০১৯ সালের শেষের দিকে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় এক বন্ধুর বাসায়ও জিয়া কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। একই বছরে ময়মনসিংহের একটি বাসায়ও কয়েক মাস ছিলেন তিনি। সেখান থেকে টঙ্গীতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানেও যান।

জিয়া’র বর্তমান অবস্থান কোথায় হতে পারে জানতে চাইলে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল বলেন, ‘জঙ্গি জিয়াকেও আমরা খুঁজছি। তবে এই মুহূর্তে কোথায় আছে, তা আমাদের জানা নেই। ধারণা করছি- তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। দেশে থাকলে যেকোনো ভাবে ধরা পড়তো।    

সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামানও বললেন একই কথা। তিনি বলেন, শীর্ষ জঙ্গি নেতা জিয়াকে ধরার সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি কোথায় আছে তা জানতে পারলে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটিটিসি’র একজন কর্মকর্তা বলেন, মেজর জিয়া সামরিক বাহিনীতে কর্মরত থাকায় আসামি ধরার সব কৌশল তিনি জানেন। যে কারণে তিনি তাঁর মতাদর্শীদের সংগে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কৌশল অবলম্বন করেন। এই কারণে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন তিনি। তবে দেশে থাকলে এতোদিনে ধরা পড়তেন বলেও ধারণা এই কর্মকর্তার। 

তদন্তকারী সূত্র জানায়, চাকুরিচ্যুত জিয়া সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কর্মরত ছিলেন। ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে ধর্মান্ধ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার সরকার উত্খাতে একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা নস্যাৎ করার খবর দেয়। সেই দলে থাকা জিয়া ঘটনার পরেই পালিয়ে যান। এরপর তাঁকে ধরিয়ে দিতে ছবিসহ সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে একের পর এক ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক-প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হত্যার প্রেক্ষাপটে আবারও তাঁর নাম আলোচনায় আসে। এক সময় আনসার উল্যাহ বাংলা টিম বা এবিটি’র তাত্ত্বিক নেতা মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানির ঘনিষ্ঠ ছিলেন জিয়া। ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হায়দার খুনের পর এবিটি-তে জিয়ার কার্যক্রম প্রকাশ পায়। জসিমউদ্দিন রাহমানি গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেলে রয়েছেন। 

২০১৬ সালে পুলিশ সদর দফতর ঘোষণা দেয়- জিয়া আল-কায়েদাপন্থী জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান। তাঁকে ধরিয়ে দিলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। তবে সেই ঘোষণার পাঁচ বছরেও কোনো ফল মেলেনি। এরই মধ্যে মার্কিন ঘোষণা এলো মেজর জিয়া’র সন্ধান চেয়ে।

বিভি/এসএইচ/এসডি

মন্তব্য করুন: